রাজশাহীতে জনতার বাধায় গাছ কাটা বন্ধ

এলাকাবাসীর প্রতিবাদ শুরুর আগেই কয়েকটি গাছের ডাল কেটে ফেলেন সিটি করপোরেশনের শ্রমিকেরা। গতকাল রাজশাহী নগরীর দরগাপাড়ার পদ্মা গার্ডেন এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
এলাকাবাসীর প্রতিবাদ শুরুর আগেই কয়েকটি গাছের ডাল কেটে ফেলেন সিটি করপোরেশনের শ্রমিকেরা। গতকাল রাজশাহী নগরীর দরগাপাড়ার পদ্মা গার্ডেন এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

গাছগুলো ঘিরে স্থানীয় ব্যক্তিদের যাবতীয় কর্মযজ্ঞ। দিনভর ছায়ার সঙ্গে দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ তো আছেই, এর ওপর গাছকে কেন্দ্র করে আশপাশের মানুষের বিনোদনের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। কিন্তু গতকাল মঙ্গলবার রাজশাহী নগরীর ৯ নম্বর ওয়ার্ডের দরগাপাড়া এলাকার বাসিন্দারা দেখলেন ভিন্ন চিত্র। বর্জ্য রাখার জন্য সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) তৈরি করতে কেটে ফেলা হচ্ছে গাছ।

সিটি করপোরেশনের লোকদের গাছ কাটার এ খবর মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। ততক্ষণে তিনটি গাছের ডাল কেটে ফেলা হয়েছে। পুরোপুরি কেটে ফেলতে গাছের গোড়ায় কুড়াল বসানো হয়েছিল। এর মধ্যেই ঘটনাস্থলে জড়ো হন ১৫ থেকে ২০ জন স্থানীয় বাসিন্দা। তাঁরা গাছ কাটতে বাধা দেন। কাউন্সিলর ও সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র এলেও স্থানীয়দের প্রতিবাদের মুখে শেষ পর্যন্ত গাছ কাটা স্থগিত রাখা হয়।

দরগাপাড়া এলাকায় পদ্মা নদীর ধারে ওই এসটিএস তৈরি করতে পাঁচটি গাছ কাটার পরিকল্পনা ছিল সিটি করপোরেশনের। এই গাছগুলো কড়ই ও পিটালি। স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, সারা দিনই বিনোদনপিপাসু মানুষের ভিড় লেগে থাকে এখানে। এর পাশে আছে পদ্মা গার্ডেন নামের একটি বিনোদনকেন্দ্র ও নরওয়ের সাংবাদিক মুনসগার্ডের নামে পার্ক। এই দুটি বিনোদনকেন্দ্রের মানুষই ঘুরতে এসে গাছের নিচে বসেন।

মোহাম্মদ মানিক নামের স্থানীয় এক যুবক বলেন, দিনের খুব কম সময়ই এই এলাকায় মানুষের আনাগোনা বন্ধ থাকে। তাই এখানে গাছ কেটে বর্জ্য রাখার ঘর করার উদ্যোগ কেউ মেনে নিতে পারেননি। শাহীন আলী (৫৫) নামের আরেকজন বলেন, এই এলাকার পাশের দরগা শরিফে ওরসের সময় অনেক মানুষের সমাগম ঘটে। তাঁরা এই গাছগুলোর তলায় সময় কাটান। মানুষের সমাগমের কারণে ভ্রাম্যমাণ কিছু খাবারের দোকানও বসে প্রতিদিন।

গতকাল দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেজাউন্নবী এবং প্যানেল মেয়র-১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সরিফুল ইসলাম স্থানীয়দের বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু তাঁদের কথায় সাড়া না দিয়ে স্থানীয় ব্যক্তিরা গাছ সংরক্ষণের দাবি জানান। পরে কাজ বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়ে চলে যান দুই কাউন্সিলর।

প্যানেল মেয়র-১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সরিফুল ইসলাম বলেন, এলাকার কিছু যুবক শুধু বর্জ্যের দুর্গন্ধের কথা ভেবে কাজে বাধা দিয়েছেন।

সরিফুল ইলসাম বলেন, এখন বিষয়টি সিটি করপোরেশনের মেয়রকে জানানো হবে। তবে তিনি যদি না চান, তাহলে এই জায়গায় এসটিএস নির্মাণ করা হবে না।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক বলেন, বড়কুঠি এলাকায় মুনসগার্ড পার্কের সামনে বর্জ্যের একটি স্টেশন আছে। কিন্তু এটি নিয়ে প্রায়ই মানুষ আপত্তি শুনতে হয়। তাই সেটি দরগাপাড়ায় সরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সবার ভালোর জন্যই এ কাজ করা হচ্ছে।