সেতু দুটি পড়ে আছে অচল

সংযোগ সড়ক না থাকায় সরিষাবাড়ীর গাছ বয়ড়া-মানিকপটল জিয়া খালের ওপর নির্মিত সেতুটি দিয়ে কোনো যানবাহন চলতে পারছে না।  প্রথম আলো
সংযোগ সড়ক না থাকায় সরিষাবাড়ীর গাছ বয়ড়া-মানিকপটল জিয়া খালের ওপর নির্মিত সেতুটি দিয়ে কোনো যানবাহন চলতে পারছে না। প্রথম আলো

জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে গাছ বয়ড়া জিয়া খালের ওপর দুটি সেতু নির্মাণ করা হলেও সংযোগ সড়ক না থাকায় ছয় গ্রামের মানুষের যাতায়াতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সংযোগ সড়ক না থাকায় সেতু দুটি কোনো কাজে আসছে না বলে অভিযোগ।

সংযোগ সড়ক না থাকায় উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের মালিপাড়া, মানিকপটল, গাছ বয়ড়া, বিন্নাফৈর, বামুনজানি ও টাকুরিয়া—এ ছয়টি গ্রামের ৫০ হাজার মানুষ যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা কষ্টে যাতায়াত করছে।

গাছ বয়ড়া-মানিকপটল জিয়া খালে বছরের ছয় মাস বন্যার পানি থাকায় গ্রামের মানুষ ও শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। পানি শুকিয়ে যাওয়ার পর সবাই খেতের সীমানা দিয়ে শহরে যাতায়াত করে। সংযোগ সড়ক না থাকায় কৃষকদের জমিতে উৎপাদিত কৃষিপণ্য কষ্ট করে বাড়িতে নিয়ে যেতে হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা, পোগলদিঘা ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের ছয় গ্রামের ৫০ হাজার মানুষের দীর্ঘদিন ধরে যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছিল। এই দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে পোগলদিঘা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সামস উদ্দিন ছয় বছর আগে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে সেতু নির্মাণের জন্য আবেদন করেন।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে গাছ বয়ড়া জিয়া খালের ওপর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের ৩০ লাখ ৭৭ হাজার টাকা ব্যয়ে ৪০ ফুট দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণ করা হয়। এর আগে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে জাইকা বেড়িবাঁধ প্রকল্পের আওতায় ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। সেতু দুটির দূরত্ব এক শ মিটার। সেতু দুটি নির্মাণ করা হলেও সংযোগ সড়ক না থাকায় কারও কাজে আসছে না। পাঁচ বছর আগে একটি সেতু নির্মাণ করা হলেও এখনো রাস্তা করা হয়নি। সড়ক না থাকায় খালের ওপর সেতু দুটি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

গাছ বয়ড়া গ্রামের আয়নাল হক (৪০) বলেন, জমিতে আবাদ করা হলেও সড়ক না থাকায় সেতুর ওপর দিয়ে ফসল নেওয়া যায় না। দুটি সেতুই অব্যবহৃত পড়ে আছে। মানিকপটল গ্রামের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম জানায়, বন্যার ছয় মাস তারা নৌকায় স্কুলে যায়। পানি শুকিয়ে গেলেও খেতের আইল দিয়ে স্কুলে যেতে হয়। সংযোগ সড়ক না থাকায় সেতু দুটি তাদের কোনো কাজে আসছে না।

মানিকপটল গ্রামের ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম জানান, সড়ক না থাকলেও দুটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। একটি সেতু ছয় মাস আগে নির্মাণ করা হয়েছে।

গাছ বয়ড়া গ্রামের ইউপি সদস্য মোবারক আলী জানান, সেতু নির্মাণ করে দিলেও সড়ক না করে দেওয়ায় সবাই কষ্টে আছে। সড়ক তৈরি করে দিলে সেতু দুটিতে চলাচলে আর কষ্ট হবে না।

বয়ড়া ইসরাইল আহম্মেদ উচ্চবিদ্যায়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল ওয়াহাব জানান, এ ছয়টি গ্রাম থেকে তাঁর বিদ্যালয়ে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী পড়তে আসে। যাতায়াতের জন্য সড়ক না থাকায় শিক্ষার্থীদের অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে।  

পোগলদিঘা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সামস উদ্দিন জানান, পরপর দুটি বন্যায় গ্রামরক্ষা বেড়িবাঁধটি ভেঙে যাওয়ায় রাস্তার কোনো চিহ্ন নেই। নতুন করে সড়ক তৈরি করার জন্য উপজেলা প্রকৌশলী ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কাছে আবেদন করা হয়েছে। সড়ক তৈরি করা হলেই সেতু দুটিতে যাতায়াতে মানুষের ভোগান্তি কমবে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) হুমায়ূন কবীর বলেন, একটি সেতুর সংযোগ সড়ক বন্যায় ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে। আরেকটি সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করতে না করতেই বন্যা এসে যায়। তাই সড়ক তৈরি করে দেওয়া যায়নি। চলতি অর্থবছরে সড়ক তৈরি করে দেওয়া হবে। তখন সেতু দুটিতে মানুষের যাতায়াতে আর দুর্ভোগ পোহাতে হবে না।