মরা কার্তিক থেকে ভরা কার্তিক

আছেমা বেওয়া
আছেমা বেওয়া

‘রৌমারীর গাঁয়ে গাঁয়ে যখন কার্তিকের শেষ দিনটা চাকা ভাঙা গরু গাড়ির মতো থমকে দাঁড়ায়, যখন মাঠে মাঠে আমন ধানের খেতগুলো ভয়ানক শত্রুতা আরম্ভ করে, শালার ধান পণ করে যে সহজে পাকবে না, কারণ খেতমজুরদের শুকিয়ে মারা দরকার, তখন কুকুরেরা করুণ উ উ উ স্বরে কান্না জুড়ে দেয়, তখন আকালুরা খবর পায় দক্ষিণের দেশে ধান পেকেছে, সঙ্গে সঙ্গে ওরা বেরিয়ে পড়ে দলে দলে, ছুটতে শুরু করে দক্ষিণ দিকে: সেখানে ধান কাটার কাজ জুটবে, আর তিন বেলা গামলা গামলা সাদা সাদা ভাত গলা পর্যন্ত খেতে পাওয়া যাবে।’

কথাসাহিত্যিক মশিউল আলমের লেখা গল্প ‘আকালুর খিয়ারযাত্রা’র শুরুটা এমনই। এ গল্প লেখার সময় ১৯৯৯ সাল। গল্পের নায়ক আকালু কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারীর কৃষিমজুর। আকালুর এলাকায় সেই সময় ‘মরা কার্তিকের’ প্রবল আগ্রাসন। পেটে ক্ষুধার আগুন। তখন আকালুর মতো মানুষেরা সেই আগুন নেভাতে খিয়ারের দিকে যাত্রা শুরু করত। গল্পে দেখা যায়, এ যাত্রায় প্রতি পদে পদে প্রতারিত হয়ে নিজের সম্বল ১২ টাকার প্রায় সবটাই হারায়। প্রবল ক্ষুধা, পেট ভর্তি করে খাবার বাসনায় খিয়ার যাত্রা কীভাবে আকালুর অন্তিম যাত্রা হয়ে ওঠে, এর মর্মস্পর্শী বর্ণনা গল্পের প্রতি ছত্রে।

দেশের উত্তর জনপদের বৃহত্তর রংপুরজুড়ে দরিদ্র মানুষের মরণদশা হতো ফি বছর অক্টোবর-নভেম্বর (বাংলার আশ্বিন কার্তিক মাস) মাসজুড়ে। মরা কার্তিকে ক্ষুধায় কাতর অনেক মানুষের জীবনালেখ্য এভাবেই হয়েছে সাহিত্যের উপজীব্য। উত্তুরে আকালের সন্ধানে ছুটে যেতেন গণমাধ্যমকর্মীরাও। মঙ্গার সময় পত্রিকার পাতা ঠাসা থাকত পীড়িত মানুষের নানা দুর্দশার প্রতিবেদন আর ছবিতে। উত্তরাঞ্চলের মঙ্গা নিয়ে আমৃত্যু লিখে গেছেন সাংবাদিক মোনাজাতউদ্দিন। মঙ্গা নিয়ে তাঁর আছে সাড়াজাগানো অসংখ্য প্রতিবেদন ও একাধিক বই। এমন একটি বই ‘চিলমারীর এক যুগ’ এ দেখি দুঃসময়ের বয়ান।

‘এলাকায় জিনিসপত্রের দাম কেমন? দিনমজুরি কত করে? জবাব মেলে, চাল ১৪ টাকা। মজুরি ৬ টাকা খুব জোর ৭। কিন্তু বাইরে থেকে যেসব আনতে হয় যেমন কেরোসিন, সয়াবিন তেল, লবণ এসবের দাম চড়া। “চাউল ১৪ কৃষাণী ছয়-সাত, ঘরে ছয়জন খানেওয়ালা, হামরা কি করি বাঁচি?” প্রশ্নবোধক চিহ্নের মতো বসে থাকা আরেক বেকার কামলা করিমউদ্দিন দীর্ঘশ্বাসের সাথে তার বাঁচা-মরার প্রশ্ন–সম্পর্কিত কঠিন প্রশ্নটি উচ্চারণ করে।’

