প্রবল 'বুলবুল' একেবারেই দুর্বল

ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এখন একটি স্থল নিম্নচাপ হিসেবে অবস্থান করছে। ছবি: সৌরভ দাশ
ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এখন একটি স্থল নিম্নচাপ হিসেবে অবস্থান করছে। ছবি: সৌরভ দাশ

প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ একেবারে দুর্বল হয়ে গেছে। উপকূলীয় এলাকা থেকে মহাবিপৎসংকেত তুলে নিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে বুলবুলের রেশ আছে। এই রেশ আরও দুই দিন থাকবে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আগামী দুই দিন বৃষ্টি হবে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক শামসুদ্দিন আহমেদ আজ রোববার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।

শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’এই মুহূর্তে একেবারেই দুর্বল। এটি ছিল একটি প্রবল ঘূর্ণিঝড়। শুরুর দিকে বাতাসের গতি ছিল ঘণ্টায় প্রায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। কখনো কখনো ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার। সেই জায়গা থেকে এখন বাতাসের গতি নেমে এসেছে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটারে।

শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বুলবুল এখন আর প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থানে নেই। এমনকি এটি এখন আর ঘূর্ণিঝড়ও নয়। এটি একটি স্থল নিম্নচাপ হিসেবে অবস্থান করছে।’

ঘূর্ণিঝড় বুলবুল বাংলাদেশে আসার আগে গতকাল শনিবার মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছিল। একই মহাবিপৎসংকেতের আওতায় ছিল উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো। তবে এসব মহাবিপদসংকেত তুলে নিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আগে ছিল মহাবিপৎসংকেত ১০। এটি ছিল পায়রা ও মোংলায়। এখন ওই দুই জায়গায় মহাবিপৎসংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে হবে। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে ছিল মহা বিপদ সংকেত ৯। সেখানে মহাবিপৎসংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে হবে। কক্সবাজারের ছিল ৪। সেখানে হবে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত। নদীবন্দরে ছোট ছোট লঞ্চের জন্য ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত বিদ্যমান আছে।’

বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পশ্চিম অংশে সৃষ্টি হয়ে বুলবুল ধেয়ে আসে উত্তর-পূর্ব দিকে। গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার বেগে বুলবুল বয়ে যায় সুন্দরবনের ভারতের পশ্চিমবঙ্গ অংশের ধানচি সংলগ্ন এলাকা দিয়ে। স্থলভাগে আছড়ে পড়ার আগেই বুলবুলের কিছুটা শক্তিক্ষয় হয়। তবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ঘূর্ণিঝড়ে বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়। পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বড় অংশ লন্ডভন্ড হয় বুলবুলের তাণ্ডবে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক শামসুদ্দিন আহমেদ জানান, প্রথমে ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। এই আঘাতের পর সেটি দুর্বল হয়ে যায়। সে জন্য বাংলাদেশে আসতে আসতে বুলবুলের বাতাসের গতিবেগ আরও কমে যায়।

শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, এখন স্থল নিম্নচাপ হিসেবে বুলবুলের প্রভাবে আগামী দুই দিন থেমে থেমে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হবে। আবহাওয়া স্বাভাবিক হতে আরও তিন চার দিন লাগবে।

চট্টগ্রামে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
বুলবুলের প্রভাবে আজ রোববার সকাল থেকে চট্টগ্রামে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে।

পতেঙ্গা আবহাওয়া দপ্তরের আবহাওয়াবিদ ফরিদ আহম্মেদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল দুর্বল হয়ে স্থল নিম্নচাপ হিসেবে পিরোজপুর ও বরিশাল এলাকায় অবস্থান করছে। আজ চট্টগ্রামে হালকা বাতাস এবং ২৪ ঘণ্টায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে সমুদ্র বন্দরগুলোকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

ঝড়ের ভয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া লোকজন সকাল থেকেই নিজ ঘরে ফিরে গেছেন।

এদিকে, ১৫ ঘণ্টা পর চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আজ সকাল ৭টা থেকে পুনরায় চালু হয়েছে।