সাংসদের নামে অভিযোগ করায় ওসির হুমকি?

সুনামগঞ্জ-১ আসনের (তাহিরপুর, জামালগঞ্জ ও ধরমপাশা) সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে রতনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ করেছিলেন তাহিরপুর উপজেলার মিজানুর রহমান নামের এক ব্যক্তি। এরপর মিজানুরকে তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুর রহমান হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

হুমকির বিষয়ে গতকাল বুধবার ঢাকায় দুদক কার্যালয়ে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। মিজানুর রহমান এর আগে সাংসদের বিরুদ্ধে ৩ ও ১৩ অক্টোবর দুই দফায় দুদকে লিখিত অভিযোগ দেন। তবে ওসি আতিকুর রহমান দাবি করেছেন, তিনি মিজানুরকে চেনেন না। হুমকিও দেননি।
ক্যাসিনো-কাণ্ডে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের বিরুদ্ধে চলমান অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে সুনামগঞ্জ-১ আসনের সরকারদলীয় সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। ১ অক্টোবর সুনামগঞ্জ পৌর শহরে জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভা ছিল। এখানে তাঁর নির্বাচনী এলাকার ধরমপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ বক্তব্য দিতে গিয়ে প্রকাশ্যে সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেনকে ‘চাঁদাবাজির গডফাদার’ বলে উল্লেখ করেন। এ সময় মঞ্চে সাংসদ মোয়াজ্জেমের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুব উল আলম হানিফ ও আহমদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, দুদকে যে কেউ যে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে পারে। তদন্তে প্রমাণিত হবে কে দোষী আর কে নির্দোষ। তিনি বলেছেন, তাঁর নির্বাচনী এলাকায় ভবিষ্যতে সাংসদ হতে চায় এমন একটি মহল এসব ষড়যন্ত্র করছে।

তাহিরপুর উপজেলার লাকমা নতুনপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মিজানুর রহমান গতকাল বুধবার দুদকে দেওয়া অভিযোগে উল্লেখ করেন, তিনি ১৩ অক্টোবর সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে দুদকে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগ দায়ের করার পর গত মঙ্গলবার বেলা তিনটার দিকে তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতিকুর রহমান তাঁকে ফোন করে হুমকি দেন। ওসি তাঁকে ও তাঁর পরিবারের লোকজনকে মামলায় জড়িয়ে ‘ক্রসফায়ারে’ দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। অভিযোগে তিনি আরও উল্লেখ করেন, তাহিরপুর উপজেলা সদর থেকে ফাজিলপুর পর্যন্ত নদী খননের কাজ চলছে। নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে যে মাটি তোলা হচ্ছে, সেগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিংবা বাড়িঘরে দেওয়ার কথা। কিন্তু ওসি আতিকুর একটি সিন্ডিকেট করে এসব মাটি বিক্রি করছেন। মিজানুর রহমান এসবের প্রতিবাদ করায় তিনি তাঁকে হুমকি দেন এবং সাংসদের নির্দেশে তিনি এসব করছেন বলে জানান।

মিজানুর রহমান জানান, ৩ অক্টোবর দুদকে অভিযোগ দেওয়ার পর ৫ তারিখে তাহিরপুর থানার ওসি তাঁর বাড়িতে পুলিশ পাঠান। এরপর থেকে নানাভাবে তাঁকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ওসি মুঠোফোনে তাঁকে হুমকি দিয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ২০০৮ সালের আগে সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেনের তেমন কোনো সম্পদ ছিল না। নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন নদী, জলমহাল, বালু ও পাথরমহালে চাঁদাবাজি করছেন সাংসদ। এখন হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। ধরমপাশা, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, সিলেট ও ঢাকায় বাড়ি রয়েছে। এসব সম্পদ তিনি দুর্নীতির মাধ্যমে করেছেন।

তাহিরপুর থানার ওসি আতিকুর রহমান তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি মিজানুর রহমান নামের কাউকে চিনি না। এই নামে কারও সঙ্গে ফোনেও কথা বলিনি। এসব সত্য নয়।’
সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমার কাছে কেউ এ বিষয়ে কিছু বলেনি। জানিও না।’