নিউমোনিয়ায় শিশুমৃত্যুর হার কমেছে দেশে

গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা। তাঁর পাশে মোহাম্মাদ শরীফ (বাঁয়ে) ও এ ই মো. মহিউদ্দিন ওসমানি। গতকাল প্রথম আলো কার্যালয়ে।  প্রথম আলো
গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা। তাঁর পাশে মোহাম্মাদ শরীফ (বাঁয়ে) ও এ ই মো. মহিউদ্দিন ওসমানি। গতকাল প্রথম আলো কার্যালয়ে। প্রথম আলো

পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর বড় কারণ নিউমোনিয়া। দেশে নিউমোনিয়া পরিস্থিতি আগের তুলনায় উন্নতি হলেও ঘণ্টায় একটি শিশু এই রোগে মারা যাচ্ছে। বছর শেষে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ১২ হাজার। অথচ প্রতিরোধ ও চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নতি করে নিউমোনিয়াজনিত মৃত্যু কমিয়ে আনা সম্ভব।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে প্রথম আলো কার্যালয়ে ‘নিউমোনিয়ায় শিশুমৃত্যু রোধে আমাদের করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস সামনে রেখে আয়োজিত গোলটেবিলে ২০১৮ সালে ইউনিসেফের একটি জরিপের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, টিকাদান কর্মসূচির কারণে দেশে নিউমোনিয়া পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। তবে অপুষ্টি, বায়ুদূষণ, চিকিৎসকের কাছে না যাওয়া, চিকিৎসাব্যবস্থায় ঘাটতিসহ নানা কারণে নিউমোনিয়ায় শিশুরা মারা যাচ্ছে।

জনসম্পৃক্ত স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় নিউমোনিয়া অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডাইরেক্টরেট জেনারেল অব হেলথ সার্ভিসেসের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা। তিনি বলেন, প্রসবপূর্ব সেবা নিশ্চিত করতে পারলে অপুষ্টিসহ নানা সমস্যার সমাধান করা যাবে। এতে নিউমোনিয়া প্রতিরোধও সহজ হবে।

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের (প্ল্যানিং উইং) জয়েন্ট চিফ এ ই মো. মহিউদ্দিন ওসমানি বলেন, টিকাদান কর্মসূচি যেভাবে সফল হয়েছে, নিউমোনিয়া নিয়েও সেভাবে কৌশল গ্রহণ করে কাজ করতে হবে। এ জন্য ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও জেলা হাসপাতালকে সম্পৃক্ত করে কাজ করতে হবে।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের (মা ও শিশুস্বাস্থ্য) পরিচালক মোহাম্মদ শরীফ বলেন, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসা জরুরি। সে বিষয়ে মাঠ সেবাদাতাদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি পর্যবেক্ষণেও জোর দেওয়া হচ্ছে। এসব কাজ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে করা হচ্ছে।

নিউমোনিয়া প্রতিরোধে বায়ুদূষণ নিয়ে কাজ করা জরুরি বলে মন্তব্য করেন ইউনিসেফের চিফ অব হেলথ মায়া ভ্যানডেনেন্ট। তিনি বলেন, বায়ুদূষণে শিশুরা সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতে পড়ে। নিউমোনিয়ার অন্যতম কারণ বায়ুদূষণ। ফলে শিশুদের সুরক্ষায় ও নিউমোনিয়া প্রতিরোধে বায়ুদূষণ নিয়ে কাজ করতে হবে।

সাউথ এশিয়ান পেডিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রুহুল আমীন নিউমোনিয়া নিয়ে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এতে তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে (এসডিজি) ১০ বছর সময় আছে। এই লক্ষ্য অর্জনে স্বাস্থ্যবিষয়ক অ্যাজেন্ডায় নিউমোনিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করা ও জাতীয় কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ জরুরি।।

নিউমোনিয়া প্রতিরোধে মায়ের দুধপানের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে বলে উল্লেখ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিওনেটালজি বিভাগের অধ্যাপক আবদুল মান্নান। যথেচ্ছ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার বন্ধ করতে নীতিমালা দরকার বলেও জানান তিনি।

আইসিডিডিআরবির শিশুস্বাস্থ্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান শামস এল আরেফিন বলেন, সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার কমাতে হবে। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের দ্রুত সময়ে হাসপাতালে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা জরুরি।

নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার পরও অর্ধেকের বেশি শিশু স্বীকৃত সেবা প্রতিষ্ঠানে আসে না বলে জানান এনএনএইচপি অ্যান্ড আইএমসিআইয়ের (ট্রেনিং অ্যান্ড চাইল্ড ইনজুরি) ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার সাবিনা আশরাফী। তিনি বলেন, অসচেতনতার কারণে অনেক অভিভাবক শিশুদের নিকটবর্তী ওষুধের দোকান বা হাতুড়ে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। আবার সব হাসপাতালেও প্রয়োজনীয় চিকিৎসার সুবিধা নেই।

আইসিডিডিআরবির সিনিয়র সায়েন্টিস্ট অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল লিড মো. জোবায়ের চিশতি বলেন, নিউমোনিয়ায় আক্রান্তদের মধ্যে অক্সিজেনের ঘাটতি আছে, এমন শিশুদের মৃত্যুঝুঁকি অন্যদের তুলনায় ছয় গুণ বেশি।

ইউনিসেফের এমএনসিএএইচ হেলথ ম্যানেজার জিয়াউল মতিন বলেন, এসডিজি অর্জনে প্রতিরোধ, সুরক্ষা ও চিকিৎসা—এই তিনভাবে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

২০২২ সালের মধ্যে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে বলে উল্লেখ করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এনএনএইচপি অ্যান্ড আইএমসিআইয়ের প্রোগ্রাম ম্যানেজার (ভারপ্রাপ্ত) মো. ইমদাদুল হক।

আইসিডিডিআরবির ম্যাটারনাল অ্যান্ড চাইল্ড হেলথ ডিভিশনের সহযোগী বিজ্ঞানী আহমেদ আহসানুর রহমান বলেন, হাসপাতালের বহির্বিভাগে ও ভর্তি থাকা রোগীর ক্ষেত্রে আলাদাভাবে ব্যবস্থাপনা দরকার।

নিউমোনিয়া প্রতিরোধে কাজের গতি মন্থর হয়েছে বলে উল্লখ করেন সেভ দ্য চিলড্রেনের নিউমোনিয়া সেন্টেনারি কমিটমেন্টের অ্যাডভাইজার সাব্বির আহমেদ।