মঙ্গাকালের ওই সব দিনের কথা এখনো মনে পড়ে কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্রের কোলের রমনা গ্রামের ৯০–ঊর্ধ্ব আছেমা বেওয়ার।

কার্তিকের এই সময়টায় তখনো রাতে এখনকার মতোই হিম ঝরত। শুকিয়ে যেত ব্রহ্মপুত্র। নদের বুকে জাগা চরে রোদ পড়ে চিক চিক করে জ্বলত। জ্বালা ছিল আছেমার পেটেও। নিজের কথা বাদ, বড় কষ্ট হতো পাঁচ সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে। সাতজনের সংসার ছিল তাঁর।

আছেমা বলে যান, ‘১০ টাকা চালের কেজি। সেই টাকায় মেলা ভার। তিন-চার দিনে একদিন কোনো রকমে আধা সের চাল কিনে এনে সিদ্ধ করে হাঁড়ি ভরে পানি দিয়ে প্লেটে করে দিতাম ভাত। সঙ্গে থাকত কচুর তরকারি। তাও আবার লবণ–তেল ছাড়া। কখনো কখনো জঙ্গল থেকে খুড়িয়া, হেলেনচা, বতুয়া বা ঢেঁকিয়া শাক তুলে এনে কোনো রকমে রান্না করে দিতাম বাচ্চাদের পাতে।’

আকবর আলি খান। ছবি: প্রথম আলো
আকবর আলি খান। ছবি: প্রথম আলো

আছেমার দুই ছেলেই কৃষিমজুরি করে করে এখন নিজেরা কিছু জমির মালিক হয়েছেন। নাতি-পুতিরা স্কুল-কলেজে পড়ছে। দুই ছেলে লেখাপড়া করতে না পারলেও আছেমার নাতি-পুতিরা এমন কেউ নেই, যারা অন্তত স্কুলে যায়নি।

আছেমার বড় ছেলে আইয়ুব আলী তাঁর মায়ের কথার সঙ্গে যোগ করে বললেন, ‘কোনো বেলায় গমের ছাল, ধানের গুঁড়া, কাউনের ভাত কিংবা প্যারাগমের গুঁড়া (জব) ভেজে পানি দিয়ে খেয়ে দিন পার করতে হতো।’

আইয়ুব বলে যান, ‘আমাদের কষ্টের কথা এখন ছোটরা বুঝতেও পারে না। তাদের কাছে গল্প মনে হয়।’

চিলমারী উপজেলার সরকারবাড়ি গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম (৬৫) নিম্নমধ্যবিত্ত কৃষক। মঙ্গার কথা বলতেই তাঁর উক্তি, ‘মঙ্গার দিনের সেই কার্তিক আর এই সময়ের কার্তিকে ব্যবধান অনেক।’

সেই ব্যবধানের বয়ান শুনি জাহাঙ্গীরের মুখে। বলছিলেন, সাত ভাই একবোন, বাবা-মা মিলে বিরাট সংসার তাঁদের। তাঁর বাবা যখন চাল কিনতে পারতেন না টাকার অভাবে, তখন গম কিনে এনে ঢেঁকিতে ছেঁটে গমের ভাত, গমের আটার নাশতা কিংবা রুটি করে খাওয়াতেন। ভাতের সঙ্গে মহার্ঘ ছিল জঙ্গল থেকে নিয়ে আসা জংলি শাক। জাহাঙ্গীর বলছিলেন, ‘মঙ্গার সময়ে যেসব খাবার আমাদের খেতে হতো এখন এগুলো কেউ খায় না। গরিব মানুষও না।’

জাহাঙ্গীর জানালেন; এখন তাঁর চার সদস্যের পরিবার। সকাল শুরু হয় রুটি, ডিম সবজি, নুডলস দিয়ে। দুপুরে থাকে ডাল, সবজি, মাছ অথবা মাংস। প্রতি বেলায় দুই–তিন প্রকার তরকারি থাকে। প্রতিদিনের খাবার রুটিনে মাছ কিংবা মাংস থাকেই। আগে তো পান্তা জোটাই ভার ছিল।

