আয়েশামণি কার কাছে যাবে?

সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত আয়েশা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মা-বাবা ফেলে চলে গেছেন। গত বছরের জানুয়ারিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির এসআই বাচ্চু মিয়া আয়েশাকে জরুরি বিভাগে ভর্তি করেন। স্বজন না থাকায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ আয়েশার দায়িত্ব নেয়। ভর্তির পর থেকে আয়েশার ঠিকানা হাসপাতালের শিশু বিভাগের ২০৭ নম্বর ওয়ার্ডের ১৯ নম্বর বেড।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আয়েশা। ছবি: মানসুরা হোসাইন
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আয়েশা। ছবি: মানসুরা হোসাইন

চলতি বছরের জুলাই থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই আয়েশার পাশে দাঁড়িয়েছে নিবেদন নামের একটি অলাভজনক সংস্থা। আয়েশাকে দেখাশোনা ও পুনর্বাসনের জন্য কাজ করছে সংস্থাটি। মূলত ফেসবুক পেজে পোস্ট দিয়ে পরিচিতজনদের কাছ থেকে পাওয়া বিভিন্ন সহায়তা দিয়েই কাজ করছে সংস্থাটি।

নিবেদনের বিভিন্ন কাগজপত্রে আয়েশার আনুমানিক জন্ম সাল ২০১০। সম্প্রতি হাসপাতালটির ২০৭ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, চিকিৎসকের টেবিলের পাশেই আয়েশার বিছানা। সে তার পুতুলটি ওই টেবিলের ওপর রেখেই খেলছে। একজন নারী চিকিৎসক আয়েশাকে হাতের চুড়ি আর একটি চশমা কিনে দিয়েছেন। কিন্তু আয়েশার এখন একটি মুঠোফোন লাগবে। কানের কাছে হাত নিয়ে তা সে দেখাতেও পারে। আয়েশা কথা বলতে পারে না। হাঁটতে পারে না। তবে সে অন্যের কথা বুঝতে পারে। সে অনুযায়ী প্রশ্নের উত্তর দেওয়ারও চেষ্টা করে।

হাসপাতালে পুতুলখেলায় ব্যস্ত আয়েশা। ছবি: মানসুরা হোসাইন
হাসপাতালে পুতুলখেলায় ব্যস্ত আয়েশা। ছবি: মানসুরা হোসাইন

নিবেদনের পক্ষে লাইজু বেগম সকাল আটটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত আয়েশার পাশে থাকেন। লাইজু বেগমকেই আয়েশা মা ডাকে। আর নিবেদনের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য শুভ মজুমদারকে আয়েশা বাবা ডাকে। শুভ মজুমদারের কাছেই আয়েশার যত বায়না। তাঁকেই জানাল যে তার একটি মুঠোফোন লাগবে। এ ছাড়া হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স এমনকি ওয়ার্ডের অন্য রোগীর স্বজনেরাও আয়েশার দেখভাল করেন। এভাবেই দিন কাটছে আয়েশার।

তবে নিবেদনের সভাপতি মারজানা সাফাত বললেন, হাসপাতালে বিভিন্ন জীবাণু ও রোগীদের মধ্যে একটি শিশু বড় হতে পারে না। আয়েশা বড় হচ্ছে। ফলে তার নিরাপত্তার বিষয়টিও দেখতে হবে। বর্তমানে রাজধানীর চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার নামের একটি বেসরকারি সংস্থা আয়শাকে নিতে চাইছে। এ জন্য আদালতের অনুমতি লাগবে। সেই অনুমতি পাওয়ার জন্য একজন আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে। হাসপাতালের পরিচালক বরাবর আবেদনও করা হয়েছে বিষয়টি জানিয়ে।

চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার নামের প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা মিল্টন সমাদ্দার জানালেন, তাঁরা আয়েশাকে নিতে চাইছেন। তাঁর প্রতিষ্ঠানে অসহায় প্রবীণ ব্যক্তিদের পাশাপাশি পাঁচজন প্রতিবন্ধী শিশু আছে। তাই আয়েশার কোনো অযত্ন হবে না। এখন আদালতের অনুমতির জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

আয়েশার পাশে দাঁড়িয়েছে ‘নিবেদন’ নামের একটি সংস্থা। ছবি: মানসুরা হোসাইন
আয়েশার পাশে দাঁড়িয়েছে ‘নিবেদন’ নামের একটি সংস্থা। ছবি: মানসুরা হোসাইন

মারজানা জানালেন, আয়েশার সঙ্গেই পরী নামের এক বছর দুই মাসের এক প্রতিবন্ধী শিশু ছিল। এই শিশুকেও তার মা-বাবা হাসপাতালে ফেলে চলে গিয়েছিলেন। তাকেও লাইজু বেগম দেখভাল করতেন। তবে সম্প্রতি আদালতের অনুমতিতে শিশুটির স্থান হয়েছে জাতীয় প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনে।

মারজানা বললেন, জাতীয় প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশন সিট স্বল্পতাসহ বিভিন্ন কারণে আয়েশাকে নিতে পারছে না। আয়েশাকে নিতে এখন পর্যন্ত তার মা-বাবা বা স্বজন কেউ আসেননি। আসবেন কি না, তা জানেন না কেউ। বিভিন্ন জায়গায় আয়েশার ছবি সাঁটিয়ে তার স্বজনের খোঁজ করা হয়েছে। তাই আয়েশাকে কেউ নেবে কি না, তা অজানাই রয়ে গেছে।