প্রদর্শনীতে নিজেদের দেখল সেই নক্ষত্র ও তার বাবা

কাজের ফাঁকে ছেলেকে পড়াচ্ছেন বাবা প্রাণেশ। ছবি: জাকিরুল মাজেদ
কাজের ফাঁকে ছেলেকে পড়াচ্ছেন বাবা প্রাণেশ। ছবি: জাকিরুল মাজেদ

ফেসবুকের কল্যাণে রাজধানীর সেগুনবাগিচার ছোট্ট নক্ষত্র ও তার বাবা প্রাণেশ চন্দ্র ঋষিদাসকে এখন অনেকেই চেনেন। প্রাণেশ সেগুনবাগিচার সড়কের একপাশে বসে জুতা পলিশ ও মেরামতের কাজ করেন। তাঁর ছয় বছরের ছেলে নক্ষত্র সেখানকার একটি স্কুলে প্লে শ্রেণিতে পড়ে। স্কুল শেষে বাবার পাশে বসে পড়াশোনা করে সে। জুতা পলিশ করার ফাঁকে ছেলেকে পড়ালেখায় সাহায্যও করেন প্রাণেশ। সেই ছবি ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুক দুনিয়ায়। পরবর্তী সময়ে বেশ কয়েকটি পত্রিকাতেও ছাপা হয় বাবা-ছেলের মর্মস্পর্শী ছবি।

আলোকচিত্রী মো. জাকিরুল মাজেদ ২০১৬ সাল থেকে এই বাবা ও ছেলের ছবি তুলছেন। ২০১৮ সালের বিশ্ব বাবা দিবসে তিনি একটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেন। ছবিটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। গত শনিবার থেকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হওয়া একশনএইড আয়োজিত ‘ভিন্ন রূপে পুরুষ’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রতিযোগিতায় মাজেদের পাঁচটি ছবি স্থান পায়—সব কটিই প্রাণেশ ও নক্ষত্রের ছবি। প্রাণেশ ও নক্ষত্রকে ভুলে যাননি মাজেদ। তিনি গত রোববার প্রাণেশ ও নক্ষত্রকে প্রদর্শনকক্ষে নিয়ে আসেন।

প্রদর্শনীতে স্থান পাওয়া প্রাণেশ ও তাঁর ছেলের ছবি। ছবি: জাকিরুল মাজেদ
প্রদর্শনীতে স্থান পাওয়া প্রাণেশ ও তাঁর ছেলের ছবি। ছবি: জাকিরুল মাজেদ

বাবা-ছেলে প্রদর্শনীতে নিজেদের ছবি দেখতে পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। মাজেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রাণেশ ছবিগুলো দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। প্রাণেশ আমাকে বললেন, “স্যার, আমার ছবি দেখে আমারই কান্না পাচ্ছে।”’ মাজেদ আরও বললেন, ‘যাদের ছবি প্রদর্শিত হলো, তারাই প্রদর্শনী দেখার প্রধান দাবিদার। সেই চিন্তা থেকেই আমি প্রাণেশ ও নক্ষত্রকে গ্যালারিতে নিয়ে যাই। আমি নক্ষত্রকে কোলে করে পুরো গ্যালারি ঘুরেছি।’

প্রাণেশ ২৬ বছর ধরে সেগুন বাগিচায় জুতা পলিশের কাজ করেন। তাঁরা থাকেন মিরপুরে। ছেলে নক্ষত্র পড়ে সেগুনবাগিচা হাইস্কুলে। তিনি প্রতিদিন সকালে ছেলেকে নিয়ে মিরপুর থেকে সেগুনবাগিচায় আসেন। ছেলেকে স্কুলে দিয়ে সারা দিন কাজ করেন। স্কুল ছুটি হলে নক্ষত্র বাবার পাশে বসে পড়ে। তারপর বিকেলে দুজনে বাড়ির দিকে রওনা হন।

আলোকচিত্রী মো. জাকিরুল মাজেদ। ছবি: আবদুস সালাম
আলোকচিত্রী মো. জাকিরুল মাজেদ। ছবি: আবদুস সালাম

প্রাণেশের সঙ্গে ফোনে কথা হলো। তিনি বললেন, ‘প্রদর্শনী অনেক সুন্দর হইসে। তিনি আমাদের অনেক সম্মান দিসেন। কনক ভাই অনেক ভালো মানুষ।’ মাজেদ তাঁদের শুধু প্রদর্শনী দেখার সুযোগই করে দেননি, প্রদর্শনীর জন্য পাওয়া পুরস্কারের অধিকাংশ অর্থমূল্য তিনি প্রাণেশের হাতে তুলে দেন। মাজেদের মতে, ‘এই পুরস্কার প্রাণেশ ও নক্ষত্রেরই প্রাপ্য।’

ফ্রিল্যান্স আলোকচিত্রী জাকিরুল মাজেদের জন্ম ১৯৭৮ সালে, ঢাকায়। তিনি সিদ্ধেশ্বরী বালক উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পড়াশোনা শেষ করেন। বর্তমানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হয়ে বাণিজ্যিক ফটোগ্রাফির কাজ করছেন।

প্রদর্শন কক্ষে জাকিরুল মাজেদের সঙ্গে নক্ষত্র ও প্রাণেশ। ছবি: সংগৃহীত
প্রদর্শন কক্ষে জাকিরুল মাজেদের সঙ্গে নক্ষত্র ও প্রাণেশ। ছবি: সংগৃহীত

স্বীকৃতি হিসেবে দেশের পুরস্কার ছাড়াও দুবার জাপানের আশাহি শিম্বুন আয়োজিত ইন্টারন্যাশনাল ফটোগ্রাফিক স্যালন অব জাপান পুরস্কার, সিয়েনা আন্তর্জাতিক ফটো পুরস্কার, বিশ্বব্যাংকের সিজিএপি ফটো পুরস্কার, নেপালের আইপিএন আন্তর্জাতিক স্যালন পুরস্কার, মারুমি ফটো পুরস্কারসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেছেন।

প্রদর্শনীতে স্থান পাওয়া প্রাণেশ ও তাঁর ছেলের ছবি। ছবি: জাকিরুল মাজেদ
প্রদর্শনীতে স্থান পাওয়া প্রাণেশ ও তাঁর ছেলের ছবি। ছবি: জাকিরুল মাজেদ