সেতুর অপেক্ষা দীর্ঘ হচ্ছে

শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর নির্মিত সেতু। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর নির্মিত সেতু। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর নির্মিত মুড়াপাড়া-কায়েতপাড়া সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয় প্রায় সাড়ে সাত বছর আগে। এখনো সেতুর নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় নদী পারাপারে ভোগান্তি পোহাচ্ছে রূপগঞ্জের মানুষ।

রূপগঞ্জ উপজেলাকে দুভাগে ভাগ করেছে শীতলক্ষ্যা নদী। উপজেলার প্রায় সব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি উপজেলা পরিষদ কার্যালয় ও সরকারি মুড়াপাড়া কলেজের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থান নদীর পূর্ব পারে। নদীর পশ্চিম পারে রয়েছে রূপগঞ্জ থানা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রতিষ্ঠান। ফলে প্রায় প্রতিদিনই নদী পার হতে হয় দুই পারের মানুষজনকে। নদী পারাপারের এই ভোগান্তি দূর করতেই ২০১২ সালে শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর সেতু নির্মাণে উদ্যোগ নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। ৫৭৬ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৯ দশমিক ৮ মিটার প্রস্থের সেতুটির নির্মাণব্যয় ধরা হয় ৭৪ কোটি টাকা। ২০১৪ সালের ২৪ জুনের মধ্যে সেতুর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে পাঁচ দফায় সময় বাড়লেও গত সাড়ে সাত বছরে চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হয়নি সেতুটি।

রূপগঞ্জ ভক্তবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আল আমিন পড়াশোনা করেন সরকারি মুড়াপাড়া কলেজে। নদী পার হয়ে কলেজে যাতায়াতকে ভোগান্তি মনে না করলেও নদীর দুই পারের মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে সেতু জরুরি বলে মনে করেন তিনি। স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের এই শিক্ষার্থী বলেন, সব শিল্পপ্রতিষ্ঠান নদীর পূর্ব পারে। অথচ বেশির ভাগ শ্রমিকের বসবাস পশ্চিম পারে। এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের জন্য সেতু প্রয়োজন। সেতু হলে নদীর পশ্চিম পারে অবস্থিত রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সহজে যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হবে। আল আমিনের সহপাঠী জিনাত জাহান বলেন, সেতু না থাকায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয় অসুস্থ রোগীদের। সেতুর অভাবে নদীর পূর্ব পারের লোকজনের কাছে সরকারি হাসপাতালের সেবা গ্রহণ করাটাই একধরনের ভোগান্তি।

মিরকুটিরছেও এলাকার বাসিন্দা লাকী আক্তার বলেন, শুধু নদী পার হওয়ার জটিলতা এড়াতে অসুস্থ রোগী নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান না তাঁরা। ভুলতা ও গাউছিয়া এলাকার বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারেই চিকিৎসা নেন। সেতু নির্মাণ শেষ না হওয়ায় রূপগঞ্জের মানুষ চরম ভোগান্তিতে আছে বলে জানান রূপগঞ্জ থানার একজন উপপরিদর্শক। নাম না প্রকাশের শর্তে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শুধু যাতায়াতব্যবস্থার কারণে নদীর পূর্ব পারের মানুষ আইনি সেবা থেকে অপেক্ষাকৃত বেশি বঞ্চিত। তারা যেমন থানায় আসতে অস্বস্তি বোধ করে, তেমনি অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ অভিযান পরিচালনাও ব্যাহত হয়।

গত ৩০ অক্টোবর সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুর নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। পূর্ব পারের মুড়াপাড়া এলাকায় সেতুর সংযোগ সড়ক দিয়ে বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করছে। মুড়াপাড়া থেকে সেতুর প্রবেশমুখে কাঠ ও টিনের বেড়া দেওয়া। তবে সেতুর পশ্চিম পারের সংযোগ সড়কে কাজ করতে দেখা যায় বেশ কিছু শ্রমিককে। আবদুর রাজ্জাক নামের এক শ্রমিক জানান, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর প্রায় এক মাস আগে সংযোগ সড়কের কাজ শুরু হয়েছে। বর্তমানে সড়কের পাশের ব্লক বসানোর কাজ করছেন তাঁরা। কথা হয় সেতু নির্মাণের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসটিআইএল ও আল আমিন কনস্ট্রাকশনের উপসহকারী প্রকৌশলী আনিসুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, সেতুর পশ্চিম পারে ২২০ মিটার দীর্ঘ সংযোগ সড়ক নির্মাণকাজ চলছে।

জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প ব্যবস্থাপক শাহাবুদ্দিন বলেন, ২০১৭ সালেই সেতুর মূল কাজ শেষ হয়েছে। সেতুর পশ্চিম পারের সংযোগ সড়কের জমি অধিগ্রহণসংক্রান্ত জটিলতার কারণে সেতুটি এখনো চলাচলের উপযোগী হয়নি। ২০১৪ সালের পর অন্তত পাঁচ দফায় প্রকল্পের সময় বাড়ানো হয়েছে বলে জানান তিনি। তাঁর মতে, জমি অধিগ্রহণ বিষয়ে এলজিইডির অপরিপক্বতার কারণে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করা যায়নি।

তবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) নারায়ণগঞ্জ জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী সেলিম সরকার বলেন, রাজনৈতিক সমস্যার কারণে ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছিল। স্থানীয় সাংসদের হস্তক্ষেপে সমস্যা দূর হয়েছে। আগামী বছরের জানুয়ারি মাসের মধ্যে সেতু উদ্বোধনের উপযোগী হয়ে উঠবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।