বিয়ে বন্ধের আকুতি ৩ শিশুর

মেয়ে তিনটি কৈশোরে পা দিয়েছে। বয়স প্রায় ১৩। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে পড়ছে। গ্রামের পথ ধরে অন্য সহপাঠীদের সঙ্গে দল বেঁধে প্রতিদিন বিদ্যালয়ে যায় তারা। কিন্তু তাদের এই আলোর পথের যাত্রা হঠাৎ করেই থেমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মত না নিয়েই তিন কিশোরীর বিয়ে ঠিক করেছে তাদের পরিবার।

এর মধ্যে আজ মঙ্গলবার বিয়ে হওয়ার কথা সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক কিশোরীর। গতকাল সোমবার পর্যন্ত এই বিয়ে যাতে না হয়, সে চেষ্টা করেছে সে। তার ইচ্ছা আরও পড়াশোনা করা। কিন্তু পরিবারকে তা বুঝিয়েও কাজ হয়নি। উপায় না দেখে বাকি দুই সহপাঠীকে নিয়ে শেষ ভরসা হিসেবে গতকাল বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে এসেছিল তারা। কান্নায় ভেঙে পড়ে আকুতি জানায় বিয়ে বন্ধের।

নাটোরের গুরুদাসপুরের মধ্যমপাড়া মহল্লার সাহিদা-কাশেম পৌর বালিকা বিদ্যালয়ে পড়ছে ওই তিন কিশোরী। তাদের মধ্যে একজন পড়ছে ষষ্ঠ আর বাকিরা সপ্তম শ্রেণিতে। বিয়ে বন্ধের দাবি নিয়ে সোমবার প্রধান শিক্ষকের কাছে এলে তাদের উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনা জানানো হয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকেও (ইউএনও)। তবে গতকাল রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত কিশোরীদের বিয়ে বন্ধের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

তবে ইউএনও তমাল হোসেন রাতে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, বিয়ে বন্ধের জন্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে তিন কিশোরীর অভিভাবকদের নিয়ে আজ সকালে ইউএনও কার্যালয়ে আসতে বলা হয়েছে। তখন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক বলেন, তাঁদের অজান্তেই সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীর আজ (মঙ্গলবার) বিয়ে ঠিক হয়েছে। আরেক ছাত্রীর বিয়ে আগামী বুধবার আর ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীর বিয়ের কথা চলছে। সোমবার ওই ছাত্রীরা বিদ্যালয়ে এসে কান্নায় ভেঙে পড়ে। অনেক চেষ্টার পর তাদের শান্ত করা হয়। পরে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার পরামর্শে ছাত্রীদের তাঁর দপ্তরে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তার মাধ্যমে তিন ছাত্রীর বাল্যবিবাহ বন্ধের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

আজ বিয়ের দিন ঠিক হওয়া ছাত্রী জানায়, তিন ভাই এক বোনের মধ্যে সবার ছোট সে। এক ভাই কলেজে পড়ে। অন্য দুই ভাই বাবার সঙ্গে ইটভাটায় কাজ করে। গত রোববার পারিবারিকভাবে দেখাশোনার পর্ব শেষে তার বিয়ে ঠিক করা হয়। পাত্র একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করে। কিন্তু এই বয়সে বিয়ে করতে রাজি নয় সে। তাই বাধ্য হয়ে বিয়ে বন্ধ করার জন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে এসেছে।

সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া আরেক ছাত্রী জানায়, তার বাবা স্থানীয় একটি ইটভাটায় কাজ করেন। পরিবারে তিন ভাই এক বোন। অভাবের কারণেই ইচ্ছার বিরুদ্ধেই বিয়ে ঠিক করেছে তার পরিবার। কিছুদিন আগে পাত্রপক্ষ থেকে মুঠোফোনে ছবি তুলে নিয়ে গেছে। কিন্তু ছবিটি ভালো না হওয়ায় গতকাল সোমবার সকালে এসে আবার ছবি তুলে নিয়ে যায়। এতে বিব্রত সে।

প্রতিবেশী এক ভ্যানচালকের সঙ্গে বিয়ের কথা চলছে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া কিশোরীর। সে জানায়, পরিবারের খরচ কমাতে দ্রুতই বিয়ে দিতে চায় তার পরিবার। বিশেষ করে তার মা বিয়ের জন্য বেশি তৎপর। বিয়েতে যৌতুক কত নির্ধারণ হবে, এ নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে কথা চলছে। মীমাংসা হলেই বিয়ের দিন ঠিক করা হবে।

কিশোরীদের কাছে থেকেই তাদের অভিভাবকের মুঠোফোন নম্বর নিয়ে কথা বলেন এই প্রতিবেদক। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া দুই কিশোরীর অভিভাবক বলেছেন, মেয়েদের লেখাপড়া করাতে গেলে তাদের বয়স বেড়ে যায়। তখন তাদের জন্য পাত্রপক্ষের চাহিদা থাকে না।

মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান বলেন, ইউএনও বিয়ে বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়াসহ তিন কিশোরীর পড়াশোনা নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়েছেন।