তালি দিয়ে, নেচে অভ্যর্থনা

খাগড়াছড়ি শহরের খাগড়াপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকেরা এমন অভিনব কায়দায় শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে অভ্যর্থনা জানান। সম্প্রতি বিদ্যালয়ে।  প্রথম আলো
খাগড়াছড়ি শহরের খাগড়াপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকেরা এমন অভিনব কায়দায় শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে অভ্যর্থনা জানান। সম্প্রতি বিদ্যালয়ে। প্রথম আলো

শ্রেণিকক্ষে ঢোকার আগে শিক্ষার্থীদের লম্বা সরি। কক্ষের দরজার মুখে দাঁড়িয়ে আছেন শিক্ষক। দরজার পাশের দেয়ালে রঙিন কাগজে আঁকা তিনটি প্রতীক—হাত, হার্ট (হৃদয়) ও জিগজ্যাগ(আঁকাবাঁকা)। শিশুরা কক্ষে ঢোকার আগে একটা করে প্রতীক স্পর্শ করছে আর সে অনুযায়ী তাকে অভ্যর্থনা জানানো হচ্ছে। কোনো শিক্ষার্থী হাত স্পর্শ করলে তাকে তালি দিয়ে হাতে হাত মিলিয়ে, হার্ট স্পর্শ করলে কোলাকুলি করে আর জিগজ্যাগ স্পর্শ করলে কোমরে হাত দিয়ে নেচে অভ্যর্থনা জানাচ্ছেন শিক্ষক। এমন মজার অভ্যর্থনা পেয়ে গোমড়ামুখো শিক্ষার্থীটিও হেসে খুন।

সম্প্রতি এমন চিত্র দেখা গেল খাগড়াছড়ি শহরের খাগড়াপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বিদ্যালয়টির শিক্ষকেরা এমন অভিনব কায়দায় শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে অভ্যর্থনা জানান। এভাবে অভ্যর্থনা জানানোর কারণ শিক্ষার্থীদের মন থেকে বিদ্যালয় ভীতি দূর করা।

বিদ্যালয় মানেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে একধরনের আতঙ্ক। এক অজানা ভয়। শিক্ষকদের চোখ রাঙানি, কড়া শাসন। তবে খাগড়াপুর বিদ্যালয়ে সে ভীতি নেই। এখানে শিক্ষকদের সঙ্গে শিশুদের সম্পর্ক বন্ধুসুলভ। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এমন উদ্যোগে খুশি শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকেরা।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশাপ্রিয় ত্রিপুরা বলেন, এ বছর আগস্টে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে সারা দেশের ২৫ জন কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের সাত দিনের চীন সফরের আয়োজন করা হয়। ওই সফরে তিনিও ছিলেন। এই সময় চীনের শিক্ষা ও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়। এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চীনের একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের অভ্যর্থনা জানানো ভিডিও দেখেন তিনি। পরে বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে গত ৮ সেপ্টেম্বর থেকে শিশুদের এভাবে অভ্যর্থনা দেওয়া শুরু করেন তাঁরা।

 বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আলপনা ত্রিপুরা বলেন, বিদ্যালয়টিতে প্রাকপ্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বর্তমানে ২৫০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। সকালে ক্লাস শুরুর ১৫ মিনিট আগে শিক্ষার্থীদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়। কখনো হাতে হাত মিলিয়ে তালি দিয়ে, কখনো কোলাকুলি করে, কখনোবা কোমরে হাত রেখে নাচের তালে। নতুন এই উদ্যোগ শুরু হওয়ার পর থেকে শিক্ষার্থীরা এখন আগ্রহ নিয়ে বিদ্যালয়ে আসছে। শিক্ষার্থীরা এখন নিজ থেকে এসে নিজেদের ভালো-মন্দ শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করছে।

বিদ্যালয়ের সূত্রে জানা যায়, বিদ্যালয়ে শুধু শিক্ষার্থীদের এই ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। প্রতিটি শ্রেণিকক্ষ সাজানো হয়েছে শিক্ষার নানা ধরনের উপকরণ দিয়ে। আছে বঙ্গবন্ধু কর্নার, শিক্ষার্থীদের পড়ানো হয় নানা ধরনের খেলার মাধ্যমে। এ ছাড়া তৃতীয় শ্রেণিতে ত্রিপুরা শিক্ষার্থীদের পড়ানো হয় ত্রিপুরাদের নিজস্ব ভাষা ককবরকে।

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অভি ত্রিপুরা জানায়, বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা অনেক আদর করেন তাদের। তাদের সঙ্গে হাত মেলান, নাচেন। এসব অনেক ভালো লাগে। আর তাদের শ্রেণিকক্ষও ছবি ও দৃশ্য দিয়ে অনেক সুন্দর করে সাজানো। যা অন্য অন্য স্কুলগুলোতে নেই।

বিদ্যালয়ের অভিভাবক রতিকা ত্রিপুরা বলেন, একসময় তাঁর মেয়ে বিদ্যালয়ে আসতেই চাইত না। এখন শিক্ষকদের এমন অভ্যর্থনার জন্য সকাল হলেই বিদ্যালয়ে আসার জন্য তৈরি হয়ে যায়। প্রতিটি বিদ্যালয়ে এমন পদ্ধতি চালু করা উচিত।