জি কে শামীম ও খালেদকে রোববার রিমান্ডে আনছে দুদক

খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও জি কে শামীম। ফাইল ছবি
খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও জি কে শামীম। ফাইল ছবি

কথিত যুবলীগ নেতা ও ঠিকাদার গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম এবং মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে আগামী রোববার থেকে রিমান্ডে আনছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইতিমধ্যেই আদালতের অনুমতি পেয়েছে সংস্থাটি।

দুদক সূত্র প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ২১ অক্টোবর এ দুজনের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আলাদা মামলা করে দুদক। মামলার পরপরই অন্য মামলায় কারাগারে থাকা শামীম ও খালেদকে নিজেদের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করে দুদক। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তা মঞ্জুর করেন। পরে তাঁদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে যান দুদক কর্মকর্তারা। শুনানি শেষে আদালত তাঁদের সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া গ্রেপ্তার হন গত ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের প্রথম দিনেই। ইয়াংমেনস ফকিরাপুল ক্লাবের ক্যাসিনো চালাতেন তিনি। গ্রেপ্তারের পর মাদক, অস্ত্র ও মানি লন্ডারিং আইনে তিনটি মামলা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

সূত্র জানায়, যুবলীগের নেতা হওয়ার সুবাদে প্রভাব খাটিয়ে খিলগাঁও ও শাহজাহানপুরে লেগুনাস্ট্যান্ডে এককভাবে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। আরামবাগ এলাকার দূরপাল্লার বাস কাউন্টার ও সংলগ্ন এলাকার ফুটপাত থেকে চাঁদা তোলা, মতিঝিলে ফুটপাতে চাঁদাবাজি ও পাড়া-মহল্লায় ডিশ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণেও আধিপত্য বিস্তার করেছেন খালেদের লোকজন। সেখান থেকে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ টাকা ওঠানো হতো।

২১ অক্টোবর খালেদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। এখন পর্যন্ত তাঁর সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য পেয়েছে সংস্থাটি।

কথিত যুবলীগ নেতা জি কে শামীম নিজের পরিচয় দিতেন যুবলীগের সমবায়বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে। আবার নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হিসেবেও পরিচয় দিতেন। চলতেন ছয়জন সশস্ত্র দেহরক্ষী নিয়ে। গণপূর্ত অধিদপ্তরের বড় কাজের প্রায় সবই ছিল তাঁর প্রতিষ্ঠানের কবজায়। গত ২০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর নিকেতনের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই দিন তাঁর কার্যালয় থেকে নগদ ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা, ১৬৫ কোটি টাকার স্থায়ী আমানতের (এফডিআর) কাগজপত্র, নয় হাজার মার্কিন ডলার, ৭৫২ সিঙ্গাপুরি ডলার, একটি আগ্নেয়াস্ত্র এবং মদের বোতল জব্দ করা হয়।

গ্রেপ্তারের পর শামীমের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইন এবং মাদক আইনে মামলা করা হয়। এসব মামলা তদন্ত করছে পুলিশ ও র‍্যাব।

২৯৭ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২১ অক্টোবর তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। তাঁর সম্পদের খোঁজে রিমান্ডে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

সূত্র জানিয়েছে, শামীমের প্রতিষ্ঠান জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড বর্তমানে এককভাবে গণপূর্তের ১৩টি প্রকল্পের নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে। আবার যৌথভাবে আরও ৪২টি প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্ত, যা সারা দেশে চলমান অধিদপ্তরের মোট প্রকল্পের ২৮ শতাংশ। সব কটি প্রকল্পের চুক্তিমূল্য ৪ হাজার ৬৪২ কোটি ২০ লাখ টাকা, যার মধ্যে ১ হাজার ৩০১ কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।