গলিতে খোঁড়াখুঁড়ি, প্রধান সড়কে পরিত্যক্ত সামগ্রী

পুলিশ বক্সের কাছে সড়কের ওপর দুমাস ধরে এসব পাইপ ফেলে রাখা হয়েছে। গত সোমবার বিকেলে রাজধানীর আরামবাগ এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
পুলিশ বক্সের কাছে সড়কের ওপর দুমাস ধরে এসব পাইপ ফেলে রাখা হয়েছে। গত সোমবার বিকেলে রাজধানীর আরামবাগ এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

গভীর নর্দমার পাইপ বসানোর জন্য আরামবাগ পুলিশ বক্সের বিপরীত দিকের গলির ভেতরে খোঁড়াখুঁড়ি হচ্ছে। আর খুঁড়ে তোলা মাটি, ভাঙা পাথর আর পরিত্যক্ত নির্মাণসামগ্রী এলোপাতাড়িভাবে রাখা হচ্ছে আরামবাগ প্রধান সড়কের ওপর। এই প্রধান সড়কেই প্রায় দুই মাস ধরে ফেলে রাখা হয়েছে সাড়ে পাঁচ ফুট ব্যাসের পাইপ। এখন এই পাইপ আর পরিত্যক্ত সামগ্রীর কারণে ১০০ ফুট প্রস্থের প্রধান সড়ক হয়ে গেছে প্রায় অর্ধেক। ফলে এলাকায় প্রতিনিয়তই তীব্র যানজট গেলে যাচ্ছে।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে এলাকায় গিয়ে এই দৃশ্য দেখা যায়। প্রধান সড়কে রিকশা, ব্যক্তিগত গাড়ি, বাসসহ বিভিন্ন যানবাহন প্রায় স্থবির হয়ে আছে। যাত্রী-আরোহীদের দুর্ভোগ চরমে। রিকশাযাত্রী আবদুস সামাদ জোরের সঙ্গেই স্বগতোক্তি করেন, ‘খোঁড়াখুঁড়ি করেই সব শেষ করে দিল। কতক্ষণ বসে থাকতে হবে কে জানে।’ বলাকা পরিবহনের চালকের সহকারী চিৎকার দেন—‘গাজীপুর পোঁছাইতে রাইত অইব।’ এর মধ্যেই ছুটি হলো নটর ডেম কলেজ। ছাত্রদের অনেকেই আরামবাগ গলিতে ম্যাচে থাকে। প্রধান সড়ক থেকে গলিতে ঢুকতে গিয়ে তারা পড়ে বিড়ম্বনায়। এলাকার একজন দোকানি পি কে শর্মা বলেন, সকালে নটর ডেম কলেজ শুরুর সময়ে, দুপুরে বিরতিতে এবং বিকেলে ছুটির পর পুরো আরামবাগ স্থবির হয়ে পড়ে।

জানা যায়, নটর ডেম কলেজের পার্শ্ববর্তী এই স্থানে দুই দিন আগে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়েছে। কাজটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ‘সড়ক-ফুটপাত-নর্দমা উন্নয়ন’ প্রকল্পের। একই প্রকল্পে চলতি বছরের শুরুতে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন সড়কে এবং নগরীর আরও কিছু স্থানে এ ধরনের খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়। প্রকল্পের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৭৭৪ কোটি টাকা। এগুলোর মধ্যে গত মে মাস থেকে বাস্তবে কাজ হয়েছে প্রধানত দিলকুশা, কমলাপুর এলাকায়।

আরামবাগ গলিতে গিয়ে দেখা যায়, ২০ ফুট সড়কের এক–তৃতীয়াংশ দখল করে সিসি পাইপ রাখা হয়েছে। বাকি অংশে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। যানবাহন দূরে থাক, পথচারীদের পক্ষেও চলাচল প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এলাকাবাসী ও দোকানিরা জানান, গলির ভেতরে পাইপগুলো জড়ো করা হয়েছিল ১৫ দিন আগে। তারপর থেকেই এলাকায় হইহল্লা লেগেই ছিল। পাইপ রাখার কারণে দুই দিকের যানবাহন একসঙ্গে চলতে পারেনি। আগে যাওয়ার তাগিদে রিকশাচালকদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা পর্যন্ত ঘটে। আর এখন তো চলাচলই করা যাচ্ছে না।

স্থানীয় ‘ক্যাশ অ্যান্ড কেরি’ নামের একটি দোকানের কর্মচারী বলেন, গলির মুখে প্রধান সড়কে দুই মাসেরও বেশি সময় মোটা পাইপ রাখার কারণে এমনিতেই যানজট হচ্ছিল। গত দুই দিন এখানে গলির ভেতরের খোঁড়া মাটি ও পরিত্যক্ত সামগ্রী রাখায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।

এলাকায় ওয়ার্ড কাউন্সিলর এ কে এম মমিনুল হক ক্যাসিনো–কাণ্ডে বরখাস্ত। তা ছাড়া আগে থেকেই তিনি দীর্ঘদিন বিদেশে অবস্থান করছেন। স্থানীয় একটি দোকানের কর্মী আবদুর সবুর ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, এলাকায় কাউন্সিলর নেই। তাঁর অনুপস্থিতিতে সিটি করপোরেশনের কেউ এসে একটু দেখভালও করেন না।

এ বিষয়ে জানতে প্রকল্পের পরিচালক ও ডিএসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। অপর একজন প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে, তা এখন পর্যন্ত ঠিক করা যায়নি।

এদিকে কমলাপুর, দিলকুশা, মতিঝিল এজিবি কলোনিসহ আশপাশের এলাকায় পাইপ বসানোর কাজ শেষ হলেও খোঁড়া সড়কগুলো এখনো মেরামত করা হয়নি। এখন কাজ চলছে মতিঝিল বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে, ফকিরাপুল বাজারের ভেতরের অংশে। আবার নটর ডেম, আরামবাগ প্রধান সড়ক থেকে একদিকে ফকিরাপুল পর্যন্ত, অন্যদিকে টিঅ্যান্ডটি ও পোস্ট অফিস স্কুল হয়ে রাজারবাগ পর্যন্ত এলাকায় সাড়ে পাঁচ ফুট ব্যাসের পাইপ দুই মাসের বেশি সময় ধরে ফেলে রাখা হয়েছে।