'নেতাদের আশীর্বাদ না থাকলে এত দূর আসা যেত না'

খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও জি কে শামীম। ফাইল ছবি
খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও জি কে শামীম। ফাইল ছবি

আয়কর নথিতে দেখানো সম্পদের বাইরে কোনো অবৈধ সম্পদ নেই বলে দাবি করেছেন কথিত যুবলীগ নেতা ও ঠিকাদার জি কে শামীম। আয়কর নথির বাইরে সম্পদ পাওয়া গেলে শাস্তি পেতে প্রস্তুত বলেও জানিয়েছেন তিনি। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) রিমান্ডে দ্বিতীয় দিনের জিজ্ঞাসাবাদে শামীম এ দাবি করেন।

আজ সোমবার সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত শামীমকে দ্বিতীয় দিনের মতো জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন, উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম, সালাউদ্দিন আহমেদসহ অনুসন্ধান দলের সদস্যরা। বেলা তিনটায় রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদকে আনা হয় ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে। তাঁকেও বেলা তিনটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

দুদকের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, জি কে শামীমকে প্রধানত তাঁর সম্পদের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও সংশ্লিষ্ট অনেক বিষয়ও চলে আসে। শামীম কীভাবে এত কাজ পেয়েছেন, কারা তাঁকে সহায়তা করেছেন, সেসবও জানতে চান দুদকের কর্মকর্তারা। গণপূর্তের কর্মকর্তাদের কাকে কত শতাংশ কমিশন দিয়ে কাজ পেতেন, তা–ও জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু উত্তরের ক্ষেত্রে শামীম ছিলেন অনেকটাই কৌশলী। অন্যান্য সংস্থার জিজ্ঞাসাবাদে সব তথ্য দিয়েছেন বলে দুদক কর্মকর্তাদের কাছে জানান শামীম। তাঁর কাছে নতুন কোনো তথ্য নেই বলেও দাবি করেন তিনি।

দুদক কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে শামীমের দাবি, তিনি কাজ পেয়েছেন নিয়মের মধ্যে থেকেই। নিয়ম ভেঙে তাঁকে কাজ দিলে আরও আগেই সমালোচনার মুখে পড়তে হতো। রাজনৈতিক কারণে অনেকের সঙ্গে ভালো যোগাযোগ ছিল বলে স্বীকার করেন শামীম। তবে কারও নাম বলতে চাননি। তিনি বলেছেন, অনেক নেতাই তাঁর অফিসে নিয়মিত যেতেন। প্রয়োজনে তাঁদের সহায়তাও নিয়েছেন। রাজনৈতিক নেতাদের আশীর্বাদ না থাকলে এত দূর আসতে পারতেন না।

এসব নেতা আশীর্বাদের বিনিময়ে কত টাকা নিতেন, তা জানতে চাইলে শামীম মুখ খোলেননি এখনো। তবে দুদক চাইছে এ বিষয়ে শামীমের পরিষ্কার বক্তব্য। সূত্র বলছে, এসব তথ্য পেলে অন্য অনুসন্ধানের কাজে লাগবে। কিছুটা ক্ষুব্ধ শামীম বলেছেন, প্রয়োজনের সময় নেতারা ব্যবহার করলেও তাঁর প্রয়োজনের সময় কেউই পাশে নেই। ‘মধু খাওয়া’ এসব নেতাকে ‘নষ্ট মানুষ’ বলেও শামীম আক্ষেপ প্রকাশ করেন বলেও সূত্র জানিয়েছে।

অন্যদিকে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে প্রথম দিনের জিজ্ঞাসাবাদে তাঁর কাছ থেকে প্রাথমিক কিছু তথ্য জেনেছে দুদকের দলটি। দুদকের হাতে থাকা কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য–উপাত্ত যাচাই করে নিয়েছে।

জি কে শামীমকে গত ২০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর নিকেতনের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই দিন তাঁর কার্যালয় থেকে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা, ১৬৫ কোটি টাকার স্থায়ী আমানতের (এফডিআর) কাগজপত্র, ৯ হাজার মার্কিন ডলার, ৭৫২ সিঙ্গাপুরি ডলার, একটি আগ্নেয়াস্ত্র এবং মদের বোতল জব্দ করা হয়।

গ্রেপ্তারের পর শামীমের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইন এবং মাদক আইনে মামলা করা হয়। এসব মামলা তদন্ত করছে পুলিশ ও র‍্যাব।
২৯৭ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২১ অক্টোবর তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। রোববার তাঁকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে দুদক।

শামীমের প্রতিষ্ঠান জি কে বি অ্যান্ড কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড বর্তমানে এককভাবে গণপূর্তের ১৩টি প্রকল্পের নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে। আবার যৌথভাবে আরও ৪২টি প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্ত, যা সারা দেশে চলমান অধিদপ্তরের মোট প্রকল্পের ২৮ শতাংশ। সব কটি প্রকল্পের চুক্তিমূল্য ৪ হাজার ৬৪২ কোটি ২০ লাখ টাকা, যার মধ্যে ১ হাজার ৩০১ কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া গ্রেপ্তার হন গত ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের প্রথম দিনেই। ইয়াংমেনস ফকিরাপুল ক্লাবের ক্যাসিনো চালাতেন তিনি। গ্রেপ্তারের পর মাদক, অস্ত্র ও মানি লন্ডারিং আইনে তিনটি মামলা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

২১ অক্টোবর খালেদের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। এখন পর্যন্ত তাঁর সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য পেয়েছে সংস্থাটি।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদ শেষে জি কে শামীমকে রাজধানীর রমনা থানা এবং খালেদকে শাহবাগ থানায় রাখা হয়েছে। কাল মঙ্গলবার সকাল ১০টায় আবারও দুদকের মুখোমুখি হবেন তাঁরা।