নির্যাতনের মামলা করায় বৃদ্ধ দম্পতি এলাকাছাড়া

নির্যাতনের ঘটনায় থানায় মামলা করেছিলেন এক বৃদ্ধ দম্পতি। প্রতিকার পাওয়া দূরের কথা, আসামিদের হুমকির মুখে তাঁরা পরিবারসহ আড়াই মাস ধরে এলাকাছাড়া।

ঘটনার শিকার দম্পতি হলেন আবদুল আহাদ খান (৬৬) ও তাঁর স্ত্রী শিরিন বেগম (৬০)। তাঁরা নরসিংদীর পলাশ উপজেলার রসিন্দুর ইউনিয়নের মালিতা গ্রামের বাসিন্দা। পরিবারটির অভিযোগ, নিঃসন্তান হওয়ায় তাঁদের সম্পত্তির ওপর দৃষ্টি পড়েছে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় এক নেতার। পরিবারটির বিরুদ্ধে চক্রান্তে সবকিছুর কলকাঠি নাড়ছেন তিনিই।

ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় লোকজন সূত্রে জানা গেছে, নির্যাতনের ঘটনাটা বেশ আগের; গত ২৩ আগস্টের। হঠাৎ বৃদ্ধ আবদুল আহাদ খানের বিরুদ্ধে মালবাহী একটি ট্রলির ব্যাটারি চুরির অভিযোগ তোলা হয়। তাঁকে ঘটনার দিন বিকেল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত নিজ বাড়িতে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। স্বামীকে রক্ষার চেষ্টা করতে গিয়ে শিরিন বেগমও মারধরের শিকার হন। নির্যাতনে নেতৃত্ব দেন রসিন্দুর ইউনিয়ন পরিষদের স্থানীয় ওয়ার্ড সদস্য নাসির উদ্দিন। তিনি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতিও। নির্যাতনে যুক্ত ছিলেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমসহ মোট ১৪ জন।

শিরিন বেগম বলেন, ‘পৈতৃক ও ক্রয়সূত্রে আমাদের বেশ সম্পদ রয়েছে। আমরা নিঃসন্তান হওয়ায় ওই সম্পত্তির প্রতি লোভ রয়েছে প্রতিবেশী আবুল কাশেমের। তিনি অল্প দামে আমাদের বসতভিটা কেনার জন্য দীর্ঘদিন ধরে নানাভাবে চাপ দিয়ে আসছেন।’

তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগের নেতা আবুল কাশেম। তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি নির্যাতনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই। ঘটনার সময় আমি উপস্থিত ছিলাম না। তা ছাড়া ওই সম্পত্তির প্রতি আমার লোভ রয়েছে, এ অভিযোগও মিথ্যা। এরপরও কেন আমাকে মামলায় আসামি করা হলো আমি জানি না।’ আর ইউপি সদস্য নাসির উদ্দিন দাবি করেন, পরিবারটির সঙ্গে আবুল কাশেমের পূর্ববিরোধ থাকার বিষয়টি তিনি জানতেন না। 

নির্যাতনের ঘটনার সময় স্থানীয় লোকজন জড়ো হতে থাকেন। তখন অচেতন অবস্থায় ওই দম্পতিকে ফেলে চলে যান নির্যাতনকারীরা। পরে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় তাঁরা নরসিংদী জেলা হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে আদালতে গিয়ে মামলা করেন শিরিন বেগম। তিনি বলেন, ‘মামলা তুলে নিতে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন আবুল কাশেম। হুমকির কারণে আমরা নিজের বাড়িতে থাকতে পারছি না।’

আদালত থেকে মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)। বর্তমানে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন পিবিআইয়ের উপপরিদর্শক (এসআই) সুজন কুমার দাস। তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রাথমিক তদন্তে নির্যাতনের ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে।