পোষা প্রাণীর দিবাযত্ন কেন্দ্র

এলডি হসপিটাল অ্যান্ড ডে কেয়ার সেন্টারের অভ্যর্থনা কক্ষ। গতকাল উত্তরায়।  প্রথম আলো
এলডি হসপিটাল অ্যান্ড ডে কেয়ার সেন্টারের অভ্যর্থনা কক্ষ। গতকাল উত্তরায়। প্রথম আলো

বাড়ির লোকের অনুপস্থিতিতে পোষা প্রাণীকে নিরাপদে রাখা, এর খাদ্যের সংস্থান ও যত্ন–আত্নিসহ উন্নত চিকিৎসার জন্য উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করেছে এলডি ভেটেরিনারি হাসপাতাল অ্যান্ড ডে–কেয়ার সেন্টার। এমনকি দীর্ঘ সময়ের কেউ যদি তাঁর প্রিয় পোষ্যকে এখানে রেখে যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করেন, তার জন্য এখানে হোটেল ব্যবস্থাও চালু করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

গতকাল শনিবার উত্তরা রবীন্দ্র সরণির ১৪/এ নম্বর ভবনে স্থাপিত এই হাসপাতালের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মাগুরা–২ আসনের সাংসদ বীরেন শিকদার। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিরেশ রঞ্জন ভৌমিক।

এলডি ভেটেরিনারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকেই এখানে তারা পরীক্ষামূলকভাবে কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। এর মধ্যে মোট ৬০০ প্রাণী এখানে চিকিৎসা নিয়েছে, যার ৭০ শতাংশই বিড়াল। বাকি প্রাণীদের মধ্যে বেশির ভাগ কুকুর। এ ছাড়া খরগোশ, গিনিপিগ, পায়রাসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখিও আছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পোষা প্রাণীর উন্নত চিকিৎসার জন্য বেসরকারি পর্যায়ে এই বিশেষায়িত হাসপাতালে পোষা প্রাণীর দিবাযত্ন কেন্দ্র ও হোটেল সুবিধাও রয়েছে।

গতকাল বিকেলে হাসপাতালের বিভাগগুলো ঘুরে দেখা যায়, মানুষের চিকিৎসার জন্য গড়ে তোলা বিভিন্ন হাসপাতালের মতোই এখানে আছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের চেম্বার, আধুনিক যন্ত্রপাতিসংবলিত অপারেশন থিয়েটার, জরুরি বিভাগ ও প্যাথলজি পরীক্ষার সুযোগসহ অন্যান্য সুবিধা। আরও আছে ডিজিটাল এক্স–রে, আলট্রাসনোগ্রাম ও ইসিজি করানোর সুযোগ। আছে পোষা প্রাণী রাখার কেবিন ও তাদের খেলাধুলার ব্যবস্থা।

হাসপাতালের কাউন্টারে কথা হয় বাংলাদেশে বসবাসরত ভারতীয় নাগরিক সুধির নায়ারের সঙ্গে। স্ত্রী–সন্তানসহ তিনি তাঁর পোষা বিশাল আকৃতির ফ্রেঞ্চ ম্যাসটিফ জাতের কুকুরটিকে এখানে এনেছিলেন কাঁধের ব্যথার চিকিৎসার জন্য। তিনি বলেন, এর আগে কুকুরটি বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় পড়লে চিকিৎসার খুব বেশি সুযোগ ছিল না। কিন্তু এই হাসপাতালটি চালু হওয়ার পর বেশ সুবিধা হয়েছে। চিকিৎসার পাশাপাশি কুকুরের খাবার ও প্রসাধন সামগ্রী কেনাসহ জটিল অপারেশনের ব্যবস্থা এবং নানা ধরনের প্যাথলজি পরীক্ষার উন্নত ব্যবস্থাও এখানে আছে।

এ সময় কাউন্টারে আরও অনেককে তাঁদের নিজ নিজ পোষ্যকে নিয়ে অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়। এই ধরনের একটা হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার কারণ জানতে চাইলে এর প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মৌসুমী ইসলাম জানান, তাঁর নিজের লিনিস ও ডিউক নামে দুটি পোষা কুকুর আছে। লিনিস একবার গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে দেশে ওর জন্য ভালো চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা করা যায়নি। পরে সিঙ্গাপুরের একটা প্রাণী হাসপাতালে যোগাযোগ করে মরণাপন্ন লিনিসের রক্তের নমুনা সেখানে পাঠানো হয়। এতে লিনিসের লিভারের সমস্যা ধরা পড়ে। পরে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ওই চিকিৎসকদের পরামর্শক্রমে চিকিৎসা দিলে লিনিস বেঁচে যায়। এরপরই বাংলাদেশের পোষা প্রাণীদের জন্য একটা উন্নতমানের হাসপাতাল গড়ে তোলার ভাবনা আসে। হাসপাতালটির নামকরণও করা হয়েছে লিনিস ও ডিউকের আদ্যক্ষর দিয়ে।

এ ছাড়া প্রাণীর জন্য দিবাযত্ন কেন্দ্র ও হোটেল ব্যবস্থা চালুর যৌক্তিকতা সম্পর্কে হাসপাতালটির চিফ ভেটেরিনারি কনসালট্যান্ট মাকসুদুল হাসান বলেন, দেখাশোনার লোক না থাকলে পোষা প্রাণীকে বাড়িতে রেখে অনেকে কর্মক্ষেত্রে মনোযোগ দিতে পারেন না। কারণ, এরা অনেকের কাছে অনেকটা সন্তানের মতোই। এ ছাড়া বিদেশভ্রমণসহ দূরের যাত্রার ক্ষেত্রে পোষা প্রাণী নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়। এসব সমস্যা সমাধানের জন্যই দিবাযত্ন কেন্দ্র ও হোটেল ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।