কাউন্সিলর মোস্তবা কোথায়

মোস্তবা জামান ওরফে পপি
মোস্তবা জামান ওরফে পপি

সম্প্রতি শুদ্ধি অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে এলাকায় নেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোস্তবা জামান ওরফে পপি। এলাকার লোকজন বলছেন, গ্রেপ্তার–আতঙ্কে তিনি আত্মগোপন করেছেন। এদিকে কাউন্সিলর না থাকায় এলাকার লোকজন নাগরিক, ওয়ারিশ সনদসহ বিভিন্ন নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

র‍্যাব সূত্র জানায়, মোস্তবা জামানের বিরুদ্ধে পল্টনে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, জমি দখল ও ক্যাসিনো-কাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আছে। তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে একাধিক মামলা বিচারাধীন। প্রতিটি মামলাতেই তিনি জামিনে আছেন। তাঁর বন্ধু যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাট গ্রেপ্তার হওয়ার পরই তিনি আত্মগোপনে চলে যান।

র‍্যাব-৩–এর অধিনায়ক লে. কর্নেল শাফিউল্লাহ বুলবুল প্রথম আলোকে বলেন, এখন কোনো ভুক্তভোগী সাহস করে মামলা করলে তাঁকে (মোস্তবা) গ্রেপ্তার করা হবে।

যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক নেতা বলেন, ইসমাইল হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে মোস্তবা জামানের ভালো বন্ধুত্ব আছে। কাকরাইলের ভূঁইয়া ট্রেড সেন্টারে মোস্তবা জামানের কেনা ফ্ল্যাটেই প্রথম ব্যক্তিগত কার্যালয় খোলেন সম্রাট।

মোস্তবা জামান কোথায়?

গত ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু করে র‍্যাব। ৬ অক্টোবর গ্রেপ্তার হন ইসমাইল হোসেন চৌধুরী। পল্টনের বেশ কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, ইসমাইল চৌধুরী গ্রেপ্তারের পর থেকেই স্থানীয় কাউন্সিলর ও পল্টন থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তবা জামানকে আর এলাকায় দেখা যায়নি।

পল্টন কমিউনিটি সেন্টার ও চামেলিবাগে নিজ বাড়ির নিচতলায় মোস্তবা জামানের পৃথক দুটি কার্যালয় আছে। গত বৃহস্পতিবার পল্টনের কার্যালয় তালাবদ্ধ দেখা গেছে। চামেলিবাগের কার্যালয়টি খোলা থাকলেও সেখানে তাঁকে পাওয়া যায়নি। এ সময় কার্যালয়ে থাকা কয়েকজন কর্মীর কাছে মোস্তবা জামানে কথা জানতে চাইলে তাঁরা কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। তাঁর পরিবারের কোনো সদস্যও কথা বলেননি। তাঁর মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

চামেলিবাগের বাসিন্দা মঞ্জু হোসেন বলেন, ‘পপি এখন কোথায় আছেন, তা নিয়ে মহল্লায় জল্পনা চলছে। কেউ বলছেন তিনি পালিয়ে বিদেশে চলে গেছেন। আবার কেউ বলছেন, দেশেই আত্মগোপনে আছেন।’

মোস্তবা জামানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত পাশের ওয়ার্ড ১২ নম্বরের কাউন্সিলর গোলাম আশরাফ তালুকদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশ কিছুদিন ধরেই তাঁর সঙ্গে মোস্তবার যোগাযোগ নেই।

নাগরিক সেবা মিলছে না

গত বৃহস্পতিবার সকালে চামেলিবাগে মোস্তবা জামানের কার্যালয়ে ওয়ারিশ সনদ নিতে যান নয়াপল্টনের বাসিন্দা মোজাম্মেল হোসেন। কিন্তু কার্যালয়ে কাউন্সিলর না থাকায় তিনি ফিরে যান। একই সময় নাগরিক সনদ নিতে আসেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এনামুল ইসলাম। তিনিও সনদ ছাড়া ফিরে যান। এভাবে সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত অন্তত ১৫ জন সেবা নিতে গিয়ে খালি হাতে ফিরে যান।

চামেলিবাগের এক বাসিন্দা বলেন, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর থেকে মোস্তবা জামান এলাকায় নেই। প্রতিদিন তাঁর কার্যালয়ে সেবা নিতে এসে অনেক মানুষ ফিরে যাচ্ছে।

সেবাপ্রার্থী মোজ্জাম্মেল হোসেন বলেন, এর আগেও তিনি দুই দিন সনদ নিতে এসেছিলেন। কিন্তু কাউন্সিলর না থাকায় পাননি। তিনি আরও বলেন, এভাবে একটি ওয়ার্ড চলতে পারে না। অবিলম্বে ডিএসসিসিকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে।

ডিএসসিসির ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের সচিব জামাল হোসেন বলেন, সর্বশেষ ১০ থেকে ১২ দিন আগে কাউন্সিলরের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছিল। তখন তিনি কিছু নাগরিক সনদে স্বাক্ষর করে দিয়েছিলেন। বিশেষ কারও দরকার হলে তা দিতে বলা হয়েছে।

২০ বোর্ড সভার ১২টিতেই অনুপস্থিত

ডিএসসিসি সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের এপ্রিলে সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মোস্তবা জামান কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। এরপর থেকে গত ২০ অক্টোবর পর্যন্ত সংস্থার ২০টি বোর্ড সভা হয়েছে। এর মধ্যে ১২টি সভাতেই তিনি উপস্থিত ছিলেন না। স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী, পরপর তিনবার বোর্ড সভায় অনুপস্থিতি কাউন্সিলর পদ থেকে অপসারণযোগ্য অপরাধ এবং অসদাচরণের শামিল। তাই গত রোববার তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

ডিএসসিসির সচিব দপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, অসুস্থতার কথা জানিয়ে গত ২০তম বোর্ড সভায় অংশগ্রহণ করেননি মোস্তবা জামান। এ–সংক্রান্ত একটি চিঠি তিনি ডিএসসিসিতে জমা দিয়েছেন। কিন্তু তিনি কোথায় চিকিৎসা নিচ্ছেন বা তাঁর কী রোগ হয়েছে, এর কিছুই ওই চিঠিতে উল্লেখ ছিল না।

জানতে চাইলে ডিএসসিসির সচিব মোস্তফা কামাল মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, আগামী সোমবারের মধ্যে মোস্তবা জামানকে কারণ দর্শাতে হবে। অন্যথায় আইন অনুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেবে ডিএসসিসি।