খেলার মাঠে মেলা বন্ধ হচ্ছে না

মোহাম্মদপুরের জাকির হোসেন রোডসংলগ্ন খেলার মাঠে আবার বসেছে মেলা। মাত্র এক সপ্তাহ আগে মাঠ থেকে মেলা উচ্ছেদ করা হয়েছিল। গত বৃহস্পতিবারের ছবি।  প্রথম আলো
মোহাম্মদপুরের জাকির হোসেন রোডসংলগ্ন খেলার মাঠে আবার বসেছে মেলা। মাত্র এক সপ্তাহ আগে মাঠ থেকে মেলা উচ্ছেদ করা হয়েছিল। গত বৃহস্পতিবারের ছবি। প্রথম আলো

এক সপ্তাহ বন্ধ থাকার পর মোহাম্মদপুরের জাকির হোসেন রোড–সংলগ্ন খেলার মাঠে আবারও মেলা বসেছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকার বাসিন্দারা। তাঁরা অভিযোগ করে বলেছেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে (ডিএনসিসি) অনেকটা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে খেলার মাঠে মেলার আয়োজন করা হয়েছে।

 মোহাম্মদপুর এলাকায় খেলার মাঠ নষ্ট করে মেলা বসানো বিষয়ে গত ২১ অক্টোবর ‘খেলার মাঠে মেলার আয়োজন’ শিরোনামে প্রথম আলোতে প্রতিবেদন ছাপানো হয়। স্থানীয় মাহবুবুর রহমান প্রতি বৃহস্পতিবার করে মাঠে মেলা বসান। তিনি ডিএনসিসির ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শফিকুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ। মোহাম্মদপুর থানা–পুলিশকে ম্যানেজ করেই মেলার আয়োজন করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা বলছেন, প্রতিবেদনটি প্রকাশের দিন ডিএনসিসির পক্ষ থেকে মাঠের চারপাশের জায়গা দখল করে নির্মিত ফুটপাত ভেঙে দেওয়া হয়। কিন্তু পরের সপ্তাহ খেলার মাঠে আর মেলা বসেনি। তাঁরা ভেবেছিলেন, এটি স্থায়ীভাবে বন্ধ হবে। তবে গত সপ্তাহ থেকে আবারও মেলা বসানো শুরু হয়েছে। এতে হতাশা ব্যক্ত করেছেন অনেকে। তবে মোহাম্মদপুর থানা–পুলিশ মেলা থেকে সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে খেলার মাঠ–সংলগ্ন জাকির হোসেন রোডের একজন বাসিন্দা প্রথম আলোকে বলেন, মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ, যাঁরা এই মেলা থেকে আর্থিক সুযোগ-সুবিধা নেন। তাঁরা থানা-পুলিশ ম্যানেজ করে মেলা বসাচ্ছেন। মেলা বসানোর কারণে মাঠের আশপাশের বাসিন্দারা বিপাকে পড়েছেন। কারণ, মেলার দিনে এই এলাকা দিয়ে স্বাভাবিক চলাচলের উপায় থাকে না।

স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, কয়েক বছর ধরে সপ্তাহে প্রতি বৃহস্পতিবার জাকির হোসেন রোড–সংলগ্ন খেলার মাঠে মেলা বসছে। গত বছর ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা খরচ করে মাঠটি সংস্কার করা হয়। তখন কিছুদিন মেলা বন্ধ ছিল। সংস্কারের পর মাঠে সবুজ ঘাসও লাগানো হয়েছিল। সংস্কারকাজ শেষ হওয়ার কয়েক দিন পরেই আবারও মাঠে মেলার আয়োজন শুরু হয়। এতে মাঠের ঘাসগুলো নষ্ট হয়ে যায়। আশপাশের পরিবেশের ওপরও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

মাঠ দখল করে মেলার আয়োজন করারবিষয়ে জানতে চাইলে মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মেলা বসানোর সঙ্গে তিনি জড়িত নন। তবে তিনি বলেন, ‘এলাকার দুষ্টু ছেলেরা এসব করছে। তাদের নিষেধ করে বলেছি, পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হচ্ছে, তোমরা এসব কোরো না।’

জাকির হোসেন রোড–সংলগ্ন মাঠ ছাড়াও মোহাম্মদপুর ক্লাব ও শিশুপার্কে সপ্তাহে প্রতি রবি ও মঙ্গলবার দুদিন মেলা বসানো হচ্ছে। ক্লাবের সভাপতি মিজানুর রহমানের উদ্যোগেই এ মেলা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।

গতকাল রোববার সরেজমিনে দেখা গেছে, মোহাম্মদপুর ক্লাব ও শিশুপার্কে মেলা চলছে। মেলার পরিসর পাশের সড়ক পর্যন্ত ছড়িয়েছে। একটি সড়ক বন্ধ করেই মেলার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। পার্কের আশপাশের বাসিন্দারা বাইরে বের হতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। যাঁরা ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করছেন, তাঁদের সপ্তাহে দুদিন পার্কিংয়ে গাড়ি রেখে দিতে হচ্ছে।

ক্ষোভ প্রকাশ করে মোহাম্মদপুর ক্লাব ও শিশুপার্ক লাগোয়া একটি বাসার বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ক্লাব পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা প্রভাবশালী। জীবনের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে তাঁরা প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করছেন না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজন এ অনিয়মের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ায় তাঁরা নিরুপায় হয়ে এ ভোগান্তি মেনে নিয়েছেন।

জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর ক্লাবের সভাপতি মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মোহাম্মদপুর এলাকায় নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত লোকের
বসবাস। বিভিন্ন কর্মসূচিতে তাঁরা অংশ নেন। মেলা বসলে এলাকার লোকজন স্বল্পমূল্যে জিনিসপত্র কিনতে পারবে, তাই এই মেলার আয়োজন। তবে সড়ক বন্ধ করে মেলা বসানোর অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।

থানা-পুলিশ ম্যানেজ করে মেলা বসানোর বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জি জি বিশ্বাস বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের মাঠ তো পুলিশের অধীনে না। এর নিয়ন্ত্রণ করপোরেশনের হাতে। কোনো অনিয়ম হলে দেখবে সিটি করপোরেশন। আমরা দেখব আইনশৃঙ্খলা। যাঁরা এসব অভিযোগ করেছেন, তাঁরা সঠিক বলেননি।’

অনুমতি না নিয়ে খেলার মাঠে মেলা বসানোর বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোনো মাঠেই আর মেলা বসবে না। কারণ, আমরা অনেক টাকা খরচ করে এসব মাঠের সংস্কার করেছি এলাকার শিশু–কিশোরদের খেলাধুলা করার জন্য। মেলা বসানোর জন্য নয়। মেলা বসিয়ে কেউ মাঠ নষ্ট করতে পারবে না। আমরা এ সুযোগ কাউকে দেব না।’