'বরিশালকে বাঁচাতে কীর্তনখোলা রক্ষা করতে হবে'
দক্ষিণাঞ্চলের নৌ–যোগাযোগ ও পরিবেশ-প্রকৃতির প্রাণ বরিশালের ঐতিহ্যবাহী কীর্তনখোলা নদীদখল রোধ, নদীর অবাধপ্রবাহ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন বরিশালের পরিবেশ ও নাগরিক আন্দোলনের কর্মীরা।
আজ মঙ্গলবার সকালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) আয়োজনে ‘কীর্তনখোলা নদী সংরক্ষণে করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এই দাবি জানান। বরিশাল জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে এই সভার আয়োজন করা হয়।
সভায় বক্তারা বলেন, বরিশালের ঐতিহ্যবাহী নদী কীর্তনখোলা। একসময় এই নদীর রূপ–সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে বরিশালকে ‘বাংলার ভেনিস’ বলেছিলেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম। সময়ের বিবর্তনে কীর্তনখোলার সেই সৌন্দর্য ধুয়েমুছে গেছে। স্রোতস্বিনী উন্মুক্ত এই নদীর তীর এমনকি নদীর বিশাল অংশ দখল করে গড়ে উঠেছে বহু অবৈধ স্থাপনা। শিল্প ও অন্যান্য বর্জ্য ফেলে ক্রমাগত দূষণ করা হচ্ছে নদীর পানি। তাঁরা বলেন, ‘আমাদের বেঁচে থাকার জন্য, বরিশালকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য কীর্তনখোলা নদীকে রক্ষা করতে হবে।’
বক্তারা বলেন, পরিকল্পিত খননের অভাবে এখন নৌ–যোগাযোগ মারাত্মক সংকটে পড়েছে। প্রায়ই ঢাকা-বরিশাল পথে চলাচলকারী লঞ্চগুলো চরায় আটকে থাকছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। নদীর সংযোগ খালগুলোর উৎসমুখে পলি জমে সেসব খাল মরে যাচ্ছে। এতে পানিসংকটে কৃষিকাজ ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশ-প্রতিবেশে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে।
আইনজীবী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এস এম ইকবাল সভায় সভাপতিত্ব করেন।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী ও বেসরকারি সংস্থা রানের নির্বাহী পরিচালক মো. রফিকুল আলম।
সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন বেলার বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়কারী লিংকন বায়েন।
সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের বরিশাল জেলা কার্যালয়ের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. রাকিব, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি সৈয়দ হাবিবুর রহমান, রনজিৎ দত্ত, কহিনুর বেগম, মো. নসির উদ্দিন, সাংবাদিক পুলক চ্যাটার্জি, মো. মনিরুজ্জামান, সাঈদ পান্থ প্রমুখ।
সভায় বক্তারা বলেন, বরিশালের রূপ–সৌন্দর্যের প্রধান নিয়ামক হচ্ছে এই অঞ্চলের নদী ও খাল। এই নদীই ঢাকা ও চট্টগ্রামের সঙ্গে বরিশালের এবং বরিশাল জেলা শহরের সঙ্গে খুলনাসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের স্টিমার-লঞ্চ যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান বলেন, ‘কীর্তনখোলা নদী বরিশাল তথা গোটা দক্ষিণাঞ্চলের প্রাণ। এই নদী রক্ষায় আমরা বসে নেই। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
অজিয়ার রহমান বলেন, ‘বরিশালের নদী-খালের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ অচিরেই শুরু হবে। কথা নয় কাজ দিয়ে আমরা এর প্রমাণ রাখতে চাই।’
জেলা প্রশাসক বলেন, কীর্তনখোলা নদীকে দখল-দূষণমুক্ত করে শুধু পর্যটন স্পট গড়ে তোলা হবে। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কীর্তনখোলার সীমানা চিহ্নিত করে দখল উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
সভার বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) উপপরিচালক আজমল হুদা বলেন, ‘কীর্তনখোলার দখল-দূষণ ও ভাঙন রোধে এবং নদীর নাব্যতা রক্ষায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে সিএস ম্যাপ অনুযায়ী নদীর সীমানা চিহ্নিতকরণসহ তালিকাভুক্ত দখলদারসহ সব অবৈধ স্থাপনা অচিরেই উচ্ছেদ করা হবে।’ এই উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনার সময় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকারও আহ্বান জানান তিনি।
সভায় আইনজীবী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এস এম ইকবাল বলেন, ‘কীর্তনখোলাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে বরিশালের ব্যবসা-বাণিজ্য, নগর সভ্যতা, নৌ-যোগাযোগ ও কৃষি কার্যক্রম। অথচ এই নদী এখন বেহাল। সুতরাং এই নদী রক্ষায় এখনই আমাদের সোচ্চার হতে হবে ও আন্তরিকভাবে সবাইকে কাজ করতে হতে হবে।’