বছর পেরোলেও বৃত্তির টাকা পায়নি শিক্ষার্থীরা

রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে ২০১৮ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ৫৬৮ শিক্ষার্থী মেধাবৃত্তি ও ৩ হাজার ৯৯ শিক্ষার্থী সাধারণ বৃত্তি পেয়েছে। কিন্তু এক বছর পার হলেও শিক্ষার্থীরা বৃত্তির টাকা পায়নি। এতে শিক্ষার্থীরা হতাশা প্রকাশ করেছে।

রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে ১৮ সেপ্টেম্বর মেধাবৃত্তি ও সাধারণ বৃত্তি নিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় বোর্ডের পক্ষ থেকে। সেখানে মেধা বিভাগে বৃত্তি পায় ৫৬৮ জন শিক্ষার্থী এবং সাধারণ বিভাগে বৃত্তি পায় ৩ হাজার ৯৯ জন শিক্ষার্থী। মেধাবৃত্তিতে মাসে ৬০০ টাকা ও এককালীন বার্ষিক অনুদান হিসেবে ৯০০ টাকা পাবে শিক্ষার্থীরা। আর সাধারণ বৃত্তিতে মাসে ৩৫০ টাকা ও বার্ষিক এককালীন ৪৫০ টাকা পাবে শিক্ষার্থীরা। এই টাকা দুই বছর পাওয়ার কথা। তবে এখনো এক বছরের টাকাই তারা পায়নি।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কোনো কারণে অর্থবছরের নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেলে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অনুমোদনক্রমে সর্বোচ্চ এক বছরের বকেয়া বৃত্তি দেওয়া যাবে। সেখানে আরও বলা হয়েছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বৃত্তির অর্থ শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানপ্রধানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্দেশনা অনুযায়ী, গত জুন মাসেই অর্থবছর শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু এখনো অর্থ পায়নি শিক্ষার্থীরা।

গত ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শিক্ষার্থীদের বৃত্তি ও মেধাবৃত্তির টাকা বিতরণ কার্যক্রম শেষ করতে বোর্ডগুলোকে নির্দেশ দিয়েছিল মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যানের কাছে এ–সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সাধারণ বৃত্তি ও মেধাবৃত্তি খাতে বরাদ্দ টাকা ৯টি শিক্ষা বোর্ডকে চেকের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে। শিক্ষা বোর্ডগুলোকে ‘বৃত্তি বা মেধাবৃত্তি বিতরণ’ নামে একটি নতুন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। এ অ্যাকাউন্টে বৃত্তির টাকা জমা করে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের মাধ্যমে তা বিতরণের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে বোর্ডগুলোকে। এ ছাড়া বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের টাকা ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিতরণ করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠাতে বলা হয়েছে বোর্ডগুলোকে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির মানবিক শাখার শিক্ষার্থী কাজী নাসিম হায়দার জানায়, আগামী মাসে তাদের টেস্ট পরীক্ষা। তারা ভেবেছিল ছয় মাস অন্তর বৃত্তির টাকা পাবে। কিন্তু এক বছর পার হলেও টাকা পায়নি। রাজশাহী কলেজের বিজ্ঞানের এক শিক্ষার্থী বলে, ‘আমরা স্যারদের কাছে শুনেছিলাম টাকা শিগগিরই দেবে। কিন্তু সেই টাকা এখনো পেলাম না। এখন টাকাটা পেলে উপকার হতো।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলের অধ্যক্ষ মো. শফিউল আলম বলেন, ‘আমরা সময়মতো প্রতিষ্ঠান থেকে যারা বৃত্তি পাবে, তাদের তালিকা দিয়েছি। শিক্ষার্থীরা বৃত্তির টাকা কবে পাবে জানতে চায় মাঝেমধ্যে।’

রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মোকবুল হোসেনকে ফোন দিলে তিনি বোর্ডের প্রধান মূল্যায়ন কর্মকর্তা এস এম গোলাম আজমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। যোগাযোগ করা হলে গোলাম আজম বলেন, ‘এই টাকা শিক্ষার্থীরা সাধারণত জুন মাসের মধ্যেই পেয়ে যায়। আগে টাকা দেওয়া হতো ডিসি অফিস থেকে। কিন্তু এবার এই দায়িত্ব আমাদেরকে দেওয়া হয়েছে। বিশাল কর্মযজ্ঞ হওয়ায় একটু দেরি হয়ে যাচ্ছে। দেশের কোনো শিক্ষা বোর্ড এই টাকা দিতে পারেনি।’ তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা শিগগিরই এই টাকা পাবে।