মা ইলিশে বাজার সয়লাব

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ইলিশ মাছের প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে গত বুধবার দিবাগত রাতে। নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পরপরই রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের বাজারে ইলিশ উঠতে শুরু করেছে। গতকাল শুক্রবার ছুটির দিন থাকায় ডিমওয়ালা প্রচুর ইলিশ বাজারে উঠেছে। দামও ছিল সাধ্যের মধ্যে।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ‘প্রজননক্ষম ইলিশ সংরক্ষণ কর্মসূচি’ বাস্তবায়নে ইলিশ মাছের প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে মৎস্য বিভাগ গত ৯ থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন নদীতে ইলিশ মাছ শিকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এ সময় সারা দেশে ইলিশ মাছ আহরণ, পরিবহন, বাজারজাতকরণ, মজুত, বিক্রি সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর গোয়ালন্দ উপজেলার গোয়ালন্দ বাজার, দৌলতদিয়া, বরাটসহ বিভিন্ন এলাকায় ইলিশ উঠতে শুরু করেছে। তবে সবচেয়ে ইলিশের বড় বাজার মিলছে দৌলতদিয়া ঘাট বাজারে।

গতকাল সকালে দৌলতদিয়ায় দেখা যায়, টার্মিনালসংলগ্ন বাজারে অনেক মানুষের সমাগম। ছোট-বড় বিভিন্ন আকারের ইলিশের সরবরাহ বেড়েছে এবং দামও তুলনামূলক কম। তবে অধিকাংশ ইলিশের পেটে ডিম রয়েছে।

বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছোট আকারের ইলিশ ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকায়, মাঝারি আকারের ইলিশ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, ১ কেজি ওজনের কাছাকাছি ইলিশ ৬০০ থেকে ৭৫০ টাকা ও কেজির ওপরের ইলিশ ৮৫০ থেকে ৯৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি আড়তদারের ঘরের সামনে বড় ঝুড়ি বা ডালার ওপর ঢেলে ইলিশের ডাক হাঁকছেন বিক্রেতারা।

ফেরিঘাটের বিকল্প সড়কের পাশে শুধু আশপাশের মানুষ নয়, গাড়ি ও মোটরসাইকেল নিয়ে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ দৌলতদিয়ায় ইলিশ কিনতে এসেছেন। ফরিদপুরের ঈশান গোপালপুর থেকে পদ্মার ইলিশ কিনতে এসেছেন স্কুলশিক্ষক মো. হাবিবুর রহমান।  তিনি বলেন, পদ্মার ইলিশ সবার পছন্দ। কিন্তু অতি উচ্চ দাম থাকায় সহজে কেনা হয় না। এখন কিছুটা দাম কম হওয়ায় কিনতে এসেছেন।

>

নিষেধাজ্ঞার সময় অনেক জেলে লুকিয়ে মাছ ধরেছেন
ওই সব মাছও এখন বাজারে আসতে শুরু করেছে

রাজবাড়ী সদর উপজেলার গোয়ালন্দ মোড় থেকে এসেছেন মোতালেব হোসেন। তিনি বলেন, ‘সকালে শ্যালককে সঙ্গে করে দৌলতদিয়া ঘাটে এসেছি ইলিশ কিনতে। ২টি আড়তঘর থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকার ইলিশ কিনেছি। এই ইলিশ অন্য সময়ে প্রায় দ্বিগুণ দামে কিনতে হতো।’

মাগুরা থেকে ঢাকায় যাওয়ার পথে গাড়ি থামিয়ে ইলিশ মাছ কিনছিলেন সাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা আরও বাড়ানো দরকার ছিল। প্রতিটি ইলিশের পেটভর্তি ডিম রয়েছে। আরও ১৫ দিন থাকতে পারলে হয়তো এসব ইলিশের পেটে ডিম থাকত না।

ইলিশের পাইকারি বিক্রেতা মাসুদ মোল্লা বলেন, নিষেধাজ্ঞার পরদিন বৃহস্পতিবার কিছু ইলিশ উঠেছিল। ওই দিন দামও ছিল কিছুটা বেশি। তবে শুক্রবার বেশি পরিমাণে ইলিশ সরবরাহ হওয়ায় দাম আগের দিনের থেকে একটু কম যাচ্ছে। তিনি প্রায় দুই মণ ইলিশ কিনেছেন।

বাজারে এত ইলিশ আসা প্রসঙ্গে কয়েক জেলে বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময় অনেক জেলে লুকিয়ে মাছ ধরেছেন। ওই সব মাছ গ্রামের বিভিন্ন স্থানে বরফজাত করে পেটিতে মজুত করে লুকিয়ে রেখেছিলেন। নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পরই ওই সব ইলিশ বাজারে আসতে শুরু করেছে। এ ছাড়া নদী থেকে জেলেরা ধরে সরাসরিও বাজারে নিয়ে আসছেন। ইলিশের এই সরগরম বাজার হয়তো তিন-চার দিন থাকতে পারে।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. রেজাউল শরীফ বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময় ৯৯টি মামলা দায়ের করে ৭৫ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।