ঝিলমিলে ১৪ হাজার ফ্ল্যাট তৈরি হচ্ছে

ঝিলমিল রেসিডেন্সিয়াল পার্কের ত্রিমাত্রিক চিত্র।  সংগৃহীত
ঝিলমিল রেসিডেন্সিয়াল পার্কের ত্রিমাত্রিক চিত্র। সংগৃহীত

কেরানীগঞ্জের ঝিলমিল আবাসিক এলাকায় প্রায় ১৪ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণের কাজ এ মাসেই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করতে যাচ্ছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। নির্মাণকাজ শেষ হলে এটি হবে দেশের অন্যতম প্রধান বহুতল ভবনবিশিষ্ট আবাসন।

রাজউকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ‘ঝিলমিল রেসিডেন্সিয়াল পার্ক’ প্রকল্পের আওতায় ফ্ল্যাটগুলো নির্মাণ করা হবে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে মালয়েশিয়ার ‘বিএনজি গ্লোবাল হোল্ডিংস অ্যান্ড কনসোর্টিয়াম’। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ২০১৭ সালের নভেম্বরে বিএনজির সঙ্গে চুক্তি করেছিল রাজউক। ২০২৩ সালের মধ্যে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

চুক্তি অনুযায়ী, ঝিলমিল আবাসিক এলাকায় ১৬০ একর জমিতে হবে এই প্রকল্প। প্রকল্পের আওতায় মোট ৮৫টি ভবন নির্মাণ করবে বিএনজি। ভবনগুলোর মধ্যে ৬০টি হবে ২০ তলা (সেমি বেসমেন্টসহ) ও ২৫টি হবে ২৫ তলার (বেসমেন্টসহ)। মোট তিনটি শ্রেণিতে ফ্ল্যাট হবে ১৩ হাজার ৭২০টি। ‘এ’ শ্রেণির ১ হাজার ৫৫০ বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাট হবে ৯ হাজার ১২০টি, ‘বি’ শ্রেণির ১ হাজার ৭৫০ বর্গফুটের হবে ২ হাজার ৫৭৬টি এবং ‘সি’ শ্রেণির ২ হাজার ৪০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট হবে ২ হাজার ২৪টি।

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৯৭৯ কোটি ২০ লাখ টাকা। পুরো টাকা বিনিয়োগ করবে বিএনজি। এরপর ছয় কিস্তিতে বিনিয়োগের টাকা পরিশোধ করবে রাজউক।

চুক্তি অনুযায়ী, মাঠপর্যায়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হওয়ার দুই বছর পর (তৃতীয় বর্ষে) বিএনজিকে ৪০০ কোটি টাকা দেবে রাজউক। এরপর চতুর্থ বর্ষে আরও ৪০০ কোটি টাকা এবং পঞ্চম থেকে অষ্টম বছর পর্যন্ত (প্রতিবছর একটি করে) আরও চার কিস্তিতে ২ হাজার ২৯৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা করে পরিশোধ করবে।

প্রকল্পের সুবিধা: রাজউকের কর্মকর্তারা বলছেন, ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল বিল্ডিং সিস্টেম’ (ভবন নির্মাণের আধুনিক একটি প্রক্রিয়া) প্রযুক্তির মাধ্যমে নির্মাণ করা হবে এই ভবনগুলো। এখানে ইটের ব্যবহার থাকবে না। পুরো কাজ হবে আরসিসি ঢালাই দিয়ে। তাই ভবনগুলো মজবুত ও ভূমিকম্পসহনীয় হবে। প্রকল্প এলাকার মোট জমির ৩২ শতাংশে থাকবে ভবন, বাকি ৬৮ শতাংশ উন্মুক্ত থাকবে। এতে লেক, পার্ক, খেলার মাঠ, ওয়াকওয়ে, জগিং ট্র্যাক, কৃত্রিম ঝরনা, রাস্তা নির্মাণ করা হবে। এখানে যাঁরা বাস করবেন, তাঁদের জন্য স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, মসজিদ, মার্কেট, কমিউনিটি স্পেসের ব্যবস্থা রাখা হবে। থাকবে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের ব্যবস্থাও।

