পণ্য ওঠানো-নামানো বন্ধ চট্টগ্রাম বন্দরে

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ মোকাবিলায় চট্টগ্রামে প্রস্তুতি চলছে। আজ শনিবার সকাল থেকে লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হবে। সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে নিজস্ব সংকেত ‘অ্যালার্ট-৩’ জারি করা হয়েছে। সন্ধ্যায় এই সতর্কতা জারির পর বন্দরে অবস্থানরত জাহাজ থেকে কনটেইনার ও পণ্য ওঠানো–নামানো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বহির্নোঙরে বড় জাহাজ থেকে ছোট জাহাজে পণ্য স্থানান্তর কার্যক্রম সকালেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কর্ণফুলী নদীতে অবস্থারত ছোট নৌযান নদীর উজানে পাঠানো হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবিলায় গতকাল বিকেলে সার্কিট হাউসের সম্মেলনকক্ষে এক জরুরি সভা জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ৪৭৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখার পাশাপাশি প্রায় চার হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানানো হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং জনপ্রতিনিধিদের লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়।

জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, আশ্রয়কেন্দ্র, শুকনো খাবার এবং ওষুধপত্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আগামীকাল (আজ) সকাল থেকে লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হবে। এ ছাড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে চট্টগ্রামের সব বিভাগের সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের গতকাল সন্ধ্যার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে। এ কারণে পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপৎসংকেত দেখাতে বলেছে। এই ৭ নম্বর বিপৎসংকেতের আওতায় বরিশাল ও খুলনা বিভাগের উপকূলীয় অঞ্চল। এ ছাড়া চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপৎসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ৬ নম্বর বিপৎসংকেতের আওতায় রয়েছে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও চাঁদপুর অঞ্চল। তবে কক্সবাজার থাকবে ৪ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেতের আওতার মধ্যে।

সর্তকবার্তায় বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আরও উত্তর-উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৬২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৯০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ছয় থেকে আট ফুট জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।

বন্দরের প্রস্তুতি
চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল জুলফিকার আজিজ গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, অ্যালার্ট–৩ জারি করার পর বন্দর জেটিতে অবস্থানরত জাহাজ থেকে পণ্য ও কনটেইনার ওঠানো–নামানো বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। জেটিতে অবস্থানরত জাহাজগুলোকে শনিবার সকালের জোয়ারে সাগরে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। বেলা ১১টার মধ্যেই বন্দর জেটি ও যন্ত্রপাতি নিরাপদ রাখতে এই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

১৯৯২ সালে বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রণীত ঘূর্ণিঝড়-দুর্যোগ প্রস্তুতি এবং ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী পুনর্বাসন পরিকল্পনা অনুযায়ী, আবহাওয়া অধিদপ্তরের সংকেত অনুযায়ী চার ধরনের সতর্কতা জারি করে বন্দর। আবহাওয়া অধিদপ্তর ৩ নম্বর সংকেত জারি করলে বন্দর প্রথম পর্যায়ের সতর্কতা বা ‘অ্যালার্ট-১’ জারি করে। ৪ নম্বর সংকেতের জন্য বন্দর অ্যালার্ট-২ জারি করে। এ ছাড়া বিপৎসংকেত ৫, ৬ ও ৭ নম্বরের জন্য ‘অ্যালার্ট-৩’ জারি করা হয়। মহাবিপৎসংকেত ৮, ৯ ও ১০ হলে বন্দরেও সর্বোচ্চ সতর্কতা বা ‘অ্যালার্ট-৪’ জারি করা হয়। তখন বন্দরের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। জেটি, যন্ত্রপাতি ও পণ্যের সুরক্ষার জন্য ১৯৯২ সাল থেকে এই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

বন্দর সচিব ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, বন্দরের মূল জেটিতে ১৬টি এবং বিশেষায়িত জেটিতে দুটি জাহাজ থেকে পণ্য খালাস হচ্ছিল। এখন কাজ বন্ধ করে কাল জোয়ারে সাগরে পাঠানো হবে। সব জাহাজের ইঞ্জিন চালু রাখা হয়েছে। বন্দর জেটিতে অবস্থানরত সব জাহাজ বাড়তি রশি দিয়ে শক্তভাবে বেঁধে রাখা হয়েছে। লাইটার জাহাজগুলো নদীর উজানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। দুটি নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে বাড়িয়ে চারটি নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা হচ্ছে। বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার বন্দরে মোট ৯৪ টি জাহাজ ছিল। এর মধ্যে বহির্নোঙরে খালাস হয় এমন পণ্যবাহী বড় জাহাজ রয়েছে ৩৮টি। জেটিতে রয়েছে ১৮টি জাহাজ।