কাউন্সিলর মিজানের শতকোটি টাকার অবৈধ সম্পদ

হাবিবুর রহমান ওরফে মিজান। প্রথম আলো ফাইল ছবি
হাবিবুর রহমান ওরফে মিজান। প্রথম আলো ফাইল ছবি

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজানের শতকোটি টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তবে সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে ৩০ কোটি ১৬ লাখ ৮৭ হাজার ৩৩১ টাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের। তার ওপর ভিত্তি করে মিজানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে সংস্থাটি।

আজ বুধবার হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান। সাম্প্রতিক শুদ্ধি অভিযানের ধারাবাহিকতায় অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এ পর্যন্ত ১১টি মামলা হলো। দুদকের মুখপাত্র প্রণব কুমার ভট্টাচার্য মামলার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, মিজান ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধসংলগ্ন বছিলা সড়কের হাবিব প্লাজার ৩০ কাঠা জমি দখল করে মার্কেট তৈরি করেছেন। ওই জায়গায় প্রায় ৪৮২ কাঠা জমি আছে, যা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মিজানের দখলে। তিনি এই জায়গা দখল করে প্রায় ২০টি টিনের চালাবিশিষ্ট দোকান তুলেছেন। নিজস্ব লোক দিয়ে ওই সব দোকানের ভাড়া তোলেন।

মিজান লালমাটিয়া বি ব্লকে সরকারি জমি অবৈধভাবে দখল করে সেখানে স্বপ্নপুরি হাউজিং গড়ে তোলেন। লালমাটিয়ায় ১০ কাঠা জমির ওপর পপুলার অর্কিড নামে ছয়তলা ভবন নির্মাণ করেছেন, যেখানে তাঁর বিনিয়োগ প্রায় ৬ কোটি টাকা। লালমাটিয়ায় আরেকটি ১০ কাঠার প্লটে ইমপেরিয়াল গার্ডেন নামে ছয়তলা ভবন নির্মাণ করেছেন, যাতে তাঁর বিনিয়োগ প্রায় ৬ কোটি টাকা। লালমাটিয়ার আরেকটি ১০ কাঠা জমিতে দুই ইউনিটবিশিষ্ট প্রায় ছয়তলায় বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাট নির্মাণ করেছেন, যাতে মিজানের বিনিয়োগ প্রায় ৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া স্বপ্নপুরি হাউজিং কমপ্লেক্সের পাশে ১৫ কাঠা জমির ওপর আড়ং মার্ট নামে একটি সাততলা ভবন নির্মাণাধীন।

অনুসন্ধানের সময় রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দুদক দেখেছে, আয়কর নথির তথ্য অনুযায়ী মোহাম্মদপুরে মিজানের ১ হাজার ৩৫০ বর্গফুটের চারটি ফ্ল্যাট আছে, যার দাম প্রায় দুই কোটি টাকা। এসব সম্পদ অর্জনে তাঁর সুনির্দিষ্ট কোনো উৎস পায়নি দুদক। এ ছাড়া গোপন সূত্রে দুদক জেনেছে, মিজান ক্যাসিনো ব্যবসাসহ অবৈধভাবে এসব সম্পদ অর্জন করেছেন। অবৈধ উপায়ে অর্জিত এসব অর্থ দিয়ে তিনি দেশের বিভিন্ন জায়গায় ফ্ল্যাট, নামে-বেনামে একাধিক প্লট-বাড়িসহ শতাধিক কোটির টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন। দুদক বলছে, মামলার তদন্তের সময় এসব বিষয়ে প্রমাণ সংগ্রহ করে আইনের আওতায় আনা হবে।

চলমান শুদ্ধি অভিযানে গত ১১ অক্টোবর সিলেটের শ্রীমঙ্গল থেকে র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন হাবিবুর রহমান। তাঁর বিরুদ্ধে অর্থ পাচার ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা করা হয়। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এর আগে ঠিকাদার জি কে শামীম, বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, আওয়ামী লীগের নেতা এনামুল হক এনু ও তাঁর ভাই রুপন ভূঁইয়া, অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধান, বিসিবি পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, কলাবাগান ক্লাবের সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজ, যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক আনিসুর রহমান, তাঁর স্ত্রী সুমি রহমান এবং কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীবের বিরুদ্ধে ১০টি আলাদা মামলা করেছে দুদক।