ঢাকা-দক্ষিণাঞ্চল নৌপথে পলি জমে আগাম নাব্যতাসংকট

উজানে পানি বৃদ্ধি ও বন্যার কারণে পলি জমে দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীতে নাব্যতাসংকট দেখা দিয়েছে। এতে ঢাকার সঙ্গে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে নৌপথের অন্তত ৩০টি স্থানে চরম নাব্যতাসংকট দেখা দেওয়ায় নৌ–চলাচল হুমকির মুখে পড়েছে। এই মতামত বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কর্মকর্তাদের। সংস্থাটি ওই ৩০ স্থানে পর্যায়ক্রমে খননকাজ পরিচালনা করার উদ্যোগ নিয়েছে। 

বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীতে নাব্যতাসংকট দেখা দেয়। আর এ জন্য ওই সব স্থানে সীমিত খনন করে নৌ–যোগাযোগ সচল রাখা হয়। কিন্তু এবার এই সমস্যা দেখা দিয়েছে শুষ্ক মৌসুম শুরুর এক মাস আগেই। আর তা প্রকট আকার ধারণ করায় নৌ–যোগাযোগ হুমকির মুখে রয়েছে।

বিআইডব্লিউটিএর বরিশাল অঞ্চলের খনন বিভাগ সূত্র জানায়, বিগত কয়েক বছরের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, উজান থেকে নেমে আসা পানির স্রোতের সঙ্গে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন মেট্রিক টন পলি দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীতে আসে। এর মধ্যে ৪০ ভাগ পলি প্রাকৃতিক কারণে নদ-নদীতে জমা হয়। এতে শুষ্ক মৌসুমে বিশেষ করে ডিসেম্বর মাসে দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথে নাব্যতা দেখা দেয়। এই সময় ওই সব এলাকা জরুরি ভিত্তিতে খনন করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনার কাজ করে বিআইডব্লিউটিএর খনন বিভাগ। কিন্তু এবার আগাম এই সমস্যা হয়েছে।

বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, ঢাকা থেকে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথের অন্তত ৩০টি স্থানে এবার নাব্যতাসংকটের তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে পিরোজপুরের তুষখালী এলাকায় খনন সম্পন্ন করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা-পটুয়াখালী পথের লোহালিয়া ও কারখানা নদীর বেশ কয়েকটি স্থানে, বরিশাল-ঢাকাপথের কালীগঞ্জ, বরিশাল নদীবন্দর এলাকা, বরিশাল-ভোলাপথের লাহারহাট ও ভেদুরিয়া ফেরিঘাট এলাকা এবং বরগুনার খাকদোন নদীর একটি স্থানে খনন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ জন্য বরিশাল অঞ্চলে বিআইডব্লিউটিএর সাতটি ড্রেজার প্রস্তুত করা হয়েছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে আরও তিনটি ড্রেজার এই কাজে যুক্ত হবে। এসব যন্ত্র দিয়ে এবার এই অঞ্চলের নৌপথে ৩০ লাখ ঘনমিটার পলি বা বালু অপসারণের চিন্তাভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে শুধু বরিশাল নদীবন্দর এলাকায়ই ১ লাখ ঘনমিটার পলি অপসারণ করা হবে।

বিষয়টি নিয়ে গত বৃহস্পতিবার বিআইডব্লিউটিএ বরিশাল নদীবন্দরের সভাকক্ষে লঞ্চমালিক ও চালকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। এতে খনন বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ভূঁইয়া, বরিশালের নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপপরিচালক আজমল হুদা সরকার বক্তব্য দেন।

মতবিনিময় সভায় মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ‘দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথকে সচল রাখতে আমরা নাব্যতাসংকট আছে এমন স্থানগুলোতে খননকাজ শুরু করছি। এ জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সব স্থানে খনন করা পলি অপসারণের পর জায়গা পাওয়া যায় না। এ জন্য খনন করা এসব পলি নদীতেই ফেলা হবে। যদিও বিষয়টি নদীর গভীরতা ও স্রোতের ওপর নির্ভর করবে। তবে যদি কেউ বিনা মূল্যে এই বালু নিতে চান, সে ক্ষেত্রে তাঁকে সেই সহায়তা দেওয়া হবে।’

সভায় বিআইডব্লিউটিএর বরিশালের নৌ–নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপপরিচালক আজমল হুদা সরকার বলেন, ‘যেসব নদীর তীরে আমাদের জায়গা রয়েছে, সেখানে আমরা খননের বালু বা পলি ফেলব।’

সভায় খনন বিভাগের প্রকৌশলী এস এম শাহনেওয়াজ কবির, নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক, বরিশাল নৌ–সংরক্ষণ বিভাগের উপপরিচালক রফিকুল ইসলাম, লঞ্চমালিক সমিতির সুলতান মাহামুদ, কাজী ওয়াহিদুজ্জামানসহ বিভিন্ন লঞ্চের মালিক-চালক, মাস্টার এবং উন্নয়নকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

নাব্যতাসংকটে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে

পাতারহাট লঞ্চঘাট

নাব্যতাসংকট দেখা দেওয়ার বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার পাতারহাট লঞ্চঘাটটি সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী দুই মাসের মধ্যে লঞ্চঘাটটি বর্তমান স্থান থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দক্ষিণে সরিয়ে নেওয়া হবে।

 বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তা আজমল হুদা সরকার বলেন, পাতারহাট লঞ্চঘাটটি বর্তমানে যেখানে আছে, সেখানে লঞ্চগুলোকে একটি চ্যানেল ধরে যেতে হয়। কিন্তু ওই চ্যানেলটিতে বারবার নাব্যতাসংকট দেখা দিচ্ছে। ফলে প্রায় সারা বছর ধরেই সেখানে খনন কার্যক্রম চালাতে হয়। এতে সরকারের প্রচুর অর্থ ব্যয়ও হয়। এ জন্য সার্বিক দিক বিবেচনা করে ওই লঞ্চঘাটটি স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত হয়।