নাম রেখেছেন প্রথম আলো পাঠশালা

প্রতিবেদন কেটে তৈরি করা বই হাতে মাহবুবুল আলম। সম্প্রতি চট্টগ্রামের বাসায়।  জুয়েল শীল
প্রতিবেদন কেটে তৈরি করা বই হাতে মাহবুবুল আলম। সম্প্রতি চট্টগ্রামের বাসায়। জুয়েল শীল

সাজানো গোছানো ড্রয়িংরুমের এক পাশের আলমারিতে তাকে তাকে নানা আকারের বই। সেই বইগুলো খুললেই কোনোটিতে দেখা মিলছে রাজনীতিবিষয়ক খবর, কোনোটিতে আবার খেলাধুলা নিয়ে লেখালেখি। কোনোটি ঠাসা নানা ফিচার আর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক লেখায়। 

প্রথম আলোর প্রতিবেদন নিয়ে বই বানিয়ে এভাবে একটি গ্রন্থাগার গড়ে তুলেছেন মাহবুবুল আলম। ২০১০ সালের মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত প্রকাশিত প্রায় সব বিশেষ প্রতিবেদনই সংরক্ষিত আছে তাঁর কাছে। সেসব প্রতিবেদন দিয়ে তৈরি করেছেন দুই শতাধিক বই। প্রতিটি বই এক শ পৃষ্ঠার ওপরে। নিজে পড়েন, আশপাশের তরুণদেরও পড়তে উৎসাহিত করেন। এই গ্রন্থাগারের নাম তিনি দিয়েছেন ‘প্রথম আলো পাঠশালা।’

এত ধৈর্য নিয়ে এই কাজ করার বিষয়ে মাহবুবুল আলম ছড়া কেটে বলেন, ‘প্রথম আলো যেন একটি পাঠশালা। নিত্যনতুন শেখায় কত কথা-মালা।’

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশনের অধীনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় চাকরি শেষে ১৯৯৫ সালে অবসরে যান মাহবুবুল আলম। চার মেয়ের সবাই বিয়ে করে সংসারী। স্ত্রী মার্জিয়া বেগমকে নিয়ে তাঁর এখন অবসরজীবন। কিন্তু অবসর শব্দটি মাহবুবুল আলমের অপছন্দ। সংসারের সব কাজে হাত লাগানোর পাশাপাশি নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাজে।

শুরুর গল্প

মাহবুবুল আলমের কথায়, ছাত্রজীবন থেকেই তাঁর নেশা বই, পত্রপত্রিকা পড়া। ২০০৫ সাল থেকে তিনি প্রথম আলোর নিয়মিত পাঠক। বেশি আগ্রহ নিয়ে পড়তেন স্বাস্থ্যবিষয়ক লেখাগুলো। ২০১০ সালের মার্চের শুরু থেকে সেই লেখাগুলো সংগ্রহ করা শুরু করেন। লেখাগুলো সংগ্রহে রাখার কারণও ছিল। শরীরে ছোটখাটো অসুখবিসুখ লেগেই ছিল। তাঁর মতে, এই লেখাগুলো যেহেতু নানা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ, তাই সে অনুযায়ী চললে হয়তো কিছুটা মুক্তিও মিলবে—এ জন্য লেখাগুলো সংগ্রহ করে বই হিসেবে বাঁধিয়ে রাখেন। 

এর কয়েক মাসের মাথায় মাহবুবুল আলম ভাবলেন, শুধু এই অংশ কেন, পত্রিকাটির অন্য প্রতিবেদনগুলোও তো সংগ্রহে রাখার মতো। সেই চিন্তা থেকে প্রতিবেদন সংগ্রহ ও বই বাঁধানো শুরু। 

প্রতিদিন ৯০ মিনিট

রোদ–ঝড়–বৃষ্টিতে যেখানেই থাকুন, কাজ সেরে ঠিকই প্রতিদিন বিকেলে ৯০ মিনিট সময় বরাদ্দ রাখেন মাহবুবুল আলম। এ সময়ে আগের দিনের পত্রিকা আর ছুরি-কাঁচি নিয়ে বসে পড়েন তিনি। প্রতিটি বিশেষ প্রতিবেদন কেটে কেটে পৃথকভাবে রাখেন। কয়েক সপ্তাহ পর যখন অনেকগুলো জমে যায়, তখন লেগে পড়েন বই বাঁধাইয়ে। খাতার পৃষ্ঠার গায়ে আঠা লাগিয়ে সেখানে সেঁটে দেন প্রতিবেদনগুলো। 

সম্প্রতি এক বিকেলে মাহবুবুল আলমের গ্রন্থাগারটি দেখার সুযোগ হয়। নগরের শহীদ সরণিতে তাঁর ঘরে ঢুকেই চোখ পড়ে টেবিলের ওপর কেটে রাখা পত্রিকার বিশেষ প্রতিবেদনগুলো। এক পাশে আঠার বয়াম আর কাঁচি। মাহবুবুল আলম এই প্রতিবেদককে ঘুরে ঘুরে দেখান বইগুলো। পাঁচ কামরার বাড়িটির দুই কক্ষজুড়েই বসিয়েছেন বিভিন্ন বইয়ের সংগ্রহ।

নিজের তৈরি বইগুলোর কয়েকটি হাতে নিয়ে গল্প জুড়ে দেন মাহবুবুল আলম। তিনি জানান, ছোটকাল থেকেই বইয়ের পোকা। ভালোবাসেন লেখালেখি করতে। ইতিমধ্যে তাঁর লেখা আটটি বই বেরিয়েছে। এর পাশাপাশি মৈত্রী নামের একটি ত্রৈমাসিক শিশু-কিশোর পত্রিকাও বের করেন। জড়িত আছেন সাংস্কৃতিক সংগঠন খেলাঘরের সঙ্গেও। লেখালেখি করেন বলে নানা কিছু নিয়ে পড়তে ভালোবাসেন।