উপজেলা-ইউপিতে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর আসন দরকার: মেনন

‘বাংলাদেশের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বৃদ্ধি’ শীর্ষক কর্মশালায় বক্তব্য দেন সাংসদ রাশেদ খান মেনন। ছবি: প্রথম আলো
‘বাংলাদেশের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বৃদ্ধি’ শীর্ষক কর্মশালায় বক্তব্য দেন সাংসদ রাশেদ খান মেনন। ছবি: প্রথম আলো

ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী–অধ্যুষিত এলাকার উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) এসব জাতির মানুষের জন্য আসন সংরক্ষণের দাবি করেছেন সাংসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। তিনি বলেছেন, এ জন্য সংবিধান সংশোধনের কোনো দরকার নেই। শুধু উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ আইনের সংশোধন করেই এটা করা সম্ভব।

‘বাংলাদেশের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বৃদ্ধি’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এই দাবি করেন মেনন। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ডেইলি স্টারের আজিমুর রহমান কনফারেন্স হলে এই আলোচনা সভা হয়। বেসরকারি সংগঠন ইনডিজেনাস পিপলস ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসেস (আইপিডিএস) এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।

আজকের আলোচনা সভায় মূলত দেশের সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকারের বিষয়টি আলোচিত হয়। মেনন বলেন, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের রাজনৈতিক অংশগ্রহণের হার খুবই কম। তাদের মনোজগতে এক ধরনের দুর্বলতা আছে। এই দুর্বলতা দূর করতে হবে। শুধু দুঃখবোধ নিয়ে থাকলে হবে না। তাদের মূলধারার রাজনীতিতে অংশ নিতে হবে।

রাশেদ খান মেনন বলেন, ভূমি সমস্যা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের বড় সমস্যা। এসব জাতির মানুষের ওপর পাহাড় ও সমতলে যত নিগ্রহ হয়, তার বেশির ভাগ ঘটনার মূলে আছে ভূমি। পাহাড়ে ভূমি কমিশন খুব কার্যকর ভূমিকা পালন না করলেও তা আছে। কিন্তু সমতলে তা–ও নেই।

মেনন সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের ভূমি সমস্যার সমাধানে একটি পৃথক ভূমি কমিশন গঠনের তাগিদ দেন।

আজকের অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস। তিনি বলেন, ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি আমলে কোনো অঞ্চলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জনসংখ্যা বেশি ছিল। সে সময় এসব জাতির মধ্য থেকে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতো। কিন্তু এখন দেশের সমতল অঞ্চল যেমন বৃহত্তর ময়মনসিংহ, উত্তরবঙ্গ ও সিলেট অঞ্চলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষ সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে।

রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, চলমান রাজনৈতিক ধারা ও নির্বাচনব্যবস্থায় সমতল অঞ্চলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের পক্ষে নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নাগরিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য অবশ্যই বিশেষ আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।

ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করতে পাঁচ দফা সুপারিশ তুলে ধরেন অধ্যাপক রোবায়েত। এর মধ্যে অন্যতম হলো জাতীয় সংসদে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর আসন সংরক্ষিত করা, ৫০ নারী আসনের মধ্যে ৫টি এসব জাতির নারীর জন্য সংরক্ষণ, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী–অধ্যুষিত এলাকার জেলা পরিষদে তাদের জন্য একটি ভাইস চেয়ারম্যানের পদ সংরক্ষণ, উপজেলা পরিষদে ভাইস চেয়ারম্যানের পদ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নারীর জন্য সংরক্ষণ। সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য একটি পৃথক মন্ত্রণালয় গঠনেরও দাবি করেন তিনি।

আজকের অনুষ্ঠানের সভাপতি আইপিডিএসের সভাপতি সঞ্জীব দ্রং বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয়, আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদ, উন্নয়ন বোর্ডসহ সাত থেকে আটটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান আছে। অথচ সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের জন্য একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান নেই।

আজকের অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা, এ কে এম ফজলুল হক, টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ও গারো নেত্রী যষ্টিনা নকরেক, ইউজিন নকরেক, সুলেখা ম্রং প্রমুখ।