যোগাযোগ: বুড়িগঙ্গা নদীর ওপর চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু থেকে দুই কিলোমিটার পশ্চিমে এই প্রকল্প। এর পাশ দিয়ে গেছে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক। তা ছাড়া ঢাকা শহরে যাতায়াতের জন্য একটি উড়ালসড়ক নির্মাণেরও পরিকল্পনা আছে। উড়ালসড়কটি এখান থেকে গুলিস্তান, পল্টন হয়ে শান্তিনগরে গিয়ে শেষ হবে। এলাকার ভেতরে চলাচলের জন্য ১২ দশমিক ১৯ মিটার থেকে ৩৬ দশমিক ৫৮ মিটার প্রস্থের রাস্তা তৈরি করা হবে। এলাকার চারপাশে মোট ছয়টি প্রবেশপথ থাকবে। মূল প্রবেশপথের সামনে থাকবে ৬০ দশমিক ৪০ মিটার প্রস্থের রাস্তা। এটি ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হলে এখান থেকে ঢাকা শহরের পাশাপাশি দেশের দক্ষিণাঞ্চলে যোগাযোগ সহজ হবে।

দাম: নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রতি বর্গফুট ফ্ল্যাটের নির্মাণ ব্যয় ধরেছে ৩ হাজার ৬৯৬ টাকা। আনুষ্ঠানিকভাবে নির্মাণকাজ শুরু করার পর প্রতি বর্গফুট ৪৯০০-৫১০০ টাকায় বিক্রি করবে রাজউক। বিক্রির জন্য রাজউকের অন্যান্য ফ্ল্যাট প্রকল্পের মতো এ ক্ষেত্রেও আবেদন আহ্বান করা হবে। লটারির মাধ্যমে ফ্ল্যাট বরাদ্দ চূড়ান্ত করা হবে। এ ক্ষেত্রেও কিস্তি সুবিধা থাকবে। সাধারণ ক্রেতাদের সুবিধার্থে দীর্ঘ মেয়াদে কিস্তি সুবিধা দেওয়ার বিষয়টিও রাজউক বিবেচনা করছে বলে জানা গেছে।

 ফ্ল্যাটের নির্মাণ ব্যয় (৩ হাজার ৬৯৬ টাকা/প্রতি বর্গফুট) প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ধরা হয়েছে কি না জানতে চাইলে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে রাজউক জমি দিচ্ছে আর বিদেশি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করছে। ফ্ল্যাট নির্মাণে যে দাম ধরা হয়েছে, সেটি যৌক্তিক। এতে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ন্যায্য একটি অংশ লাভ ধরেছে। আর নির্মাণের ক্ষেত্রে আরসিসি ঢালাই ব্যবহার করায় খরচ বেশি পড়বে। এ ছাড়া প্রকল্প এলাকায় ফ্ল্যাট ছাড়াও রাস্তা, স্কুল-কলেজ, লেকসহ অন্যান্য সুবিধা আছে। এর সবই তাদের টাকায় নির্মাণ করবে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নের শুরু থেকে পরবর্তী আট বছর রক্ষণাবেক্ষণের কাজও করবে নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে রাজউক যখন সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করবে, তখন প্রতি বর্গফুট ফ্ল্যাটের জন্য ৩ হাজার ৬৯৬ টাকার সঙ্গে জমির দাম যোগ হবে।

অগ্রগতি: প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চুক্তি হয়েছিল ২০১৭ সালে। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে রাজউকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, পরের বছর প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে এবং ২০২২ সালে প্রকল্পের সব কাজ শেষ হবে। কিন্তু এখনো প্রকল্প বাস্তবায়নের মূল কাজ শুরু হয়নি। এই বিলম্বের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে এই প্রকল্পের পরিচালক ও রাজউকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম বলেন, অনেক বড় আকারের এই প্রকল্পের নকশা চূড়ান্ত করাসহ আনুষঙ্গিক কিছু কাজে সময় লেগেছে। এখন সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে। চলতি মাসেই প্রকল্পের মূল কাজ শুরু হবে। পাশাপাশি ফ্ল্যাটের আবেদনের জন্য প্রসপেক্টাস তৈরির কাজও শুরু হয়েছে। আগামী ডিসেম্বর বা জানুয়ারি নাগাদ ফ্ল্যাট বরাদ্দের আবেদন আহ্বান করা হবে।