কুড়িগ্রামের চিলমারী, রৌমারী বা নীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকার মতো মঙ্গার ‘হটস্পটগুলো’ এখন আমূল পাল্টে গেছে। বছরের পুরোটা সময়জুড়ে মাঠে ফসল । প্রত্যন্ত গ্রামে কৃষিমজুরের মজুরি দিনে ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত। এসব অঞ্চলের মজুর বা শ্রমিক এলাকায় কাজ না জুটলেই সোজা ঢাকার পথ ধরেন।

কমিউনিটি রেডিও ‘রেডিও চিলমারী৯৯.২ এফএম’ এর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বশির আহমেদ (৩৮)।

বশির বলছিলেন, ‘আমরা মধ্যবিত্ত গৃহস্থ পরিবারের মানুষ। এখন আমার এই বয়সেও বাবার সঙ্গে যখন একসঙ্গে খাবার খাই, তখন কিছুটা তটস্থ থাকি। প্লেট থেকে একটু ভাত পড়ে গেলেও বাবা বলেন, এখন তোরা খেতে পাস তো তাই ভাতের মূল্য বুঝিস না। আমাদের অনেক জমি ছিল কিন্তু ভাত ছিল না। অভাবটা আমরা বুঝি, ক্ষুধাটা বুঝি।’

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খান বলেন, ‘মঙ্গা নিরসনে একাধিক উপাদান কাজ করেছে। সরকার ও বেসরকারি সাহায্য সংস্থাগুলো প্রচুর বিনিয়োগ করেছে। চাষের পদ্ধতি পরিবর্তন করা হয়েছে। যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতির ফলে উত্তরের এসব জনপদের পণ্য বিক্রির সুবিধা হয়েছে। এসব নানা উপাদান কাজ করেছে।’



মঙ্গা কী
একধরনের মৌসুমি দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতিকে বোঝাতে মঙ্গা শব্দটি ব্যবহার করা হতো। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তর রংপুরের কয়েকটি জেলায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো মূলত কাজের অভাবে। একটা সময় দেশের অন্যত্র মঙ্গার মতো অবস্থা সৃষ্টি হতো। কিন্তু বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলে কৃষিনির্ভর দিনমজুর দরিদ্র মানুষদের চরম খাদ্যঘাটতির যে সমস্যাটা হতো সেটাকেই মঙ্গা বলা হতো। মধ্য সেপ্টেম্বর থেকে মধ্য নভেম্বর পর্যন্ত এই সময়টাতেই মানুষের অভাব প্রকট হয়ে দেখা দিত। এ সময়ে দরিদ্র মানুষের খাবারের সংগ্রহ যেত কমে এবং কাজের কোনো সুযোগ থাকত না। দেশের উত্তরাঞ্চলের প্রায় সব কৃষক এক সময় আমন ধান চাষ করতেন।

আমন ধানের চাষপ্রক্রিয়া ছিল দীর্ঘমেয়াদি। ধান পেতে ১৪৫ থেকে ১৬০ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো। কৃষকেরা জুনের শেষ দিকে খেত প্রস্তুত করতেন এবং জুলাই মাসে খেত পরিচর্যা করে এ মাসের শেষ দিকে বীজ বুনতেন। আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে জমিতে কিছু কাজ থাকত। এরপর সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত কৃষকের কোনো কাজ থাকত না। আর সেই সময় বিকল্প কাজের সুযোগও ছিল খুবই কম। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর খানা আয়–ব্যয় জরিপ ২০০৫ অনুযায়ী উত্তরাঞ্চলের, ৫১ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করত। সেই সময় জাতীয় স্তরে এর সংখ্যা ছিল ৪০ শতাংশ। ওই সময় বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের ৭৫ শতাংশ জমি ধান চাষের আওতায় ছিল। আর যে আমনের কথা বলা হলো, সেটি পেতে পেতে কৃষকের সময় লেগে যেত ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত। ধানের প্রতি অত্যধিক নির্ভরশীলতা ছিল অন্যতম কারণ। পুরো মঙ্গা পরিস্থিতি ছিল কৃষির সঙ্গে সম্পর্কিত। ফসল হওয়ার আগের সময়েই আসত মৌসুমি এই দুঃসময়।

