বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই গায়েহলুদ

কেক কাটছেন মোহাম্মদ হাবিবুল হাসান ও তানিয়া সুলতানা। গত ২২ অক্টোবর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্য সেন হলে।  সংগৃহীত
কেক কাটছেন মোহাম্মদ হাবিবুল হাসান ও তানিয়া সুলতানা। গত ২২ অক্টোবর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্য সেন হলে। সংগৃহীত

কোথাও ঝুলছে গাঁদা ফুলের মালা। কোথাও উড়ছে হরেক রকম বেলুন। পেছনের দৃশ্যপটে লাল-নীল কালিতে লেখা, ‘হাবিব ও তানিয়ার গায়েহলুদ।’ এর সামনে বসে বর-কনে হাতে হাত রেখে কাটলেন কেক। রাত নামতেই তাঁদের হাত রঙিন হয়ে উঠল বন্ধুদের দেওয়া হলুদে। সাউন্ড বক্সে তখন বাজছে, ‘ও আমার বন্ধু গো, চিরসাথি পথ চলার…’।

অন্য দশটি গায়েহলুদের অনুষ্ঠানসূচির মতোই স্বাভাবিক। তবে পার্থক্য বলতে গায়েহলুদের এই অনুষ্ঠান কোনো কমিউনিটি সেন্টারে কিংবা ঘরের চৌহদ্দিতে হয়নি। এই অনুষ্ঠানের সাক্ষী হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্য সেন হল।

মোহাম্মদ হাবিবুল হাসান ও তানিয়া সুলতানা নামের এই বর-কনে দুজনই বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশবিদ্যা ইনস্টিটিউটের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। বন্ধুদের আয়োজনে সূর্য সেন হলেই হয় তাঁদের গায়েহলুদের অনুষ্ঠান। গত ২২ অক্টোবর এ অনুষ্ঠান হলেও ভিন্ন রকম এ আয়োজন ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে গতকাল শুক্রবার। অনেকেই শেয়ার করেছেন তাঁদের ছবি। মন্তব্যের ঘরে লিখেছেন ভালো লাগার কথা।

একই সঙ্গে পড়ার সুবাদে হাবিবুল ও তানিয়া অনেক দিন ধরেই একে অপরকে চিনতেন। মন দেওয়া-নেওয়া চলছিল তা–ও বহুদিন ধরে। সম্প্রতি দুই পরিবারের মতে তাঁদের বিয়ের সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী গত ২৪ অক্টোবর তাঁদের বিয়ের অনুষ্ঠান হয়।

এর আগে বন্ধুরা দুজনকেই ধরলেন, ‘ক্যাম্পাসেই তোদের গায়েহলুদের অনুষ্ঠান করতে হবে।’ বন্ধুদের এমন আহ্বান ফেলতে পারেননি হাবিবুল ও তানিয়া। বন্ধুদের চাওয়া অনুযায়ী ২২ অক্টোবর সূর্য সেন হলে গায়েহলুদের অনুষ্ঠানের দিন নির্ধারণ করা হয়।

ওই দিন বিকেল থেকেই তাঁদের অন্তত ২৫ বন্ধু নেমে পড়েন হল সাজাতে। রাত ১০টা থেকেই শুরু হয় অনুষ্ঠানের মূল আয়োজন। খয়েরি রঙের পাঞ্জাবি পরা হাবিবুল আর লাল-হলুদ শাড়িতে সাজা তানিয়াকে প্রথমেই হলের নিচতলায় বরণ করে নেন বন্ধুরা। এরপর ফুল ছিটাতে ছিটাতে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় হলের দ্বিতীয় তলার অনুষ্ঠানস্থলে। অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া বন্ধুরাও সেজেছিলেন গায়েহলুদের সাজে।

প্রথমেই চলে খাওয়াদাওয়া আর কেক কাটা। সেই পর্ব শেষ হতেই তাঁদের হাত ভরে যায় বন্ধুদের শুভকামনা জানিয়ে লেখা কাগজ আর নানা উপহারে। এরপর সব বন্ধু দুজনের হাতে মেখে দেন মেহেদির আঁচড়।

ক্লাসে ফলাফলের দিক দিয়ে হাবিবুল ও তানিয়ার অবস্থান পাশাপাশি। অর্থাৎ প্রথম ও দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন দুজন। এবার সারা জীবনের জন্যও একই সুতোয় বাঁধা পড়লেন দুজনে। এর আগে বন্ধুদের কাছ থেকে এমন ভালোবাসা পাবেন, ভাবেননি দুজন। তাই তো হাবিবুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘যে ক্যাম্পাসে পড়াশোনা, সেখানেই গায়েহলুদ। সারা জীবন মনে রাখার মতো মুহূর্ত। বন্ধুদের জন্যই হয়েছে সবকিছু।’