কার্জন হলে 'জীবনবৃক্ষ'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের বাগানে লাগানো বাওবাবগাছ। যা মাংকি ব্রেড ট্রি নামেও পরিচিত।  প্রথম আলো
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের বাগানে লাগানো বাওবাবগাছ। যা মাংকি ব্রেড ট্রি নামেও পরিচিত। প্রথম আলো

আফ্রিকার লোককথা অনুসারে বাওবাবগাছে বাস করেন ঈশ্বর। তাই এই গাছের নিচে দাঁড়িয়ে কেউ কিছু চাইলে ঈশ্বর তাঁর মনোবাঞ্ছা পূরণ করেন। আবার গাছটির পানি ধারণক্ষমতা অসাধারণ। এর পাতা থেকে শুরু করে ফল–বাকল সবই কাজে লাগে। এ কারণে ঊষর মরুর বাসিন্দাদের কাছে এর পরিচিতি ‘জীবনবৃক্ষ’। এদিকে গাছটির ফল বানরের অত্যধিক প্রিয় বলে এর আরেক নাম ‘মাঙ্কি ব্রেড ট্রি’।

পৃথিবীর বুকে হাজার বছর বেঁচে থাকতে সক্ষম আফ্রিকার এই বাওবাবগাছের দেখা মিলবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে। সেখানে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের বাগানে একমাত্র বাওবাবগাছটি লাগানো হয়েছিল বছর সাতেক আগে। এর মধ্যে গাছটি অনেকখানি বেড়ে উঠেছে। ছাতার মতন ছড়িয়ে পড়েছে এর সুবিন্যস্ত ডালপালা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জসীম উদ্দিন বলেন, পৃথিবীতে টিকে থাকা কিছু বাওবাবগাছের বয়স হাজার বছরের বেশি। আফ্রিকা থেকে এক ব্যক্তি এই গাছের বীজ বাংলাদেশে এনেছিলেন। পরে চারা তৈরি করে তিনি এটা উদ্ভিববিজ্ঞান বিভাগকে উপহার দেন। গাছটি ঠিকঠাক বেড়ে উঠলেও এখন পর্যন্ত ফুল আসেনি।

এই মহাবৃক্ষের আদি নিবাস আফ্রিকা। ফরাসি প্রকৃতিবিদ ও পর্যটক মাইকেল এডানসনের সম্মানে এই গাছটির নাম রাখা হয়েছে Adansonia। এর ছয় প্রজাতির বেশির ভাগের দেখা মেলে আফ্রিকার মাদাগাস্কারে। এর বাইরে জাম্বিয়া, নামিবিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে, বতসোয়ানাসহ আফ্রিকার মূল ভূখণ্ডের বিভিন্ন অঞ্চল ও অস্ট্রেলিয়ায় বাওবাব জন্মে। এশিয়ার ওমান ও ইয়েমেন অঞ্চলেও গাছটি দেখা যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লাগানো গাছটি Adansonia digitata প্রজাতির।

বাওবাবগাছ ৫ থেকে ৩০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এর কাণ্ড ১১ মিটার পর্যন্ত দীর্ঘ হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার লিম্পোপো প্রদেশের সানল্যান্ড নামের খামারে টিকে থাকা একটা বাওবাবগাছের ৪৭ মিটার পরিধি ও ২২ মিটার উচ্চতা রেকর্ড করা হয়েছে। বাওবাবের কাণ্ড প্রকাণ্ড মোটা এবং ফাঁপা হয়। কোনো কোনো গাছ তার কাণ্ডের ভেতর এক লাখ লিটার পানিও ধরে রাখতে পারে।

অধ্যাপক জসীম উদ্দিন জানান, বাওবাবের ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও ক্যালসিয়াম আছে। এটা তুলাজাতীয় উদ্ভিদ। ফুল দেখতেও তুলার ফুলের মতো। তবে তা উল্টো হয়ে ঝুলে থাকে। আফ্রিকার মূল ভূখণ্ডের বিভিন্ন অঞ্চলে এই গাছের পাতা সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। শুকনো ফলের পাল্প দুধের সঙ্গে মিশিয়ে অথবা সরাসরি খাওয়া যায়। এ ছাড়া গাছের বাকল ব্যবহৃত হয় সুতা তৈরির কাজে।