মঙ্গা পরিস্থিতি নিরসনের উদ্যোগের ঘাটতিগুলো
১৯৯০ এর দশকেও ফি বছর মঙ্গার পদধ্বনি শোনা যেত রংপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে। কিন্তু খাদ্যাভাব দেখা দিলে বা এ সংক্রান্ত খবরাখবর পত্রিকায় এলে সরকারের পক্ষ থেকে যথারীতি অস্বীকার করা এবং চটজলদি কিছু খাদ্য সহায়তা দেওয়ার মধ্যেই কার্যক্রম সীমাবদ্ধ থাকত। বাংলাদেশে দারিদ্র্য ও মঙ্গা নিয়ে একেবারে শুরুর দিকের গবেষণা করেন অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান। ১৯৯১ সালেই ‘মরা কার্তিকের আলেখ্য’ নামে গবেষণা করেন তিনি। তখন তিনি বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাঁর গবেষণায় তিনি দেখান, যে অঞ্চলটিতে এই মঙ্গা পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে অর্থাৎ সেই রংপুর আসলে শস্যের ভান্ডার। কিন্তু সেই এলাকার দরিদ্র মানুষের এমন পরিস্থিতির জন্য তিনি চারটি কারণকে তাঁর গবেষণায় উল্লেখ করেন। সেগুলো হলো : ভূমিহীনতা, প্রাকৃতিক বিপর্যয় (নদী ভাঙন ও বন্যা) , অবকাঠামোর ঘাটতি, শিক্ষার নাজুক অবস্থা।

হোসেন জিল্লুর বলেন, ‘মঙ্গা নিয়ে আগাম প্রস্তুতির বিষয়টিই অনুপস্থিত ছিল। পরিস্থিতির উদ্ভব হলে থোক বরাদ্দ দেওয়া হতো। কীভাবে এটা নিরসন করা যাবে তা নিয়ে কথা কমই হতো। আসলে এটাকে একটা নিয়তি বলে মেনে নেওয়া হতো। কাঠামোগত সমাধানের দিকে নজর আসেনি।’

২০০৬ সালে করা ‘চ্যালেঞ্জেস অব ট্রান্সফর্মিং এক্সট্রিম পভার্টি রিয়ালিটিস: মরা কার্তিক টু ভরা কার্তিক, স্কেলিং আপ কমপ্রিহেনসিভ মঙ্গা মিটিগেশন’ শীর্ষক পিপিআরসির এক গবেষণা হয়। সেখানে কুড়িগ্রামের দিনমজুর পরিবারের ওপর করা জরিপে দেখা যায়, বছরজুড়ে আধাবেলা খাওয়ার হার জাতীয়ভাবে যেখানে ছিল ৩ শতাংশ সেখানে কুড়িগ্রামে ৮ দশমিক ৯ শতাংশ। বছরের কয়েকটি নির্দিষ্ট মাসে আধা বেলা খেতে পাওয়া পরিবার জাতীয় পর্যায়ে যখন ১২ দশমিক ২ শতাংশ তখন কুড়িগ্রামে ছিল ১৭ শতাংশ। পুষ্টির ঘাটতি জাতীয় পর্যায়ে যখন ছিল ৬ দশমিক ৫ শতাংশ তখন ওই অঞ্চলে ২৮ দশমিক ২ শতাংশ। খাদ্যঘাটতি থাকা পরিবার তখন জাতীয় পর্যায়ে ছিল ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ তখন কুড়িগ্রামে সাড়ে ৫৫ শতাংশ।
তবে পর্যায়ক্রমে মঙ্গা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটে। নতুন নতুন ধান উত্তর জনপদের মাঠে যায়, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়, মুঠোফোন আসে, সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ বাড়ে, বাড়ে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিগুলো। এসবের এক সমন্বিত প্রভাবেই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটে।

হোসেন জিল্লুর রহমান।
হোসেন জিল্লুর রহমান।

২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দেশে প্রথমবারের মতো একটি জাতীয় কমিটি হয়। মঙ্গা নিরসনে ও কমিটির উদ্যোক্তাও ছিলেন তৎকালীন উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান। ওই কমিটিতে সরকারের সব মন্ত্রণালয়কে সম্পৃক্ত করা হয়। সরকারি দপ্তরগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এমনকি ব্যাংকগুলোকেও তাদের ভূমিকা রাখতে বলা হয়। মঙ্গা নিরসনে রাষ্ট্রীয় এ উদ্যোগ বেশ কার্যকর বলে পরবর্তীকালে দেখা গেছে।

নতুন নতুন ধান আনে প্রাণ

মঙ্গা নিরসনে বাংলাদেশের কৃষি বিভাগের গবেষণা ও এর সম্প্রসারণ উদ্যোগ সর্বমহলে প্রশংসিত। সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি সংগঠনগুলো এই উদ্যোগ এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখে।

বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলে মঙ্গা নিরসনে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগের প্রথমটিই ছিল ব্রিধান ৩৩। ১৯৯৭ সালে জাতটি জাতীয় বীজ বোর্ডের অনুমোদন পায় এবং আবাদের জন্য অবমুক্ত হয়।

২০০৪ সালের আমন মৌসুমে রংপুরে প্রথম আবাদ শুরু হয় এবং পরবর্তী সময়ে কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে।

এর পরপরই আগাম জাতের (বিনাধান৭, বাউধান ১) ধানের আবাদ সম্প্রসারণ হয়। এসব জাত মধ্য আষাঢ় মাসের পর রোপণ করে আশ্বিন মাসের মধ্যেই কেটে ফেলা যায়। আমন মৌসুমে কার্তিক মাসের আগেই আশ্বিন মাসের মধ্যে আগাম ধান কাটার ব্যবস্থা হয়। এর ফলে শ্রমিকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় যথেষ্ট। আগাম জাতের ধান থেকে পাওয়া খড়ে গবাদিপশুর খাদ্যঘাটতি পূরণ হয়। আবার এই খড় থেকে কৃষকের বাড়তি মূল্য প্রাপ্তি হয়। আগাম (ব্রিধান ৩৩, বিনাধান৭, বাউধান ১) ফলে আগাম আলু, সরিষাসহ রবি ফসল আবাদ করার সুবিধাও মেলে।

ধানের এসব জাত ছাড়াও ব্রিধান ৫৬, ব্রিধান ৫৭সহ বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানির হাইব্রিড জাতের ধানের চাষ শুরু হয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর অঞ্চলের উদ্যান বিশেষজ্ঞ খোন্দকার মো. মেসবাহুল ইসলাম বলেন, ২০১০-১১ মৌসুমে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রংপুর অঞ্চলের (রংপুর বিভাগ) ৮ জেলায় আগাম রোপা আমন ধানের আবদি এলাকা ছিল প্রায় ৭০ হাজার হেক্টর। চলতি মৌসুমে আগাম রোপা আমনের আবাদ হয়েছে ২০২৫৮ হেক্টরে।

কৃষি অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এ বছর বৃষ্টি ও বন্যার কারণে বীজতলা তৈরি ও রোপণ কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় আবাদ কমেছে। এ ছাড়া আগের তুলনায় আর্থিক অবস্থা কিছুটা হলেও সচ্ছল হওয়ায় নাবিতে রোপা আমন আবাদ বেড়েছে। চলতি বছর রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় রোপা আমান আবাদ হয়েছে ৬ লাখ ৮ হাজার ৮৫২ হেক্টর জমিতে।

ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত এসব নতুন জাতের আগাম রোপা আমন ধানের মধ্যে ব্রিধান ৩৩–এর জীবনকাল ১১৮-১২০ দিন। এর চাল খাটো ও মোটা (গ্রামাঞ্চলে মোটা চালের কদর বেশি। আরেকটি ধান বিনাধান-৭–এর জীবনকাল ১২০-১২২ দিন। এর চাল লম্বা ও চিকন হয়। রোপা আমনের আগাম জাত ২০০৭ সালে জাতটি জাতীয় বীজ বোর্ডের অনুমোদন পায় এবং আবাদের জন্য অবমুক্ত হয়। এই ধানও আশ্বিন মাসেই কাটা যায়। কার্তিকের মঙ্গার রাজ্যে এই ধান অভাব মিটিয়ে চলেছে।

ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবন করা ব্রিধান ৩৩–এর মাঠপর্যায়ে সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে রংপুর অঞ্চলের বেসরকারি সংগঠন আরডিআরএসের ভূমিকাই যথেষ্ট। ২০০৩ সাল থেকে এর সম্প্রসারণ নিয়ে কাজ করে সংগঠনটি। প্রথমে ছোট আকারে প্লট করে নিজেদের উপকারভোগীদের মধ্যে তারা এর উৎপাদনের চেষ্টা করে। পরে আরডিআরএস আরেকটি প্রজাতি আইআর৫৪ ধান নিয়েও মাঠে সম্প্রসারনের কাজে উদ্যোগী হয়।

আরডিআরএসের ঊর্ধ্বতন সমন্বয়কারী (কৃষি ও পরিবেশ) মো. মামুনুর রশিদ বলছিলেন, ‘ধানভিত্তিক শস্য বিন্যাসের পরিবর্তনের কাজটি আমরা করেছি। আমাদের মাথায় ছিল, শুধু ধানের বিস্তার ঘটলে কাজ ও ফসল দুটোই দেওয়া যায়। কারণ, মঙ্গার মূল কারণ ছিল কাজ ও খাদ্যের অভাব।’

মামুনুর রশীদ আরও বলেন, ‘ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট নতুন ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে। আমরা এর সম্প্রসারণ নিয়ে গবেষণা করেছি। এর বিস্তারে সরকারের সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের সঙ্গে মিলে আমরা কাজ করেছি।’

বঙ্গবন্ধু সেতু, সড়ক যোগাযোগ বৃদ্ধি: বাড়াল মানুষের গতি

রংপুরে দীর্ঘদিন ধরে পরিবহন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আবু আসগর আহমেদ। পরিবহনমালিকদের সংগঠনের সঙ্গে জড়িত আছেন অনেক দিন ধরে। যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু সেতু হওয়ার আগে ও পরের যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি তাঁর কাছে বিস্ময়কর মনে হয় বলে জানান তিনি। সেতুর আগে-পরের পরিবর্তন তুলে ধরতে গিয়ে বললেন, ‘সেতু হওয়ার আগে রংপুর থেকে ঢাকায় ৮ থেকে ১০টি বাস ছাড়ত। এখন দুই শতাধিক বাস যায়।’

যমুনা যখন ফেরিতে পার হতে হতো তখন বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলে উপজেলা পর্যায়ে ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগের কোনো বাস ছিল না বলে জানান আবু আসগর। তিনি বলেন, এখন রৌমারী, চিলমারীর মতো এলাকা থেকে ঢাকায় সরাসরি বাস যায়। চিলমারী থেকে অন্তত ৫০টি বাস যায়। পরিবহন ব্যবসায়ীদের ব্যবসাও ভালো। এলাকার দিনমজুর এখন ঢাকা বা অন্যান্য শহরে রিকশা চালনা, পোশাকশিল্পের সঙ্গে জড়িত হয়ে যাচ্ছে।

চিলমারী ও রৌমারীর কোনো মানুষ সিলেট ও মৌলভীবাজার যেতে পারে সড়কপথেই।

কুড়িগ্রাম অঞ্চলের কৃষির চেহারাটাই পাল্টে গেছে। এখন রৌমারীর যে কৃষক শাক উৎপাদন করছেন, তিনি কিছুটা হলেও মূল্য পাচ্ছেন। শাকটা বাজারে নেওয়ার পর পাইকার তা কিনে নিচ্ছেন এবং প্যাকেট করে ঢাকায় পাঠাচ্ছেন। কুড়িগ্রাম সদরের বড়বাড়ি এলাকার বেগুন ও মরিচ বিখ্যাত। বড়বাড়ির বেগুন ও মরিচ মিলছে কারওয়ান বাজারে। কুড়িগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় কোনো পণ্যের ঘাটতি দেখা দিলে ঢাকা থেকে চলে আসে এসব এলাকায়।

