জাহালমের কারাভোগ ও ক্ষতিপূরণ প্রশ্নে হাইকোর্টে দিনভর শুনানি

জাহালম।  ফাইল ছবি
জাহালম। ফাইল ছবি

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় পাটকলশ্রমিক জাহালমের তিন বছর কারাভোগ এবং তাঁর ক্ষতিপূরণ প্রশ্নে আজ বৃহস্পতিবার দিনভর হাইকোর্টে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। একই বিষয়ে ৭ নভেম্বর শুনানির নতুন দিন ধার্য করেছেন বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ।

শুনানির সময় আদালত বলেছেন, ‘এখন পর্যন্ত প্রমাণিত যে জাহালম নির্দোষ। ভুলভাবে তাঁকে কারাভোগ করতে হয়েছে। যা দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে। জাহালম এখন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন। আমরা বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখতে চাই না।’

শুনানির শুরুতে সোনালী ব্যাংকের আইনজীবী জাকির হোসেন আদালতের কাছে দাবি করেন, ‘সোনালী ব্যাংকের ক্যান্টনমেন্ট শাখায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির ঘটনাটি জানার পর সোনালী ব্যাংক বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় মামলা করে। সেই মামলার কোথাও জাহালমের নাম নেই। আমরা আসামি করেছিলাম আবু সালেককে। কিন্তু দুদক তদন্ত করে নির্দোষ জাহালমকে আবু সালেক হিসেবে শনাক্ত করেছে। দুদকের ভুলের কারণে জাহালমকে তিন বছর কারাভোগ করতে হয়েছে। জাহালমের কারাভোগে ন্যূনতম দায় নেই সোনালী ব্যাংকের।’

দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান আদালতের কাছে দাবি করেন, সোনালী ব্যাংকের কাগজপত্রের ওপর ভিত্তি করে দুদক তদন্ত করেছে। জাহালমের ঘটনাটি জানার পর তাঁকে মুক্ত করার জন্য পদক্ষেপ নেয় দুদক। মামলাগুলো অধিকতর তদন্তের সিদ্ধান্ত হয়। জাহালমের কারাভোগের ঘটনায় দুদকের ১১ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

শুনানির সময় দুদকের আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘মামলা করতে আপনারা সময় নিলেন দুই বছর। একটা তদন্ত শেষ করতে কত সময় লাগে? আপনারা ঠিকমতো তদন্ত করেননি। দুদকের কর্মকর্তাদের ভুল তদন্তের কারণে জেল খাটতে হয়েছে জাহালমকে।’

দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম দাবি করেন, একজন তদন্ত কর্মকর্তার কাছে অনেক মামলা। দুদকের মামলায় সাজার হার ৬৯ ভাগ। প্রতিদিন দুদকের হটলাইনে ২০ হাজারের ওপর কল আসে। তখন আদালত বলেন, ‘এত ফোনকল আসার অর্থ দেশে দুর্নীতি হচ্ছে। বড় বড় দুর্নীতি হচ্ছে।’

ব্র্যাক ব্যাংকের আইনজীবী আসাদুজ্জামান আদালতের কাছে দাবি করেন, জাহালমের কারাভোগে ব্র্যাক ব্যাংকের কোনো দায় নেই। জাহালমের কারাভোগ নিয়ে দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে এই আইনজীবী বলেন, দুদক কর্মকর্তাদের চাপে পড়ে ব্র্যাক ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জাহালমকে সালেক বলে শনাক্ত করেন। তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

আজ বড় ভাই শাহানূরকে নিয়ে আদালতে হাজির ছিলেন জাহালম। সোনালী ব্যাংকের সাড়ে ১৮ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় ২৬টি মামলায় জাহালমকে আবু সালেক হিসেবে চিহ্নিত করে তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক।

সেই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে জাহালম বিনা দোষে তিন বছর কারাভোগ করেন। জাহালমের কারাভোগ নিয়ে প্রথম আলোয় গত ২৮ জানুয়ারি ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না…’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি আমলে নিয়ে জাহালমকে দুদকের সব মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে গত ৩ ফেব্রুয়ারি মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত।