জাহালমকে আসা-যাওয়ার খরচ দেবেন: আদালত

জাহালম আদালতে হাজির ছিলেন। ছবি: প্রথম আলো
জাহালম আদালতে হাজির ছিলেন। ছবি: প্রথম আলো

বিনা দোষে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় তিন বছর কারাভোগ করা জাহালম এখন কী করছেন, কীভাবে তাঁর দিন কাটছে তা জেনেছেন হাইকোর্ট।

জাহালম হাইকোর্টকে গতকাল বলেন, জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর থেকে তিনি নরসিংদীর জুট মিলের শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। শুনানির দিনে ছুটি নিয়ে তিনি আদালতে আসেন।

শুনানির একপর্যায়ে হাইকোর্ট দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খানের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘জাহালম এত দিন ধরে আদালতে আসছেন, ঘুরছেন। অনেক দিন হয়ে গেল। জাহালমের আদালতে আসা-যাওয়ার খরচ দিয়ে দেন।’
জবাবে খুরশীদ আলম আদালতকে বলেন, ‘আমাদের কোনো আপত্তি নেই।’

বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে আগামী ২১ নভেম্বর পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করেছেন।

বৃহস্পতিবার শুনানির শুরুতে সোনালী ব্যাংকের আইনজীবী জাকির খান আদালতের কাছে দাবি করেন, সোনালী ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা জাহালমকে শনাক্ত করেনি। দুদক আবু সালেকের বদলে জাহালমকে আসামি করেছে। জাহালমের আসামি করার ক্ষেত্রে সোনালী ব্যাংকের কোনো দায় নেই। মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার কারণে সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের দেওয়া শাস্তি মওকুফ করে দেওয়া হয়।
সোনালী ব্যাংকের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার মামলা সংক্রান্ত আরও কাগজপত্র আদালতের কাছে জমা দেওয়া হয়।

এরপর দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সোনালী ব্যাংকের দেওয়া কাগজপত্রের তথ্য আদালতকে পড়ে শোনান।
শুনানির একপর্যায়ে আদালত দুদকের আইনজীবীর উদ্দেশ্যে বলেন, দুদকের মতো একটা স্বাধীন নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠানের তদন্তে এমন ভুল কীভাবে হয়? জাহালমকে শনাক্ত করার ক্ষেত্রে সোনালী ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তার ভূমিকা ছিল কী না, সে বিষয়টি তুলে ধরেন।

তখন খুরশীদ আলম খান ফের সোনালী ব্যাংকের জমা দেওয়া কাগজপত্র থেকে পড়ে শোনাতে থাকেন। একপর্যায়ে আদালত খুরশীদ আলম খানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনি লিখিত জবাব দেবেন। আপনি অনেক সময় পেয়েছেন। আপনার যুক্তিতর্কের মূল বিষয়বস্তু বুলেট আকারে জমা দেবেন। সোনালী ব্যাংক তাদের কর্মকর্তাদের অব্যাহতি দিল, আপনারা কী পদক্ষেপ নিয়েছেন। আপনারা কেন আপিল করলেন না?’

দুদকের আইনজীবীর উদ্দেশ্যে আদালত আরও বলেন, দুদক সম্পর্কে আমাদের উচ্চ ধারণা পোষণ করি। আইনে তাদের অনেক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতি হচ্ছে যোগসাজশের মাধ্যমে। ব্যাংকসহ সব জায়গায় দুর্নীতি হচ্ছে।

জাহালমের কারাভোগ নিয়ে প্রথম আলোয় ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারি ‘৩৩ মামলায় ভুল আসামি জেলে, স্যার, আমি জাহালম, সালেক না…’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় । প্রকাশিত এই প্রতিবেদনটি আমলে নিয়ে গত ৩ ফেব্রুয়ারি সব মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে জাহালমকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। জাহালমের কারাভোগের জন্য যারা দায়ী, তাদের খুঁজে বের করতেও নির্দেশ দেন আদালত। আদালতের আদেশে ১ হাজার ৯২ দিন পর ছাড়া পান জাহালম।

গত ২১ আগস্ট দুদক হাইকোর্টে আরেক প্রতিবেদন দিয়ে জানায়, জাহালমের কারাভোগের ঘটনায় তদন্ত প্রক্রিয়ায় জড়িত দুদকের ১১ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করেছে দুদক।

জাহালম প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাকরি করতাম নরসিংদীর ঘোড়াশালে বাংলাদেশ জুট মিলে । বিনা দোষে আমাকে তিন বছর জেল খাটতে হলো। ছাড়া পাওয়ার পর চাকরি আবার ফিরে পেয়েছি কিন্তু দুই মাস ধরে বেতন পাচ্ছি না। ধারদেনা করে সংসার চালাতে হচ্ছে। আমি ক্ষতিপূরণ চাই।’