সড়কপথের উন্নয়ন শুধু রাজধানীর সঙ্গেই মঙ্গা এলাকার মানুষের যোগাযোগ বাড়ায়নি, এসব এলাকার অভ্যন্তরীণ যোগাযোগও বেড়েছে। আর এখানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। পল্লি সড়ক সম্প্রসারণে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থা সামনের সারিতে। মঙ্গা নিরসনে সড়ক যোগাযোগ বাড়াতে সরকারের কৌশল ছিল পল্লি সড়ক এবং অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়ন। উত্তরের জেলাগুলোতে দুই দশকের বেশি সময় ধরে সরকার পল্লি সড়ক অবকাঠামোতে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে।

উত্তরাঞ্চলের চার জেলা রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধায় ১৯৯৫ সালের পর থেকে প্রায় ৪ হাজার ১০০ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন করা হয়েছে। ১৯৯৫ সালের আগে এই চার জেলায় মাত্র ৭২০ কিলোমিটার পাকা সড়ক ছিল।



শিক্ষায় উন্নতি
বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের দরিদ্র মানুষের মধ্যে শিক্ষার নিম্নহার এ অঞ্চলে মঙ্গা পরিস্থিতি নিরসনের একটি অন্তরায় হিসেবে বিবেচনা করা হতো। ২০০৭ সালে পিপিআরসির জরিপে দেখা যায়, দিনমজুর পরিবারগুলোর মধ্যে কুড়িগ্রামে অশিক্ষিত মানুষের সংখ্যা ছিল ৭০ দশমিক ২ শতাংশ। এ হার গাইবান্ধা, রংপুর ও নীলফামারী জেলায় ছিল যথাক্রমে ৬৫ দশমিক ১, ৬০ দশমিক ৪ ও ৬০ দশমিক ২।

কুড়িগ্রামে এসব পরিবারের মাত্র ১৪ দশমিক ১ শতাংশ প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষিত ছিল। গাইবান্ধা, রংপুর ও নীলফামারীতে এই হার সর্বোচ্চ ১৮ শতাংশের বেশি ছিল না।

তবে গত দুই দশকে বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষাসহ সব ধরনের শিক্ষা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। উত্তরের এসব জেলাতেও তার প্রভাব পড়েছে।

নীলফামারী জেলায় ২০১৯ জাতীয় তথ্য অনুযায়ী মোট শিক্ষার হার ৭০ দশমিক ০৩ শতাংশ। নিরক্ষরের হার ২৬.০৭ শতাংশ। জেলার লিখতে ও পড়তে পারা মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪ শতাংশ।

প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার হার ৭৫ শতাংশ। ২০১১ সালে জেলার শিক্ষার হার ছিল ৫৪ শতাংশ। গত আট বছরে শিক্ষার হার বেড়েছে ১৬ ভাগের বেশি।

কুড়িগ্রামে এখন শিক্ষার হার ৫৬ শতাংশ, গাইবান্ধায় ৫৪ শতাংশ। রংপুরে প্রায় ৬৩ শতাংশ মানুষ শিক্ষিত বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে থেকে জানা গেছে।



ক্ষুদ্রঋণ ও বিদেশযাত্রা
বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নে ক্ষুদ্রঋণের ভূমিকা নিয়ে বিস্তর আলোচনা আছে। মঙ্গা নিরসনে দেশের ঋণদানকারী বেসরকারি সংগঠনগুলো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) করা গ্রামীণ ক্ষুদ্রঋণ জরিপ ২০১৪ অনুযায়ী, ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশের গ্রামীণ পরিবারের ৩৬ দশমিক ২ শতাংশ পরিবার ঋণ গ্রহণ করত, ২০১৩ সালে ঋণ গ্রহণ করা পরিবারের সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৬ দশমিক ৬ শতাংশ। সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, গাইবান্ধায় ঋণ গ্রহণকারী পরিবারের সংখ্যা ছিল ৫১ শতাংশ, কুড়িগ্রামে ৪৫ শতাংশ, নীলফামারীতে ৫৬ শতাংশ এবং রংপুরে প্রায় ৫৫ শতাংশ।

