ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি

ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়ে মানুষকে সতর্ক করার পাশাপাশি আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য মাইকিং করছেন স্বেচ্ছাসেবকেরা। গতকাল দুপুরে পিরোজপুর সদরের হুলারহাট সড়কে।  ছবি: প্রথম আলো
ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়ে মানুষকে সতর্ক করার পাশাপাশি আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য মাইকিং করছেন স্বেচ্ছাসেবকেরা। গতকাল দুপুরে পিরোজপুর সদরের হুলারহাট সড়কে। ছবি: প্রথম আলো

ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ মোকাবিলায় বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বিভাগের ৬ জেলায় প্রস্তুত করা হয়েছে ২ হাজার ১১৪টি আশ্রয়কেন্দ্র। সেখানে ১৭ লাখ ৮৩ হাজার মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। প্রয়োজন হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি বহুতল ভবনগুলোও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

এ ছাড়া গৃহপালিত প্রাণীদের জন্যও নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী জরুরি সেবা দেওয়ার জন্য বিভাগের ৬ জেলায় ৩১৭টি চিকিৎসা দল গঠন করা হয়েছে।

বরিশাল জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে পাওয়া তথ্যমতে, গতকাল বিকেল পৌনে ৪টা পর্যন্ত জেলার ২৩২টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৫০ হাজার লোক নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে গেছে।

অপর দিকে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) বরিশালের আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আবদুর রশিদ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, বেলা দুইটা পর্যন্ত তাঁর অধীন বরিশাল সদর, পটুয়াখালীর দশমিনা, গলাচিপা, রাঙ্গাবালী, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া ও বাগেরহাটের শরণখোলায় নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে ৩২ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। অন্যদেরও আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার জন্য স্বেচ্ছাসেবকেরা মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন।

লোকজন ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে স্বেচ্ছায় না গেলে তাদের জোর করে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী। ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ মোকাবিলায় এক জরুরি সভায় গতকাল দুপুরে তিনি এ নির্দেশ দেন। ব্যাপক প্রচার চালানোর পরও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার অনেকের মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে অনীহা দেখা যাওয়ায় এ নির্দেশ দেন বিভাগীয় কমিশনার।

গতকাল দুপুর ১২টায় বরিশাল সার্কিট হাউস মিলনায়তনে বরিশাল বিভাগীয় দুর্যোগবিষয়ক জরুরি সভায় এই নির্দেশ দিয়ে বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী বলেন, মানুষের জীবন রক্ষার জন্যই তাদের জোর করে নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। কারণ, উপকূলীয় বেশ কিছু এলাকার মানুষ তাদের মালপত্র ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা প্রকাশ করে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জনগণের মালামাল হেফাজতে সর্বোচ্চ সচেষ্ট থাকবে। আর উপকূলীয় এলাকা, বিশেষ করে যেসব এলাকায় বাঁধ নেই, জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে, সেখানে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচিসহ স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনগুলো সচেতনতামূলক কাজ করছে। তারা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাবাসীকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার কাজ করছে। আমরা চাই সবাই নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে যাক।’

দুর্যোগ মোকাবিলায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সিটি কাউন্সিলরদের সঙ্গে সমন্বয় করে দুর্যোগ মোকাবিলায় কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। গতকাল দুপুরে নগরীর সদর রোডের অ্যানেক্স ভবনের চতুর্থ তলার সভাকক্ষে দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতিমূলক সভায় এ কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, ‘চোখের সামনে কোনো দুর্যোগ দেখলে কারও নির্দেশনার অপেক্ষা এবং অর্থের জন্য অপেক্ষা করা যাবে না। পকেট থেকে খরচ করে কাজ এগিয়ে নেবেন, পরবর্তী সময়ে এগুলো দিয়ে দেওয়া হবে।’

মেয়র বলেন, ‘দুর্যোগ মোকাবিলায় আমরা সব প্রস্তুতি হাতে নিয়েছি। বিশেষ করে আমাদের স্বাস্থ্য, পরিচ্ছন্নতা, বিদ্যুৎ ও পানি শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া বাদ আসর নগরীর বিভিন্ন মসজিদে এবং মন্দির ও গির্জায় বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়।’

এ বিষয়ে বরিশালের জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান বলেন, জেলার ২৩২টি সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকজন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পুলিশ, আনসার ও সিপিপির কর্মী, রোভার স্কাউট, গার্লস গাইডসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রায় ১০ হাজার কর্মী বেশি ঝুঁকিতে থাকা এলাকার লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আরও জানান, এরই মধ্যে বিভিন্ন উপজেলায় প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। আশ্রয় নেওয়া মানুষের জন্য প্রতিটি উপজেলায় পর্যাপ্ত শুকনা খাবার ও চাল মজুত করা হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে।