পঞ্চগড়ে বাস-অটোরিকশার সংঘর্ষে দুই দম্পতিসহ নিহত ৭

বাস ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে দুমড়েমুচড়ে যায় অটোরিকশাটি। আমতলা, পঞ্চগড়, ৮ নভেম্বর। ছবি: রাজিউর রহমান
বাস ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে দুমড়েমুচড়ে যায় অটোরিকশাটি। আমতলা, পঞ্চগড়, ৮ নভেম্বর। ছবি: রাজিউর রহমান

পঞ্চগড় সদর উপজেলায় বাস ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সংঘর্ষে দুই দম্পতিসহ সাতজন নিহত হয়েছেন। আজ শুক্রবার বেলা দেড়টার দিকে উপজেলার আমতলা এলাকায় পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত ব্যক্তিরা সবাই অটোরিকশার চালক ও যাত্রী। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজন নারী, চারজন পুরুষ। দুর্ঘটনাস্থলেই পাঁচজন মারা যান। বাসের ভেতরে ঢুকে যাওয়া বিধ্বস্ত অটোরিকশা থেকে পাঁচজনের লাশ বের করেন পঞ্চগড় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা। সেই সঙ্গে আহত দুজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে একজন এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় অপরজন মারা যান।

নিহত ব্যক্তিরা হলেন জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার শালবাহান ইউনিয়নের মাঝিপাড়া এলাকার লাবু ইসলাম (২৭), তাঁর নববিবাহিত স্ত্রী মুক্তি বেগম (১৯), পঞ্চগড় সদর ইউনিয়নের সুরিভিটা এলাকার আকবর আলী (৭০), তাঁর স্ত্রী নুরিমা বেগম (৫৭), সাতমেরা ইউনিয়নের চেকরমারী এলাকার বাসিন্দা ও অটোরিকশাচালক রফিকুল ইসলাম (৪০), একই ইউনিয়নের রায়পাড়া এলাকার মাগুদ (৪৩) ও সাহেবজোত এলাকার আকবর আলীর স্ত্রী নার্গিস (৪২)।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পঞ্চগড় থেকে তেঁতুলিয়াগামী কাজী পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে দুর্ঘটনাটি ঘটে। দুর্ঘটনার পর থেকে বাসের চালক পলাতক রয়েছেন। অটোরিকশাটি দুমড়েমুচড়ে বাসের ভেতরে ঢুকে যায়। পরে লাশ বের করা হয়। ঘটনাস্থলেই পাঁচজন নিহত হন। পরে স্থানীয় লোকজন আকবর আলী ও মুক্তি বেগমকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালে নেওয়ার পথে মুক্তি বেগমের মৃত্যু হয় এবং পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আকবর আলীও মারা যান।

খবর পেয়ে পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলীসহ জেলা প্রশাসন ও পুলিশের অন্য কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। এ সময় উত্তেজিত জনতার তোপের মুখে পড়েন তাঁরা। ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ লোকজন বেলা দুইটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। ওই এলাকায় হাইওয়ে পুলিশ গাড়ি ও অটোরিকশা থামিয়ে চাঁদা আদায় করে বলেও স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেন।

পঞ্চগড় ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা নিরঞ্জন সরকার বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আমরা পাঁচটি লাশ উদ্ধার করেছি।’ এদিকে পঞ্চগড় সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সিরাজদ্দৌলা পলিন প্রথম আলোকে বলেন, দুর্ঘটনার পর হাসপাতালে আনা দুজন আহত ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।

সাতজন নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী বলেন, ‘ঘটনার পর জেলা প্রশাসকসহ আমরা ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে বিক্ষুব্ধ লোকজন প্রায় দুই ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। পরে তাঁদের অভিযোগের বিষয়ে আশ্বস্ত করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হয়। নিহত ব্যক্তিদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।’

এ ঘটনায় পঞ্চগড় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) রেহানুল হককে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।