বিএনপি নেতাদের মেরুদণ্ড আছে কি না, সন্দেহ প্রধানমন্ত্রীর

জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণসভায় সভাপতির বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডি
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণসভায় সভাপতির বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডি

বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের আত্মমর্যাদা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের সমালোচনা করে বলেন, ‘আমি জানি না, যাঁরা বিএনপি করেন তাঁদের কোনো মেরুদণ্ড আছে কি না, সেটাই আমার সন্দেহ। তাঁরা শুধু মায়াকান্না কাঁদে।’

শেখ হাসিনা আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণসভায় সভাপতির ভাষণে এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বিএনপির সমালোচনা করে বলেন, ‘একটা দল যার চেয়ারপারসন (খালেদা জিয়া) এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করে জেলে আবার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যাকে করল (তারেক রহমান), সে আরেক সাজাপ্রাপ্ত আসামি এবং পলাতক।’

জাতির পিতা এবং জাতীয় চার নেতা হত্যাকাণ্ডের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুনরায় স্বাধীনতাবিরোধীদের অভিযুক্ত করে বলেছেন, বাংলার মাটিতে রাজাকার, খুনি এবং তাদের দোসরদের কোনো স্থান হবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাজাকার, খুনি, আলবদর, আলশামস এবং পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট এবং ৩ নভেম্বরের খুনিদের যারা দোসর, খুনিদের মদদদাতা তাদের কারও স্থান বাংলার মাটিতে ভবিষ্যতে কোনো দিন ইনশা আল্লাহ হবে না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধী এবং খুনিদের এ দেশে বিচার হয়েছে, সাজা হয়েছে। এদের যারা দোসর বা ষড়যন্ত্রকারী হয়তো আজকে আমরা তাদের বিচার করে যেতে পারলাম না বা হয়তো আমরা চেষ্টা করব বা ভবিষ্যতে যারা আসবে, কোনো না কোনো দিন, এই ষড়যন্ত্রকারীরা একসময় ধরা পড়বে। তাদের এই রহস্য উদ্‌ঘাটন অবশ্যই হবে। কারণ, ইতিহাস কখনো মুছে ফেলা যায় না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ না কেউ এই বিচারটা করবে, এটা হবে, সেদিন আসবেই। কারণ, বঙ্গবন্ধুর নাম যখন এ দেশ থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করেছিল ঘাতক দল, তখন তারা ভেবেছিল কোনো দিন আর এই নাম ফিরে আসবে না। কিন্তু তা হয়নি। ২১ বছর পর আবার ফিরে এসেছে।

‘আবারও সময় আসবে আমাদের এবং এই দেশ থেকে অন্যায়-অবিচার দূর হবে,’ বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষকে সেভাবেই চিন্তা করতে হবে, এই দেশ যেন আবারও ওই খুনিদের রাজত্ব না হয়। বাংলাদেশের উন্নয়নের গতিধারা যেন অব্যাহত থাকে। গণতান্ত্রিক ধারা যেন অব্যাহত থাকে।’ সরকার প্রধান বলেন, ‘আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা অংশগ্রহণ করেছে, শহীদ হয়েছে, যাদের মহান আত্মত্যাগের বিনিময়ে এই স্বাধীনতা, সেই স্বাধীনতা কখনো ব্যর্থ হতে পারে না। ব্যর্থ হয় নাই এবং ভবিষ্যতেও আর কেউ তা ব্যর্থ করতে পারবে না।’ চলমান সন্ত্রাস এবং দুর্নীতি ও মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখার দৃঢ় প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে, মাদক এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে অভিযান সেটা অব্যাহত থাকবে।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্মরণসভায় প্রারম্ভিক বক্তব্য প্রদান করেন এবং স্মরণসভাটি পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এবং উপপ্রচার সম্পাদক মো. আমিনুল ইসলাম।

স্মরণসভায় বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এবং সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, সাবেক আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ও জাহাঙ্গীর কবির নানক, কথাসাহিত্যিক, লেখক ও সাংবাদিক আনিসুল হক, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আনোয়ার হোসেন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের সভাপতি রহমতুল্লাহ এবং দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ।

অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদ, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবসহ ১৫ আগস্টের সব শহীদ এবং দেশমাতৃকার সব গণ–আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।