পাখিদের বাসা ছাড়তে সময় দেওয়া হলো ১৫ দিন

বাগানে কয়েক হাজার পাখির বাসা রয়েছে। ছবি: প্রথম আলো
বাগানে কয়েক হাজার পাখির বাসা রয়েছে। ছবি: প্রথম আলো

পাখিদের বাসা ছাড়ার সময় দেওয়া হয়েছে ১৫ দিন। এর মধ্যে পাখিরা বাসা না ছাড়লে তাদের বাসা থেকে নামিয়ে দেওয়া হবে। এমনকি তাদের বাসা ভেঙেও দেওয়া হবে। এ ঘোষণা শুনে কেউ হয়তো রসিকতা মনে করতে পারে কিন্তু এটাই বাস্তব। ঘটনাটি ঘটেছে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার খোর্দ্দ বাউসা গ্রামে। কয়েক হাজার শামুকখোল পাখি এই হুমকির মুখে পড়েছে।

রাজশাহীর একজন আম ব্যবসায়ী আতাউর রহমান। তাঁর ইজারা নেওয়া আম বাগানের গাছে গাছে শামুকখোল পাখিরা বাসা বেঁধে বাচ্চা ফুটিয়েছে। বাচ্চারা এখনো উড়তে শেখেনি। কিন্তু বাগানমালিক এখন বাগানের পরিচর্যা করতে চান। পাখিপ্রেমীদের প্রতিরোধের মুখে তিনি আজ মঙ্গলবার থেকে পাখিদের জন্য ১৫ দিন সময় বাড়িয়েছেন।

গত চার বছর ধরে শামুকখোল পাখিরা এই বাগানে বাসা বাঁধে আবার চলে যায়। ছবি: প্রথম আলো
গত চার বছর ধরে শামুকখোল পাখিরা এই বাগানে বাসা বাঁধে আবার চলে যায়। ছবি: প্রথম আলো

আতাউর রহমানের বাড়ি রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর গ্রামে। তিনি বলেন, ৭ লাখ টাকা দিয়ে তিনি এই বাগান দুই বছরের জন্য ইজারা নিয়েছেন। গত বছর পাখি থাকার কারণে তার আম নষ্ট হয়েছে। এবার আর তিনি তা হতে দেবেন না। এখনই তিনি আমগাছ পরিচর্যা করতে চান। এ জন্য পাখির বাসা ভেঙে গাছে ওষুধ ছিটাতে চান।

স্থানীয় পাখিপ্রেমী রফিকুল ইসলাম বলেন, বাগানে কয়েক হাজার পাখির বাসা রয়েছে। সব বাসাতেই বাচ্চা রয়েছে। বাচ্চাগুলো উড়তে শিখতে অন্তত আরও এক মাস সময় লাগবে। এর আগে বন অধিদপ্তর থেকে এই আমগাছের ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার জন্য একটি প্রকল্প করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এ ব্যাপারে বন অধিদপ্তরের আর কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। এখন পাখিগুলোর বাসা ভেঙে দিলে হাজার হাজার পাখির বাচ্চা মারা পড়বে। এরই মধ্যে বাসা ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় স্থানীয় লোকজন ১০০ পাখির বাচ্চা ধরে নিয়ে গেছে। আজ তিনিসহ কয়েকজন গিয়ে আতাউর রহমানের কাছে আপত্তি জানান। পরে তিনি ১৫ দিন সময় দেন।

বর্ষার শেষে এসে বাচ্চা ফুটিয়ে শীতের শুরুতে শামুকখোল পাখিরা আবার চলে যায় । ছবি: প্রথম আলো
বর্ষার শেষে এসে বাচ্চা ফুটিয়ে শীতের শুরুতে শামুকখোল পাখিরা আবার চলে যায় । ছবি: প্রথম আলো

খোর্দ্দ বাউসা গ্রামের ২৫টি আমগাছে শামুকখোল পাখিরা বাসা বেঁধেছে। গত চার বছর ধরে এরা এই বাগানে বাচ্চা ফোটায়। বর্ষার শেষে এসে বাচ্চা ফুটিয়ে শীতের শুরুতে এরা আবার চলে যায়।

বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের পক্ষ থেকে এই বাগানের পাশেই সাইনবোর্ড দেওয়া হয়েছে। সেখানে লেখা রয়েছে আইন অনুযায়ী যে কোনো বন্যপ্রাণী আটক, হত্যা, শিকার, পরিবহন ও ক্রয়-বিক্রয় দণ্ডনীয় অপরাধ, যার সর্বোচ্চ শাস্তি ১২ বছরের কারাদণ্ড এবং ১৫ লাখ টাকা জরিমানা। এর নিচে বন্যপ্রাণী বিষয়ক যেকোনো তথ্যের জন্য যোগাযোগের একটি নম্বর দেওয়া আছে।

রফিকুল ইসলাম বলেন, গত ছয় মাস থেকে তিনি তাদের সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পাচ্ছেন না। স্থানীয় মানবাধিকার কর্মী সুলতান আলীও পাখির সুরক্ষার জন্য কাজ করেন। তিনিও বললেন, এই নম্বরে ফোন দিলে তারা আর ধরছেন না। এর আগে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে বন অধিদপ্তরের নম্বরটিতে ফোন দিয়েও সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে।