পরিস্থিতি এমন যে রাষ্ট্রের স্বার্থেও কথা বলা যায় না: রুমিন

রুমিন ফারহানা। ছবি: ফেসবুক
রুমিন ফারহানা। ছবি: ফেসবুক

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনার সমালোচনা করেছেন বিএনপির সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ রুমিন ফারহানা। তিনি বলেছেন, পরিস্থিতি এমন যে রাষ্ট্রের স্বার্থে কথা বলা যাবে না, যদি তা সরকারের বিপক্ষে যায়।

আজ সোমবার জাতীয় সংসদে জরুরি জনগুরুত্বসম্পন্ন বিষয়ে মনোযোগ আকর্ষণ নোটিশের আলোচনায় অংশ নিয়ে রুমিন ফারহানা এ কথা বলেন।

বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার হত্যার কথা উল্লেখ করে রুমিন ফারহানা বলেন, বর্তমান সরকারের ভারত সফরের ব্যর্থতা নিয়ে দেশের স্বার্থে কথা বলায় আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কারও ওপর নির্যাতন করার আগে তাঁকে জামায়াত–শিবির নাম দেয়, তারপর হত্যা পর্যন্ত জায়েজ।

আওয়ামী পরিবারের সন্তান হওয়ার পরও শিবির আখ্যা দিয়ে আবরারকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে রুমিন ফারহানা বলেন, একইভাবে ভারতের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে খুলনা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্যপদ হারিয়েছেন এক নেতা। চারপাশে ভয় এবং আতঙ্কের মধ্যে মানুষ। নোংরা রাজনীতির চক্করে পড়ে মেধাবী-অমেধাবীনির্বিশেষে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের বহু ছাত্র নরপিশাচে পরিণত হয়েছে। সাত ঘণ্টা দফায় দফায় আবরারের ওপর স্টাম্প ভেঙে মৃত্যু নিশ্চিত করার ফাঁকে ফাঁকে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাইয়েরা মেসেঞ্জারে চ্যাটিং করেছে। রাতের খাবার খেয়েছে, বার্সেলোনার খেলা দেখেছে।

বিএনপির সাংসদ রুমিন বলেন, প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হলে আছে শতাধিক টর্চার সেল। সেখানে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের নিরঙ্কুশ আধিপত্য। র‍্যাগিংয়ের নামে চলে দানবীয় অত্যাচার। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক উপাচার্য দক্ষ প্রশাসক, না দলীয় কর্মী, তা এখন বোঝা দায়। সন্তানতুল্য আবরার হত্যার ৩৮ ঘণ্টা পর উপাচার্য সামনে এসেছেন। তিনি জানাজায় অনুপস্থিত ছিলেন। পুলিশ প্রশাসন ও দলীয় ক্যাডারদের নিয়ে কুষ্টিয়া যান পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দিতে। সেখানে দুই মিনিটের মধ্যে দোয়া শেষ করার নির্দেশনা আসে। হামলা হয় আবরারের পরিবারের সদস্যদের ওপর। নৃশংস এই হত্যাকাণ্ড অনাকাঙ্ক্ষিত বলে একটি জিডি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দায় সারে। মামলা করতে হয় আবরার ফাহাদের বাবাকে। শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য প্রভোস্ট, প্রক্টর, ছাত্রকল্যাণ পরিচালক আছেন, তাঁরা যাঁর যাঁর দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন।

কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ
আরেক নারী সাংসদ লুৎফুন্নেসা খান দেশে কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে মনোযোগ আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন, ১৪টি খুন হয়েছে সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্বে, ছয়টি খুন হয়েছে প্রেমঘটিত ঘটনায়। ছয়টি ঘটেছে আধিপত্য বিস্তারের ঘটনায়। ঢাকা মহানগরীতে, চট্টগ্রামে বিভিন্ন নামে গ্যাং গড়ে উঠেছে। যারা পূর্ণ আধিপত্য বিস্তার ছাড়াও বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছে। প্রতিষ্ঠিত সন্ত্রাসীরা এসব গ্যাংকে ছত্রচ্ছায়া দেওয়ার কারণে তারা আরও ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। মাদক ব্যবসার ক্যারিয়ার হিসেবে এসব কিশোরকে ব্যবহার করা হয়।

লুৎফুন্নেসা খান বলেন, ঢাকার অদূরে টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে বালক ৯৮৯ জন, যশোর কেন্দ্রে ৩৫৯ জন বালক ও কোনাবাড়ীতে বালিকা কেন্দ্রে ১৫০ জনকে খুন, ছিনতাই, মাদক কারবারি, চুরি-ডাকাতি শিশু ও নারী নির্যাতন, অস্ত্র মামলাসহ বিভিন্ন মামলায় আটক রাখা হয়েছে। এসব কিশোরের মাদক, খুনসহ অন্যান্য কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়ার মূল কারণ চিহ্নিত করে রোধ করার ব্যবস্থা নেওয়া এবং কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করা, সামাজিকভাবে পুনর্বাসিত করা, প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।