অযত্নে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে ৪ হাজার বই

কোহিনুর লাইব্রেরির প্রধান ফটক।
কোহিনুর লাইব্রেরির প্রধান ফটক।

ফরিদপুরে অব্যবস্থাপনার কারণে বন্ধ হতে বসেছে ৮৭ বছরের পুরোনো কোহিনুর লাইব্রেরি। যত্নের অভাবে এ পাঠাগারের চার হাজারের বেশি বই আলমারিতে থেকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গ্রন্থাগারিক থাকলেও তিনি আসেন না।

ফরিদপুর শহরের টেপাখোলা এলাকায় ১৯৩২ সালে ১০ শতাংশ জমিতে গড়ে তোলা হয় কোহিনুর পাবলিক লাইব্রেরি। স্থানীয় লোকজন বলেন, হাবেলি গোপালপুর এলাকার বাসিন্দা মজিদ মিয়া এই লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার মূল উদ্যোক্তা ছিলেন।

পাঠাগারের পরিচালনার দায়িত্বে আছে তিন বছর মেয়াদের পরিচালনা কমিটি। অথচ ১৫ বছর ধরে নতুন কমিটি হচ্ছে না। বইয়ের বদলে চারটি দৈনিক পত্রিকা পড়তে আসেন প্রতিদিন চার থেকে পাঁচজন। 

গত ৩১ অক্টোবর সরেজমিনে দেখা যায়, পাঠাগারের চারপাশে রয়েছে ২২টি দোকান। পাঠাগারের মূল ফটকটি বন্ধ দেখা যায়। সেখানে ময়লা–আবর্জনার স্তূপ। পশ্চিম পাশের ব্যবসায়ী হৃদয় রবিদাসের দোকানের পাশ দিয়ে পাঠাগারে প্রবেশ করতে হয়। 

ওই পথ দিয়ে পাঠাগারের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, দোতলা ভবনের নিচতলা ব্যবহার করা হচ্ছে দৈনিক পত্রিকা পড়ার জন্য। চারটি বাংলা পত্রিকা রাখা হয়। সেখানে পাঠকদের জন্য রয়েছে দুটি টেবিল ও আটটি কাঠের চেয়ার। ভেতরের কক্ষের পূর্ব পাশের সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে দেখা গেল, ১২টি কাঠের আলমারি ও ১টি ছয় তাকবিশিষ্ট শেলফ। জমে আছে ধুলা। 

এ সময় পাঠাগারে তিনজন পাঠককে দেখা যায়, তিনজন পাঠককে পত্রিকা পড়তে দেখা গেল। শহরের হাবেলী গোপালপুর এলাকার বাসিন্দা মোস্তফা কামাল (৬৫) জানান, এ পাঠাগারে গ্রন্থাগারিক আছেন বলে জানি, কিন্তু তিনি আসেন না। তিনি স্বাধীনতার আগে থেকেই এখানে বই পড়তে আসেন। এখান থেকে তিনি শত শত বই পড়েছেন। এখন বই পড়তে পারেন না। গ্রন্থাগারিক আসেন না, তাই বইগুলো আলমারিতে তালা দিয়ে রাখা হয়েছে। প্রতিটি বইয়ের ওপর ধুলার আস্তরণ পড়েছে প্রায় এক ইঞ্চি। 

গ্রন্থাগারিক বদিউজ্জামান বলেন, আজকাল এখানে আর কেউ বই পড়তে আসে না। কেউ নেয় না বলে বই দেওয়া হয় না। পাঠাগারে গিয়ে অলস সময় কাটান। তাই আর যান না। 

পাঠাগারের বাইরে থাকা ২২টি দোকানদারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ দোকানগুলো যাঁরা বরাদ্দ নিয়েছেন, তাঁরা সবাই লাইব্রেরি পরিচালনা কমিটির সঙ্গে যুক্ত। তাঁরা ওই দোকানগুলো ভাড়া নিয়েছেন নামমাত্র মূল্যে। দোকানের অবস্থান অনুযায়ী ভাড়া ৫০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে। এভাবে গ্রন্থাগারের মাসিক আয় ২ হাজার ৭০০ টাকা। অথচ তাঁরা দোকানগুলো অন্যের কাছে ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে তুলে নিচ্ছেন হাজার হাজার টাকা। 

পাঠাগারটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত মজিদ মিয়ার ছেলে মাহমুদুল হাসান বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্নে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধরনা দিয়ে পাঠাগারের জন্য বই সংগ্রহ করতেন তাঁর বাবা। প্রায় ১০ বছর যাবৎ এই পাঠাগার অব্যবস্থাপনা ও অবহেলার কারণে ধ্বংস হতে বসেছে। তিনি এ পাঠাগারকে সচল করার জন্য বহু উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু কোনো কাজ করতে না পেরে হাল ছেড়ে দিয়েছেন। 

 গত ১৫ বছর ধরে ওই লাইব্রেরির পরিচালনা কমিটির কোনো সভা বা নির্বাচনও হয় না। যিনি বর্তমানে এ পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রয়েছেন, তাঁর নাম গোলাম রব্বানী ভূঁইয়া। তিনি বলেন, সম্প্রতি তিনি পদত্যাগ করেছেন। পাঠাগারের মোট বই আছে ৪ হাজার ২০০টি। দোকানগুলোর ভাড়ার টাকা বাড়িয়ে আবার ঐতিহ্যবাহী এ পাঠাগারটি সচল করা সম্ভব।