তুফান সরকারসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন

তুফান সরকার। ফাইল ছবি
তুফান সরকার। ফাইল ছবি

বগুড়ায় ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় মা-মেয়েকে নির্যাতনের পর মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ায় দায়ের হওয়া মামলায় ১২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন (চার্জ গঠন) করেছেন আদালত। অভিযোগপত্র দাখিলের দুই বছর পর অভিযোগ গঠন করা হলো। গতকাল বৃহস্পতিবার বগুড়ার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আহমেদ শাহরিয়ার তারিকের আদালত এই অভিযোগ গঠন করেন। অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে কার্যত আলোচিত এই মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরু হলো বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে, তাঁরা হলেন মামলার প্রধান আসামি তুফান সরকার, বগুড়া পৌরসভার কাউন্সিলর ও তুফান সরকারের স্ত্রীর বড় বোন মার্জিয়া হাসান, তুফানের স্ত্রী তাছমিন রহমান ওরফে আশা (২০), আশার মা লাভলী রহমান ওরফে রুমি (৪৫), তুফানের সহযোগী মো. আতিকুর রহমান ওরফে আতিক (২৫), মুন্না (২৪), আলী আযম দীপু (২৫), মেহেদী হাসান ওরফে রুপম (২৬), সামিউল হক ওরফে শিমুল (২৫) ও এমারত আলম খান ওরফে জিতু (২৩), তুফানের প্রতিবেশী আঞ্জুয়ারা বেগম এবং নাপিত জীবন রবিদাস ওরফে যতিন (২৫)। তবে অভিযোগ গঠনের মতো তথ্য-উপাত্ত না থাকায় মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে তুফান সরকারের শ্বশুর জামিলুর রহমানকে (৬০)।

অভিযোগ আছে, কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের পর আপস-মীমাংসার নামে মিথ্যা প্রলোভনে মেয়েটি এবং তাঁর মাকে অপহরণ করে নারী কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসানের বাড়িতে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। পরে মা-মেয়ের মাথার চুল কেটে ন্যাড়া করে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় তুফানের স্ত্রী আশা, নারী কাউন্সিলর মার্জিয়া, তাঁদের মা রুমিসহ সহযোগী আতিক, জিতু, দিপু, রুপম, শিমুল, মুন্নাসহ ১৩ জনকে অভিযুক্ত করে আসামিদের বিরুদ্ধে পেনাল কোড আইনের ৩৪২, ৩২৩, ৩২৫, ৩০৭, ৩৫৪, ৫০০, ৫০৬, ১০৯ এবং ১১৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

আদালত সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ১০ অক্টোবর দেওয়া আলোচিত এই মামলার অভিযোগপত্র দাখিলের সময় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার সাক্ষ্যপ্রমাণ না পাওয়ায় তুফান সরকারের শ্বশুর জামিলুর রহমান ওরফে রুনু, নাপিত জীবন রবিদাস ওরফে যতিনকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করেছিলেন। তবে আদালত পর্যবেক্ষণ শেষে জীবন রবিদাসের সম্পৃক্ততা খুঁজে পাওয়ায় তাঁর নামেও অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার শুনানির পর ওই ১২ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আদেশ দেন আদালত। মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও সহকারী কৌঁসুলি আসলাম আঙ্গুর প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ তদন্ত শেষে এই মামলার অভিযোগপত্র থেকে দুই আসামিকে অব্যাহতির সুপারিশ করলেও আদালত অব্যাহতি দেওয়া নাপিত জীবন রবিদাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে তাঁকে বিচারের আওতায় এনেছেন। তুফানের শ্বশুর জামিলুর রহমানকে অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতির আবেদন বহাল রেখেছেন আদালত।

সরকারি এই কৌঁসুলি আরও বলেন, অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে মূলত মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরু হলো। মামলার শুনানির জন্য আগামী ১০ মার্চ দিন ধার্য করেছেন আদালত। এই মামলায় প্রধান আসামি তুফান সরকার জামিনে পেলেও ধর্ষণের মামলায় বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন। এই মামলায় আসামি সামিউল হক ছাড়া সবাই জামিনে রয়েছেন।

এদিকে ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাটি বর্তমানে বগুড়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২-এর আদালতে বিচারাধীন। এই আদালতের সরকারি কৌঁসুলি নরেশ মুখার্জি আজ প্রথম আলোকে বলেন, এই মামলায় প্রধান আসামি তুফান সরকার বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। পলাতক এক আসামির প্রতি হুলিয়া জারি করা হয়েছে। তবে চার্জ গঠন এখনো হয়নি। চার্জ গঠনের পর মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরু হবে।

ধর্ষণের শিকার মেয়েটির মা বাদী হয়ে ২০১৭ সালের ২৯ জুলাই বগুড়া সদর থানায় দুটি মামলা করেন। অভিযোগ আছে, ভালো কলেজে ভর্তি করে দেওয়ার কথা বলে ওই মেয়েটিকে বাড়িতে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করেন বগুড়া শহর শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক (পরে বহিষ্কৃত) তুফান সরকার। পরে মেয়েটিসহ তাঁর মাকে নির্যাতনের পর মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া হয়। মামলার পর থেকে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন তুফান সরকার।