সিলেটে 'বিএনপি বাঁচাও' দাবিতে মিছিল, পুলিশের লাঠিপেটা

সিলেটে ‘বিএনপি বাঁচাও’ দাবিতে বের করা মিছিলে লাঠিপেটা করে পুলিশ। সিলেট, ০৯ নভেম্বর। ছবি: প্রথম আলো
সিলেটে ‘বিএনপি বাঁচাও’ দাবিতে বের করা মিছিলে লাঠিপেটা করে পুলিশ। সিলেট, ০৯ নভেম্বর। ছবি: প্রথম আলো

সিলেটে ‘বিএনপি বাঁচাও’ দাবিতে বের করা মিছিলে পুলিশের লাঠিপেটায় অন্তত ৩০ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে বিএনপি। শহরের নাইওরপুল এলাকায় আজ শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

মিছিলে থাকা বিএনপির নেতারা জানান, জাতীয়তাবাদী যুবদলের দুটি কমিটি ঘোষণা করায় সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হকসহ বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন চার নেতা পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। এমন অবস্থায় বিএনপির তৃণমূলে একধরনের অস্থিরতা বিরাজ করায় ‘বিএনপি বাঁচাও’ দাবিতে একটি মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শহরের নাইওরপুল এলাকায় পৌঁছালে পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়। একপর্যায়ে বাধা ডিঙিয়ে মিছিল এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাঁদের ওপর লাঠিপেটা করে। এতে অন্তত ৩০ নেতা-কর্মী আহত হন। তাঁদের মধ্যে যুবদল সিলেট জেলার সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইকবাল বাহার চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মওদুদুল হক, ছাত্রদলের এমসি কলেজ শাখার সাবেক আহ্বায়ক বদরুল আজাদসহ ১০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

মহানগর বিএনপির সাবেক তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক মতিউল বারী চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ মিছিল করতে বাধা দিলে নেতা-কর্মীরা ঘরোয়া সভা করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সভাস্থলে যাওয়ার সময় তাঁদের ব্যানার কেড়ে নেওয়া হয়। পুলিশি বাধা ডিঙিয়ে কয়েকটি খণ্ড খণ্ড মিছিল বের হলে পুলিশ ব্যাপক লাঠিপেটা করে। তিনি বলেন, ‘আমরা তো বিএনপিকে বাঁচানোর দাবিতে মিছিল করছিলাম। পুলিশ আসলে বিএনপিকে বাঁচতেও দিতে চায় না।’

তবে সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সেলিম মিঞার দাবি, পুলিশের ওপর হামলার চেষ্টা হওয়ায় লাঠিপেটা করে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়েছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ঘরোয়া সভা করার কথা বলে মিছিল করার প্রস্তুতি নেওয়ায় পুলিশ বাধা দিয়েছে। বাধা না মেনে বরং পুলিশের ওপর চড়াও হন তাঁরা। শেষে মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।

বিএনপি সূত্র জানায়, ১ নভেম্বর সিলেট জেলা ও মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। দুই কমিটিতে স্থান পাওয়া অধিকাংশই দলীয় কর্মসূচিতে নিষ্ক্রিয় বলে অভিযোগ রয়েছে। তৃণমূলকে না জানিয়ে কেন্দ্র থেকে কমিটি গঠনে ‘ত্যাগী’ ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ‘আন্দোলনে সক্রিয়’ নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে ‘সুবিধাভোগী’ একটি শ্রেণিকে পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়েছে দাবি করে যুবদলের পদবঞ্চিত একটি পক্ষে ক্ষোভ দানা বাঁধে। ওই রাতেই বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের একটি পক্ষ সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করে গণপদত্যাগের হুমকি দেয়।

শনিবার সিলেটে মিছিল বের করেন বিএনপির নেতারা। সিলেট, ০৯ নভেম্বর। ছবি: প্রথম আলো
শনিবার সিলেটে মিছিল বের করেন বিএনপির নেতারা। সিলেট, ০৯ নভেম্বর। ছবি: প্রথম আলো

এই পরিস্থিতিতে মেয়র আরিফুল হকসহ সিলেটে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় কেন্দ্রীয় সদস্য ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক নেতা শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-ক্ষুদ্রঋণবিষয়ক সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রাজ্জাক, কেন্দ্রীয় সহ-স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক সামসুজ্জামান জামান বৈঠক করে কেন্দ্রীয় পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। ৩ নভেম্বর বিএনপির কেন্দ্রীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে দেখা করে পদত্যাগপত্র দাখিল করতে ঢাকা যান তাঁরা। মহাসচিব তাঁদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করে যুবদলের কমিটির বিষয়ে পুনর্বিবেচনার আশ্বাস দিয়ে কিছুদিন সময় চান।

দলীয় সূত্র জানায়, এরপর থেকে মেয়রসহ চার নেতা ও তাঁদের অনুসারীরা সিলেটে দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ থেকে অনেকটা নিজেদের গুটিয়ে রাখেন। তবে তাঁদের অনুসারীরা এক সপ্তাহ ধরে সিলেট নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড ও উপজেলা পর্যায়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ঘরোয়া পরিসরে মতবিনিময় অব্যাহত রাখেন। আজকের মিছিলে অবশ্য এই চার নেতার কেউ ছিলেন না।