যুগ্ম সচিব দায় এড়াতে পারেন না: তদন্ত প্রতিবেদন

তিতাস ঘোষ। ছবি: সংগৃহীত
তিতাস ঘোষ। ছবি: সংগৃহীত

যুগ্ম সচিব আব্দুস সবুর মণ্ডলকে পারাপারের জন্যই ফেরিঘাটে কুমিল্লা ফেরিকে অপেক্ষমাণ রাখা হয়েছিল। তাই এ ক্ষেত্রে তিনি দায়ভার এড়াতে পারেন না। মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটে দেরিতে ফেরি ছাড়ায় অ্যাম্বুলেন্সে থাকা স্কুলছাত্র তিতাস ঘোষের মৃত্যুর ঘটনায় নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে এমন তথ্য এসেছে।

অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে আজ বুধবার ওই প্রতিবেদনটি পৌঁছে। যুগ্ম সচিবকে সরাসরি দায়ী না করা যায় না উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, বিলম্বে ফেরি ঘাটে উপস্থিত হওয়া এবং তাঁর (যুগ্ম সচিব) জন্যই ফেরি অপেক্ষমাণ রাখায় এ ক্ষেত্রে তাঁরও দায়বদ্ধতা রয়েছে।

বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে আগামীকাল বৃহস্পতিবার প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।

ভিআইপির অপেক্ষায় ফেরি বসে থাকায় অ্যাম্বুলেন্সে থাকা তিতাসের মৃত্যু  হয় গত ২৫ জুলাই। তিতাসের মৃত্যুতে তদন্ত ও ক্ষতিপূরণ চেয়ে লিগ্যাল সাপোর্ট অ্যান্ড পিপলস রাইটসের চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জহির উদ্দিন হাইকোর্টে রিট করেন। এর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ৩১ জুলাই হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। অতিরিক্ত সচিবের নিচে নন-এমন পদমর্যাদার কর্মকর্তার নেতৃত্বে ঘটনা তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

এর ধারাবাহিকতায় গত ২৩ অক্টোবর ওই ঘটনা তদন্তে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। এই প্রতিবেদনে ফেরি বিলম্ব ছাড়ায় দায়িত্বরত ফেরি ঘাটের তিন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দায়ী করে তদন্ত কমিটি। তবে দেরিতে ফেরি ছাড়ায় যুগ্ম সচিবের দোষ পায়নি কমিটি।

সেদিন রিট আবেদনকারীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় ও মাদারীপুরের জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে গঠিত পৃথক তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ৭ নভেম্বরের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দেন। এ অনুসারে আজ নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদন অ্যাটর্নি জেনারেল পৌঁছে। তবে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি হলেও, তা এগোয়নি বলে জানান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদন বলা হয়, প্রায় তিন ঘণ্টা কুমিল্লা ফেরি কাঁঠালবাড়ি ঘাটে অপেক্ষা করানোর জন্য ফেরি ঘাটের ব্যবস্থাপক আব্দুস সালাম, ঘাটে কর্মরত উচ্চমান সহকারী ফিরোজ আলম, প্রান্তিক সহকারী খোকন ও ইনল্যান্ড মাস্টার সামছুল আলম মূল দায়ী।

প্রতিবেদনের ভাষ্য, এ ছাড়া যুগ্ম সচিব আব্দুস সবুর মণ্ডলকে ঘাট পারাপার করার জন্য অ্যাম্বুলেন্সটি দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে রাখা হয়েছিল। যদিও তিনি ফেরি আটকিয়ে রাখা কিংবা ফেরিতে অপেক্ষমাণ অ্যাম্বুলেন্সে মুমূর্ষু রোগীর কথা জানতেন না। তবুও যেহেতু তার সঙ্গে বারবার কথা বলার কারণে তাকে পার করার জন্য ফেরি ব্যবস্থাপকের একটা দায়বদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছিল এবং তিনি নির্ধারিত সময়ের চেয়ে অনেক পরে ঘাটে পৌঁছেছেন। তাকে পারাপারের জন্যই ফেরিকে অপেক্ষমাণ রেখেছিলেন। তাই এ ক্ষেত্রে তিনি দায়ভার এড়াতে পারেন না। আরও বলা হয়, যেহেতু তিনি অ্যাম্বুলেন্সের কথা, ফেরি আটকানোর কথা জানতেন না তাই এ বিষয়ে তাকে সরাসরি দায়ী করা যায় না। তবে তিনি ঘাট ব্যবস্থাপককে দীর্ঘক্ষণ আগে থেকে পারাপারের জন্য বার্তা দিয়ে তার সঙ্গে বারবার ফোনালাপের মাধ্যমে একটা দায়ভার সৃষ্টি করেছিলেন। সর্বোপরি বিলম্বে ফেরি ঘাটে উপস্থিত হওয়া এবং তার জন্যই ফেরি অপেক্ষমাণ রাখায় এ ক্ষেত্রে তারও দায়বদ্ধতা রয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে ৭ দফা সুপারিশ রয়েছে প্রতিবেদনে।