প্রশিক্ষণ নিয়ে ঘুরে দাঁড়ালেন সোহেল

সোহেলের ভেটেরিনারি ওষুধের দোকান।
সোহেলের ভেটেরিনারি ওষুধের দোকান।

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার সলপ ইউনিয়নে কানসোনা গ্রামের দরিদ্র কৃষক কায়েম উদ্দিনের ছেলে সোহেল রানা। মা–বাবা, দুই ভাই, স্ত্রীসহ ছয়জনের সংসার তাঁদের। ২০০৭ সালে স্থানীয় আকবর আলী কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন সোহেল। সংসারের অভাব–অনটন দূর করতে ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে বাবার শেষ সম্বল আবাদি জমিটুকু ৫ লাখ টাকায় বিক্রি করে সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমান সোহেল। সেখানে ভালো উপার্জন করতে না পেরে ২০১৭ সালের নভেম্বরে হতাশা নিয়ে দেশে ফেরেন তিনি। দেশে এসে চরম হতাশ হয়ে পড়েন তিনি।

শেষ পর্যন্ত সোহেল জীবনযুদ্ধে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। এক আত্মীয়ের পরামর্শে ২০১৭ সালের নভেম্বরে সিরাজগঞ্জ জেলা যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তি হন তিনি। সেখান থেকে তিনি গবাদিপশু ও হাঁস–মুরগি পালনের ওপর তিন মাসের প্রশিক্ষণ নেন। এরপর পিএসিই প্রকল্পের আওতায় ইফাদ ও পল্লী কর্ম–সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) অর্থায়নে এবং স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থা ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের (এনডিপি) সহযোগিতায় নেওয়া ‘ডেইরি ক্লাস্টার উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের আয় বৃদ্ধিকরণ’ শীর্ষক ভ্যালু চেইন উন্নয়ন প্রকল্পের সহায়তা নেন তিনি। সোহেলকে ভ্যালু চেইন উন্নয়ন প্রকল্পে এলএসপি পদে নিযুক্ত করা হয়। এ প্রকল্পের মাধ্যমে জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তত্ত্বাবধানে প্রাণিসম্পদের ওপর আরও এক মাসের প্রশিক্ষণ শেষে ব্যবহারিক যন্ত্রপাতি দেওয়া হয় তাঁকে। প্রকল্পের ভেটেরিনারি চিকিৎসকের সার্বিক সহযোগিতায় গবাদিপশুর প্রাথমিক চিকিৎসাসেবায় মনোনিবেশ করেন সোহেল।

প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর ডেইরি ভ্যালু চেইন উন্নয়ন প্রকল্পের সমিতিগুলোতে নিয়মিত উঠান বৈঠকের মাধ্যমে পশুর জাত উন্নয়ন, বাসস্থান ব্যবস্থাপনা, খাদ্য ব্যবস্থাপনা, রোগের কারণ, টিকার প্রয়োজনীয়তা, কৃমিনাশকের গুরুত্ব এবং গবাদিপশুর রোগপরবর্তী করণীয় কী, প্রভৃতি বিষয়ে সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেন তিনি। এতে সদস্যদের সঙ্গে সোহেলের যোগাযোগ ও গ্রহণযোগ্যতা দুটিই বাড়তে থাকে। বর্তমানে তিনি একটি মোটরসাইকেল কিনে আশপাশের নয়-দশটা গ্রামে গবাদিপশুর চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। উপজেলার কৃষকগঞ্জ বাজারে একটি ভেটেরিনারি ওষুধের দোকান দিয়েছেন তিনি।