সরাইলে বিকেলে শান্তির শপথ নিয়ে রাতে ভাঙচুর-লুটপাট

ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল থানা-পুলিশের ডাকে সাড়া দিয়ে উপজেলার দাঙ্গাপ্রবণ রাজাপুর গ্রামের কয়েক শ মানুষ গতকাল সোমবার বিকেলে পুলিশ, জনপ্রতিনিধি ও সুধী সমাজকে সামনে রেখে শান্তির পক্ষে শপথ নিয়েছিলেন। এরপর রাতেই গ্রামের অর্ধশতাধিক মানুষ প্রতিপক্ষের বসতবাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

১৩ অক্টোবর রাজাপুর নতুন চকবাজারে গ্রামের দুই ব্যক্তির মধ্যে বাদানুবাদের ঘটনায় পরের দিন দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হন। সংঘর্ষে আহত আবদুল্লাহ মিয়া (৬৫) নামের এক বৃদ্ধ ২৫ অক্টোবর মারা যান। এরপর থেকে গ্রামে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা চলতে থাকে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বিকেলে রাজাপুর পুরাতন চকবাজার চত্বরে অরুয়াইল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাকিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় দেশীয় অস্ত্র সমর্পণ অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত গ্রামের কয়েক শ ব্যক্তি সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাদত হোসেনের ডাকে সাড়া দিয়ে দাঙ্গামুক্ত সরাইল গড়তে হাত তুলে শান্তির পক্ষে শপথ নেন। কিন্তু রাতেই তা ভঙ্গ করেন।

গ্রামের কয়েকজন বলেন, গতকাল সোমবার রাতে প্রতিপক্ষ খেলু মিয়াসহ তাঁর পক্ষের ১০ থেকে ১৫টি বসতঘরে তাণ্ডব চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে আবদুল্লাহ মিয়ার পক্ষের লোকজন। দাঙ্গাবিরোধী সভায় যারা শপথের অগ্রভাগে ছিলেন, তাঁরাই এ হামলার নেপথ্যে মূল ভূমিকা রেখেছেন। রাত ৮টার পর থেকে রাত ২-৩টা পর্যন্ত চলে ভাঙচুর ও লুটপাট। ভয়ে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে ১৫-২০টি পরিবার। সেই সঙ্গে ওই পরিবারগুলোর প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজপড়ুয়া ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেছে।

খেলু মিয়ার প্রবাসী ছেলে রহিম মিয়ার স্ত্রী নাজমা বেগম (৩৫) মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে আমরা এলাকা ছাড়ছি। ঘটনার পর একবার ভাঙচুর অইছে। গত রাইতে আমারার যা ছিল সব নিয়া গেছে। আমরার মতো ২০ ফরিবার এলাকা ছাড়ছে। কেউ বাড়িতে নাই। আমার তিন ছেলেমেয়ের পড়াশোনা বন্ধ অইয়া গেছে। বই খাতাও নিয়া গেছে।’

আবদুল্লাহ মিয়া আহত হওয়ার পর তাঁর ভাতিজা রফিক মিয়া (৩৭) বাদী হয়ে ২৬ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১২০ জনকে আসামি করে সরাইল থানায় মামলা করেছেন। এই মামলা এখন হত্যা মামলায় রূপ নিয়েছে। মামলায় ১২০ জন অজ্ঞাতনামা থাকায় আতঙ্কে আছেন গোটা গ্রামবাসী।

একাধিক গ্রামবাসী জানান, আবদুল্লাহ মিয়া মারা যাওয়ার পর থেকে প্রতিপক্ষের লোকজন এলাকাছাড়া হয়েছেন। তাঁদের সবার বাড়িঘর এখন ফাঁকা। এ সুযোগে ভাঙচুর ও লুটপাট হচ্ছে।

সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাদত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাজাপুর গ্রাম শান্ত আছে। গত রাতে নিজেরাই কয়েকটি বাড়িতে ভাঙচুর করেছে আসামিপক্ষের লোকজন।’