সত্তরের দশক থেকে এই পর্যন্ত বিশ্বের ১৬২টি দেশে সোয়া কোটি বাংলাদেশি শ্রমিক গেছেন। যদিও তাঁদের মাত্র ২ শতাংশ দক্ষ। তাঁদের অধিকাংশই গেছেন মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রবাসী আয়ের দিক থেকে বাংলাদেশ এখন সপ্তম। দেশের উত্তরের জেলাগুলো থেকে প্রবাসে শ্রমিক যাওয়ার সংখ্যা বরাবরই কম। তবে সর্ব উত্তরের পঞ্চগড় বা ঠাকুরগাঁও থেকে রংপুর ও কুড়িগ্রাম থেকে যাওয়া শ্রমিকের সংখ্যা বেশি। মঙ্গা নিরসনে এসব জেলায় প্রবাসী আয়ের একটি ভূমিকা আছে বলে ধরা হয়। ২০০৬ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত রংপুর থেকে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ বিদেশে শ্রমিক হিসেবে গেছেন। কুড়িগ্রামে এই সংখ্যা প্রায় ১৯ হাজার। গাইবান্ধা থেকে যাওয়া শ্রমিক প্রায় ৩৫ হাজার। নীলফামারী থেকে গেছেন ১৪ হাজার।



উত্তরা ইপিজেড, উত্তরের নতুন আশা

দেশের উত্তর জনপদ শিল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তবে দুই দশকে সেখানে কিছু কিছু শিল্পকারখানা হয়েছে। নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে ৪০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। ঘটেছে আর্থসামাজিক উন্নয়ন। জেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরের সংগলসি ইউনিয়নে এই ইপিজেড।

২০০১ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উত্তরা ইপিজেডের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। তখন একটি মাত্র বিদেশি কোম্পানি এখানে কারখানা স্থাপন করলেও এখন প্রায় ২০টি দেশি–বিদেশি কোম্পানি কারখানা স্থাপন করে রপ্তানিযোগ্য পণ্য উৎপাদন করছে। ওই ২০টি কোম্পানির মধ্যে ১৪টি বিদেশি।

শ্রমিকদের মধ্যে জেলার জলঢাকা উপজেলার কাঁঠালি ইউনিয়নের পূর্ব কাঁঠালি গ্রামের রোজিনা আক্তার (২০) বলেন, ‘এখানে চাকরি করে সংসারটা চলছে ভালো করে।’

মঙ্গা এলাকার মানুষ, সরকারি কর্মকর্তা, অর্থনীতিবিদ ও সমাজ বিশ্লেষকেরা মনে করেন, সরকারি ও বেসরকারি নানা তৎপরতাতেই মঙ্গা নিরসন হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশের এ এক বড় অর্জন। বাংলাদেশের অব্যাহত অগ্রগতির একটি স্মারক এই মঙ্গা নিরসন। বিশ্বব্যাংক বলছে, অব্যাহত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি বাংলাদেশ দারিদ্র্য কমাতে দৃষ্টান্ত স্থাপন করার মতো সাফল্য অর্জন করেছে। আন্তর্জাতিকভাবে দারিদ্র্য নিরূপণের মানদণ্ডের নিরিখে (প্রতিদিন ১ দশমিক ৯০ ডলার আয়), বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪৪ দশমিক ২ শতাংশ। ২০১৭ সালে এটি কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ।

আবার গত বছর বিশ্বব্যাংক সম্প্রতি প্রকাশিত এই জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় বাড়লেও এর সঙ্গে বাড়ছে আয়বৈষম্য। ফলে দারিদ্র্য বেড়ে গেছে রংপুর অঞ্চলে। আর এতে উত্তরের জেলাগুলোর সঙ্গে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের জেলাগুলোর মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। রংপুর বিভাগের দারিদ্র্যের হার এখন ঢাকা ও সিলেট বিভাগের চেয়ে তিন গুণ বেশি।

এসব বৈষম্য নিরসনে সরকারের ভাবনা কী? পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ‘উত্তর জনপদে দারিদ্র্য দেশের গড় হারের সঙ্গে সমান্তরালভাবে কমছে না। এটা আমাদের নজরে আছে। উত্তরের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা আছে সরকারের।’