ফাঁদ পেতে ৩ জনসহ ৬ জন গ্রেপ্তার

ঘুষের টাকাসহ তিনজনকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ ছাড়া দুদকের মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন তিনজন। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে কাস্টমস পরিদর্শক, সার্ভেয়ার, পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত উপপরিদর্শক, সরকারি পাটকলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) আছেন।

গ্রেপ্তারের বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন দুদকের মুখপাত্র প্রণব কুমার ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, আজ মঙ্গলবার দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

দুদক জানিয়েছে, চট্টগ্রামের ট্যাক্স জোন-২ এবং ইনকাম ট্যাক্স সার্কেল-৩১-এর পরিদর্শক মো. রেজাউল করিম বেগকে ২০ হাজার টাকা ঘুষসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুদকের চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এর উপপরিচালক মোহাম্মদ লুৎফুল কবীর চন্দনের নেতৃত্বে একটি দল তাঁকে ঘুষের টাকাসহ আগ্রাবাদের পিএইচপি ভবনের অফিস থেকে গ্রেপ্তার করে। তাঁর বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

চায়ের দোকানে বসে ঘুষ নেওয়ার সময় সার্ভেয়ার আটক
প্রথম আলোর দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, দীর্ঘদিন ধরে সাড়ে নয় শতক জমি লিজ নেওয়ার জন্য জেলা পরিষদের সার্ভেয়ার মো. আল-আমিনের পেছনে ঘুরছিলেন মোছা. শাবানা খাতুন। ২০ হাজার টাকা ঘুষের বিনিময়ে শাবানাকে আশ্বাসও দিয়েছিলেন সার্ভেয়ার। সেই টাকা দিতে শাবানা এসেছিলেন জেলা পরিষদের সামনে কাছারি এলাকার চায়ের দোকানে। সার্ভেয়ার টাকা নিলেন, পকেটে ঢোকালেন। আর সঙ্গে সঙ্গেই দুদকের অভিযানে হাতকড়া পরলেন সার্ভেয়ার মো. আল আমিন।

আজ বেলা ১১টার সময় দিনাজপুর জেলা পরিষদের এই সার্ভেয়ার ঘুষ নেওয়ার সময় হাতেনাতে গ্রেপ্তার হন। দুদকের অভিযানে অংশ নেন দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক আবু হেনা আশিকুর রহমান, সহকারী পরিদর্শক মো. ওবায়দুর রহমানসহ দুদকের অন্য কর্মকর্তারা।

আশিকুর রহমান জানান, দিনাজপুর সদর উপজেলার বড়ইল গ্রামের মো. সাইফুদ্দিনের স্ত্রী শাবানা খাতুন জেলা পরিষদের বাঙ্গিবেচা মৌজায় সাড়ে ৯ শতক জমি লিজ নেওয়ার জন্য আবেদন করেন। জেলা পরিষদ সেই জমি লিজ দেওয়ার পক্ষে মতামতও দেয়। কিন্তু সার্ভেয়ার আল-আমিন শাবানা খাতুনের কাছে ২০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। এ ব্যাপারে সমন্বিত দুদক কার্যালয়ে অভিযোগ করেন শাবানা খাতুন। তাঁর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই দুদক অভিযান চালিয়ে সেই সার্ভেয়ারকে হাতেনাতে আটক করেন।

খালিশপুর পাটকলের জিএম গ্রেপ্তার
খুলনায় বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণাধীন (বিজেএমসি) খালিশপুর জুট মিলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) গোলাম মোস্তফা কামালকে ঘুষের ১০ হাজার টাকাসহ গ্রেপ্তার করে দুদকের খুলনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়। দুপুরে গোলাম মোস্তফার অফিস থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছেন প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক।

জানা গেছে, ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের খুলনা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শাওন মিয়া বাদী হয়ে মামলা করেন। ওই মামলায় বিকেলে গোলাম মোস্তফা কামালকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মোস্তফা কামাল ওই মিলের প্রকল্পপ্রধান।

জানা গেছে, চলতি বছরের ৮ এপ্রিল ওই মিলের গার্ড কমান্ডার নুরুল আমিনসহ চারজনকে গার্ড কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ দেন গোলাম মোস্তফা কামাল। এ সময় প্রত্যেকের কাছ থেকে তিনি ২০ হাজার টাকা করে ঘুষ নেন। পরে গত ঈদুল আজহার সময় নুরুল আমিনকে গার্ড কমান্ডার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে আরও ১০ হাজার টাকা ঘুষ নেন তিনি। কয়েক দিন আগে আরও ২০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন মোস্তফা কামাল। এ ক্ষেত্রে তাঁকে ১০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে রাজি হন নুরুল আমিন।

দুদকের খুলনা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. শাওন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, বারবার ঘুষ দাবি করায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলেন নুরুল আমিন। এ কারণে তিনি দুদকে অভিযোগ করেন। পরে দুদক কার্যালয় থেকে তাঁকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে পাঠানো হয়। ওই টাকার নম্বর আগে থেকেই দুদক কর্মকর্তাদের কাছে সংরক্ষণ করে রাখা ছিল। নুরুল আমিনের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার পর গোলাম মোস্তফা কামাল তা নিজের প্যান্টের পকেটে রাখেন। পরে দুদক তাঁর কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে শরীর তল্লাশি করে ওই টাকাগুলো উদ্ধার করে।

অভিযানে দুদকের সহকারী পরিচালক তরুণ কান্তি ঘোষ, উপসহকারী পরিচালক নীলকমল পাল ও খন্দকার কামরুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।

অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় ময়মনসিংহে দুজন গ্রেপ্তার
প্রথম আলোর ময়মনসিংহ সংবাদদাতা জানান, অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় ময়মনসিংহে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে দুদক। গ্রেপ্তার হওয়া একজন হলেন পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত উপপরিদর্শক আবদুল জলিল (৬৮)। আজ দুপুরে শহরের আকুয়া হাজিবাড়ি এলাকায় তাঁর নিজ বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

দুদক সূত্র জানায়, অবৈধভাবে ৬০ লাখ টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের উপসহকারী পরিচালক বজলুর রশিদ বাদী হয়ে মামলা করেছিলেন ময়মনসিংহ কোতোয়ালি থানায়। সে মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়।

মো. মোকসেদ আলী (৬৫) নামের সাবেক এক কর পরিদর্শককে শহরের পুরোহিতপাড়ায় তাঁর নিজ বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধেও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ মামলা করে দুদক। অবৈধ উপায়ে ৭৮ লাখ টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদক কর্মকর্তা সাধন চন্দ্র সূত্রধর বাদী হয়ে মামলা করেছিলেন।

ঢাকায় গ্রেপ্তার হিসাবরক্ষক
৭০ লাখ ৫৮ হাজার ৭৮০ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় ঢাকা গ্রেপ্তার করা হয়েছে এক হিসাবরক্ষককে। তাঁর নাম এস এম মাহমুদুর রহমান। তিনি পূর্ত অডিট অধিদপ্তরের সাবেক সুপারিনটেনডেন্ট। বর্তমানে সেতু ডিজাইন বিভাগ-১-এর বিভাগীয় হিসাবরক্ষক। এ বছরের ২৩ জুন তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক রেজাউল করিম। তিনিই মামলার তদন্ত করছেন।