ট্রলিব্যাগে পাওয়া খণ্ডিত লাশের পরিচয় মিলেছে

বোমা সন্দেহে রাতভর ব্যাগটি ঘিরে রাখা হয়। ফাইল ছবি
বোমা সন্দেহে রাতভর ব্যাগটি ঘিরে রাখা হয়। ফাইল ছবি

ময়মনসিংহে ট্রলিব্যাগে পাওয়া সেই খণ্ডিত লাশের পরিচয় মিলেছে। তাঁর নাম মো. বকুল (২৮)। তিনি নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার হুগলা গ্রামের ময়েজ উদ্দীনের ছেলে ছিলেন। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে একই পরিবারের চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁরা জানিয়েছেন, উত্ত্যক্তের প্রতিশোধ নিতে প্রেমের ফাঁদে ফেলে তাঁকে হত্যা করা হয়।

গত ২০ অক্টোবর ময়মনসিংহ শহরের পাটগুদাম ব্রিজ এলাকায় একটি লাল রঙের ট্রলি ব্যাগ মালিকবিহীন অবস্থায় পড়ে ছিল। দীর্ঘ সময় ওই ব্যাগের মালিক না পাওয়ায় ব্যাগটিতে বিস্ফোরক দ্রব্য থাকতে পারে সন্দেহে রাতভর ব্যাগটি চারদিকে বালুর বস্তা দিয়ে ঘিরে পাহারা দেয় পুলিশ। পরের দিন সকালে ঢাকা হতে বোমা নিষ্ক্রিয়কারী ইউনিট এসে ব্যাগটি খুলে হাত, পা ও মাথাবিহীন একটি খণ্ডিত লাশ (গলা থেকে কোমর পর্যন্ত) পায়।

প্রাথমিক অবস্থায় লাশ শনাক্তকরণে এবং হত্যাকাণ্ডের রহস্যের কূল কিনারা খুঁজে পাচ্ছিল না দুই জেলার পুলিশ সদস্যরা। এরপর ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ এ ঘটনার তদন্তে নামে।

গ্রেপ্তার চারজন হলেন ফারুক মিয়া (২৫), হৃদয় মিয়া (২০), সাবিনা আক্তার (১৮) ও মৌসুমি আক্তার (২২)। ফারুক, হৃদয় এবং সাবিনা তারা ভাইবোন এবং মৌসুমি ফারুকের স্ত্রী।

আজ বুধবার সকালে ময়মনসিংহ পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে প্রেস বিজ্ঞপ্তি পড়ে শোনান পুলিশ সুপার শাহ্ আবিদ হোসেন। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এসএ নেওয়াজী, হুমায়ুন কবির ও মো. আল-আমীন এবং কোতোয়ালি থানার ওসি মাহমুদুল ইসলাম ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ্ কামাল আকন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সাংবাদিক সম্মেলন শেষে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ কামাল আকন্দ প্রথম আলোকে বলেন, নিহত বকুল ভবঘুরে ও মাদকাসক্ত ছিল। তার নামে বিভিন্ন থানায় তিনটি মামলাও রয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবেশী সাবিনাকে প্রেম নিবেদন করে আসছিলেন। কিন্তু সাবিনার অন্যত্র বিয়ে হয়ে যায়। এরপরও বকুল বিভিন্ন উপায়ে সাবিনাকে উত্ত্যক্ত করে আসছিলেন। এ নিয়ে সাবিনার পরিবারে অশান্তি শুরু হয়। পরে সাবিনা মিথ্যা প্রেমের অভিনয় করে বকুলকে গাজিপুর ডেকে নিয়ে যায় এবং সেখানেই সাবিনা ও তার ভাই-ভাবি মিলে তাকে হত্যা করে। এবং হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দেওয়ার লক্ষ্যে লাশটি কয়েক টুকরো করে ময়মনসিংহ ও কুড়িগ্রামে ফেলে রাখে।

যেভাবে রহস্য উদ্‌ঘাটন হলো

গত ২০ অক্টোবর ময়মনসিংহ শহরের পাটগুদাম ব্রিজ এলাকায় একটি লাল রঙের ট্রলি ব্যাগ মালিকবিহীন অবস্থায় পড়েছিল। দীর্ঘ সময় ওই ব্যাগের মালিক না পাওয়ায় ব্যাগটিতে বিস্ফোরক দ্রব্য থাকতে পারে সন্দেহে রাতভর ব্যাগটি চারদিকে বালুর বস্তা দিয়ে ঘিরে পাহারা দেয় পুলিশ। পরের দিন সকালে ঢাকা হতে বোমা নিষ্ক্রিয়কারী ইউনিট এসে ব্যাগটি খুলে হাত, পা ও মাথাবিহীন একটি খণ্ডিত লাশ(গলা হতে কোমর পর্যন্ত) পা।

সেদিনই কুড়িগ্রাম পুলিশও সদর থানার অন্তর্গত বেলগাছা এলাকায় একটি কাটা পা উদ্ধার করে। ঠিক তার পরের দিন কুড়িগ্রামের রাজাপুর থানায়একটি ব্যাগে কাটা পা ও দুটি হাত এবং অপর আরেকটি ভ্যানিটি ব্যাগে খণ্ডিত মাথা উদ্ধার করে কুড়িগ্রাম পুলিশ। সবগুলো খণ্ডিত অংশের ডিএনএ টেস্ট করে পুলিশ মরদেহের সবগুলো খণ্ডিত অংশ এক ব্যক্তিরই বলে নিশ্চিত হয়। পুলিশ বাদী হয়ে ২৫ অক্টোবর ময়মনসিংহ কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করেন। এরপরই ময়মনসিংহ গোয়েন্দা পুলিশ অভিযানে নামে।

ভ্যানিটি ব্যাগে থাকা একটি চিরকুটের সূত্র ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায় পুলিশ। গত সোমবারে গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে চারজনকে গ্রেপ্তার ময়মনসিংহ গোয়েন্দা পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চারজনই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। আসামিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে জয়দেবপুর থানার বানিয়ারচালা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় এই হত্যাকাণ্ড ঘটায়। এ ঘটনায় একটি ছুড়ি, নিহতের একটি মোবাইল ফোন, লাশের হাত পা বহনকারী একটি কাপড়ের ব্যাগ এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি ইটের টুকরা আলামত হিসেবে উদ্ধার করে পুলিশ।

তবে হত্যাকাণ্ডের পেছনে আরও কোনো কারণ আছে কিনা বা আরও কেউ জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং তদন্তের স্বার্থে এর বেশি কিছু এখনই বলা যাবে না বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার শাহ্ আবিদ হোসেন। আদালতে ১৬৪ধারায় জবানবন্দি দেওয়ায় আসামিদের ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।