ডিএনসিসির তিন ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নেই, জনভোগান্তি

কার্যালয় খোলা। তবে কেউ নেই। গতকাল ডিএনসিসির ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের কার্যালয়ে।
কার্যালয় খোলা। তবে কেউ নেই। গতকাল ডিএনসিসির ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের কার্যালয়ে।

গতকাল বেলা দুইটা। কাউন্সিলর কার্যালয়ে নাগরিক সনদ নিতে এসেছেন মোহাম্মদপুরের নূরজাহান রোডের বাসিন্দা আকবর হোসেন। প্রায় দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করেও তিনি কার্যালয়ে কোনো কর্মকর্তাকে পাননি। পরে অনেকটা উৎকণ্ঠা নিয়েই তিনি ফিরে গেছেন। আকবার হোসেনের মতো আরও কয়েকজন বাসিন্দা কাউন্সিলরের কার্যালয়ে নাগরিক সনদ ও ওয়ারিশ সনদ নিতে এসেছিলেন। তাঁরাও কাউকে না পেয়ে নিরাশ হয়ে ফিরে যান।

এই চিত্র ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কার্যালয়ের। এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম ওরফে সেন্টু। স্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর থেকেই তাঁরা কাউন্সিলর শফিকুল ইসলামের দেখা পাচ্ছেন না। মাঝে মাঝে কার্যালয়ে সচিবও আসছেন না। এতে করে বিপাকে পড়েছেন অনেকে।

গতকাল মঙ্গলবার প্রায় দুই ঘণ্টা অপেক্ষার পর মোহাম্মদপুর টাউন হলের পাশের কাউন্সিলর কার্যালয় ছেড়ে যাওয়ার আগে আকবর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, দুই দিন ধরে তিনি কাউন্সিলরের কার্যালয়ে আসছেন। কিন্তু কাউন্সিলরকে পাচ্ছেন না। কাউন্সিলর কোথায় আছেন, তা–ও কেউ বলছেন না। কিন্তু তাঁর সন্তানের নাগরিকত্ব সনদ নেওয়াটা জরুরি।

কাউন্সিলরের বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি দিল মুহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরাও কাউন্সিলরকে এলাকায় দেখছেন না। কাউন্সিলরকে না পেয়ে অনেকেই তাঁদের কাছে আসছেন। নিরুপায় হয়ে নাগরিকদের অনেককে তাঁরা পাশের ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছেন।

গতকাল ডিএনসিসির ৩১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে প্রায় আড়াই ঘণ্টা অবস্থান করে দেখা গেছে, কার্যালয়ে সচিব ও কর্মচারীদের কেউ নেই। ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের অনেকে কার্যালয়ে এসে কাউকে না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। অনেকে ঘণ্টাখানেক অপেক্ষার পর উৎকণ্ঠা নিয়ে কার্যালয় ত্যাগ করছেন।

পরে ওয়ার্ড সচিবের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁর ব্যবহৃত দুটি মোবাইল নম্বরই বন্ধ পাওয়া যায়। তবে এই ওয়ার্ডের মশকনিধনকর্মী জানে আলমের কাছে কাউন্সিলরের অবস্থান জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাউন্সিলর কোথায় আছেন, তা তাঁরা জানেন না।

স্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, কাউন্সিলর যদি অসুস্থ হয়ে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যান, তাহলে অন্য কাউকে দায়িত্ব দিয়ে যাওয়া উচিত ছিল। আর যদি তিনি আত্মগোপনে থাকেন, তাহলে নাগরিকদের ভোগান্তি এড়াতে করপোরেশনের উচিত যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া।

জানতে চাইলে ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, পরপর তিনটি সভায় অনুপস্থিত থাকায় কারণ জানতে চেয়ে শফিকুল ইসলামকে করপোরেশন থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠির জবাবে তিনি জানিয়েছেন, অসুস্থতাজনিত কারণে সিঙ্গাপুরে আছেন। যেহেতু দীর্ঘদিন ধরে তিনি অনুপস্থিত, তাই এই এলাকায় করপোরেশনের একজন মহিলা প্যানেল মেয়রকে দায়িত্ব দেওয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এ–সংক্রান্ত একটি চিঠি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে গত ১৯ অক্টোবর ডিএনসিসির ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীবকে আটকের পর ওই ওয়ার্ডের নাগরিকেরাও একই রকম ভোগান্তিতে পড়েছেন। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর থেকেই পলাতক ছিলেন এই কাউন্সিলর। ফলে গত সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ থেকেই ওয়ার্ডের বাসিন্দারা কাউন্সিলরের কাছে থেকে নাগরিক সনদ এবং ওয়ারিশ সনদ নিতে পারছেন না।

এ ছাড়া গত ১১ অক্টোবর ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান ওরফে মিজানকে আটক করে র‍্যাব। কাউন্সিলরকে আটকের পর এই ওয়ার্ডেও একই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

ডিএনসিসি সূত্র বলছে, ৪ নভেম্বর ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নুরুল ইসলামকে ৩২ ও ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দুটি ওয়ার্ডে নাগরিক সেবা সচল রাখতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ২৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয় মোহাম্মদপুরের রিং রোডে সূচনা কমিউনিটি সেন্টারে।

গতকাল বেলা তিনটার দিকে সূচনা কমিউনিটি সেন্টারে গিয়ে দেখা গেছে, কাউন্সিলর নুরুল ইসলামের কার্যালয়ে প্রবেশের সব ফটকেই তালা ঝুলছে। কমিউনিটি সেন্টারের কয়েকজন কর্মচারী জানালেন, বেলা দুইটার দিকে কাউন্সিলর বের হয়ে গেছেন।

বেলা সাড়ে তিনটার দিকে নাগরিক সনদ নিতে সূচনা কমিউনিটি সেন্টারে এসেছিলেন জহুরী মহল্লার বাসিন্দা হাসনা বেগম। কাউন্সিলরকে না পেয়ে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, বেলা দুইটায় অফিস বন্ধ করে দেওয়াটা উচিত না। কাউন্সিলর না থাকলেও অন্য কর্মকর্তা–কর্মচারীদের কার্যালয়ে থাকা উচিত।

পরে কাউন্সিলর নুরুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দুপুরে বের হয়ে তিনি একটি সভায় অংশ নিয়েছেন। তবে সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত তিনি নিয়মিত অফিসে বসেন। আরও দুটি ওয়ার্ডে বাড়তি দায়িত্ব দেওয়ার কারণে আজ বুধবার থেকে তিনি অফিসের সময় বাড়াবেন বলেও জানান।