মির্জাগঞ্জে ঘর চাপা পড়ে নিহত ১

ছবিটি প্রতীকী
ছবিটি প্রতীকী

ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এর প্রভাবে পটুয়াখালীর বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি হচ্ছে। সেই সঙ্গে রয়েছে দমকা বাতাস। মির্জাগঞ্জ উপজেলার রামপুর গ্রামে গতকাল শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে মোহাম্মদ হামেদ ফকির নামের এক ব্যক্তি ঘর চাপা পড়ে মারা গেছেন।

হামেদ ফকিরের বাবার নাম ইয়াসিন ফকির। রাত সাড়ে তিনটার দিকে পায়রা নদীবেষ্টিত উত্তর রামপুর গ্রামে তিনি ঘরের নিচে চাপা পড়েন। ঘরে তিনি একাই ছিলেন। স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ ফিরোজ জানান, হামেদ ফকিরকে গতকাল অনুরোধ করেও আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া যায়নি।

মির্জাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম আর আনোয়ার ইসলাম হামেদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ইউপি সদস্য মোহাম্মদ ফিরোজ আরও জানান, রামপুর লঞ্চঘাট থেকে কানকি রামপুর পর্যন্ত চার জায়গায় বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। এতে ৮ থেকে ১০টি ঘর পড়ে গেছে।

পটুয়াখালীর বেশির ভাগ এলাকার নারী-পুরুষ ও শিশুরা বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে। জেলার উপকূলীয় বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলার রাঙ্গাবালীর বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রের মানুষ জানান, তাঁরা রাতভর আতঙ্কে ছিলেন। আজ রোববার সকালে পরিবারের পুরুষ সদস্যরা বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। তবে আবহাওয়া অনুকূলে না আসা পর্যন্ত নারী ও শিশুরা নিরাপদ আশ্রয়ে থাকবে।

ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এর কারণে মানুষজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে কাজ করে সিপিপির স্বেচ্ছাসেবকরা। টিয়াখালী ইউনিয়ন, কলাপাড়া উপজেলা, পটুয়াখালী, ৯ নভেম্বর। ছবি: প্রথম আলো
ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এর কারণে মানুষজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে কাজ করে সিপিপির স্বেচ্ছাসেবকরা। টিয়াখালী ইউনিয়ন, কলাপাড়া উপজেলা, পটুয়াখালী, ৯ নভেম্বর। ছবি: প্রথম আলো



রাঙ্গাবালীর চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের চালিতাবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া পুষ্প বেগম (২৮) জানান, আজ ভোরে তাঁর স্বামী জাকির খান বাড়ি চলে গেছেন। তবে তিনি ও তাঁর এক মেয়ে ইয়ামনি (৯) এই আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে। এখানে রাতে খিচুড়ি ও সকালে খাবারের জন্য শুকনো খাবার চিড়া-গুড় দেওয়া হয়েছে।

রাঙ্গাবালী দর ইউনিয়নের বঙ্গীপাড়া আশ্রয়কেন্দ্রে বিভিন্ন চরাঞ্চল থেকে নৌযান নিয়ে আসা মানুষ জানান, রাতভর তারা বুলবুল আতঙ্কে ছিলেন। চরকাসেমের বাসিন্দা আসমা বেগম (৪০) জানান, আবহাওয়া ভালো না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা এখানেই থাকবেন।

রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাশফাকুর রহমান মুঠোফোনে জানিয়েছেন, উপজেলায় আটটি চরে বেড়িবাঁধ ও আশ্রয়কেন্দ্র নেই। তাই এই চরগুলোর অধিকাংশ মানুষ বিশেষ করে নারী ও শিশুদের নৌযান পাঠিয়ে নিরাপদে আনা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে।

পটুয়াখালী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বশির আহমেদ জানান, জেলায় প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। শনিবার সকাল ৬টা থেকে রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত ১৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বাতাসের গতিবেগ কমে ঘণ্টায় ১৮ থেকে ২০ কিলোমিটার বেগে বইছে।

পটুয়াখালী জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে জানানো হয়, জেলার ৪০৩টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রসহ মোট ৬৮৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে শনিবার ৬ লাখ ২৪ হাজার ৮১৯ জন নারী-শিশু-পুরুষ নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছেন। গবাদিপশু আশ্রয় নিয়েছে ৯১ হাজার ৩৬৯টি।