জাবি বন্ধের নির্দেশ না মেনে রাস্তায় শিক্ষার্থীরা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা মানছেন না শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার রাত ১১ টা পর্যন্ত ছেলেদের ৮ টি হলের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী হল ছেড়ে যাননি। রাতে ছাত্রীরাও হলের তালা ভেঙে বাইরে বেরিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দিয়েছেন।

তবে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা বেশি হল ছেড়েছেন। এদের বেশির ভাগই বিশ্ববিদ্যালয় আশপাশের মেস ও স্বজনদের বাসায় উঠেছেন। তাঁদের অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হলে থাকার বিষয়ে তাঁরা ছাত্রলীগের হামলা ও পুলিশি হয়রানিকে ভয় করছেন।

এর আগে দুপুরে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা দিয়ে বিকেল সাড়ে পাঁচটার মধ্যে আবাসিক হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী নওশিন নাহার বলেন, ‘আমার বাড়ি বরিশালে। এত কম সময়ের হল ছেড়ে বরিশালে যাওয়া যায় না। রাস্তাঘাটের অবস্থা সম্পর্কেও কিছু জানি না। হঠাৎ কি করব কিছুই বুঝতে পারছি না।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সমাবেশ। রাত ১০ টা, ৫ নভেম্বর, উপাচার্যের বাসভবন সংলগ্ন সড়ক। ছবি: মাইদুল ইসলাম
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সমাবেশ। রাত ১০ টা, ৫ নভেম্বর, উপাচার্যের বাসভবন সংলগ্ন সড়ক। ছবি: মাইদুল ইসলাম

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হল থেকে শিক্ষার্থীরা বের হয়ে আসেন। তারা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকেন। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বর থেকে কোনো বাস ছেড়ে যেতে দেননি। এরপর পরিবহন চত্বরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা। রাত সাড়ে আটটার দিকে সেখান থেকে মিছিল বের হয় তা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হল প্রদক্ষিণ করে।

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা হল, সুফিয়া কামাল হল, প্রীতিলতা হল, জাহানারা ইমাম হল, নওয়াব ফয়জুন্নেছা হলের প্রধান ফটকের প্রশাসনের দেওয়া তালা ভেঙে ফেলেন ছাত্রীরা। রাত সাড়ে ১০ টায় মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবন সংলগ্ন সড়কে গিয়ে শেষ হয়। রাত ১১ টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তারা সেখানে অবস্থান করছেন।

আন্দোলনকারীদের সংগঠক সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাহাথির মোহাম্মদ বলেন, ‘শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনে ভীত হয়ে ছাত্রলীগ দিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালিয়েছেন উপাচার্য ফারজানা ইসলাম। আবার এই হামলার ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে তড়িঘড়ি করে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের নির্দেশ দেয়। আমরা সর্বসম্মতভাবে এই নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করছি।’

এর আগে মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের মিছিল থেকে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ৩০ জন আহত হন। উপাচার্যের বাসভবনের সামনে এই ঘটনা ঘটে।

সোমবার (৪ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাতটা থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষকেরা উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করে রাখেন। যত দিন না উপাচার্যকে অপসারণ করা হবে, তত দিন অবরোধ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা।

মঙ্গলবার (নভেম্বর) বেলা ১১টায় আন্দোলনকারীরা যখন উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছিলেন, তখন উপাচার্যপন্থী শিক্ষকেরা সেখানে যান। তাঁরা আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের তুলে দিয়ে উপাচার্যের বাসভবনে ঢোকার চেষ্টা করেন। তবে আন্দোলনকারীদের বাধার মুখে তাঁরা উপাচার্যের বাসভবনে ঢুকতে পারেননি। এর কিছুক্ষণ পর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ব্যানারবাহী একটি মিছিল সেখানে আসে। ওই মিছিলে দুই শতাধিক নেতা-কর্মী ছিলেন। মিছিল থেকে উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা হয়। হামলার ঘটনার পর এক জরুরি সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: