সাংসদ বাদলের আসনে প্রার্থী হতে চান অনেকে

সাংসদ মইন উদ্দীন খান বাদলের মৃত্যুর পর চট্টগ্রাম–৮ (বোয়ালখালী–চান্দগাঁও) আসনে মহাজোট বা আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে দেন সম্ভাব্য কয়েকজন প্রার্থী। তবে আওয়ামী লীগের প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছের ওপর নির্ভর করছে কে ওই আসনে প্রার্থী হচ্ছেন।

গত ৭ নভেম্বর ভোরে ভারতের বেঙ্গালুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সাংসদ মইন উদ্দীন খান বাদল। তাঁকে শনিবার রাতে বোয়ালখালীর সারোয়াতলী গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। তিনি ছিলেন জাসদ একাংশের কার্যকরী সভাপতি।

২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মইন উদ্দীন খান বাদল সাংসদ নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৪ এবং সর্বশেষ ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনেও তিনি সাংসদ হন। বিভিন্ন ইস্যুতে জাতীয় সংসদে বক্তব্য রেখে তিনি আলোচনায় আসেন। সুবক্তা হিসেবেও খ্যাতি পেয়েছিলেন তিনি। কালুরঘাটে কর্ণফুলীর ওপর দ্বিতীয় সেতুর আন্দোলনে নেমে এলাকাবাসীর নজর কাড়েন তিনি। এসব এখন স্মৃতি।

এদিকে সাংসদ বাদলের মৃত্যুর পর এক ঝাঁক নেতা উপনির্বাচনে মহাজোট বা আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ার দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছেন। সাংসদ বাদলের স্ত্রী সেলিনা খান বাদল ছাড়া বাকিরা সবাই আওয়ামী লীগের নেতা। অবশ্য আওয়ামী লীগ ঘরনার ব্যবসায়ীও রয়েছেন একজন।

দলীয় নেতা–কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাদলের স্ত্রী সেলিনা খানের দিকে সবাই চেয়ে আছেন। কারণ দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ও যোগাযোগ অত্যন্ত চমৎকার। ঢাকায় প্রয়াত সাংসদ বাদলের লাশ এলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেলিনা খানকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দেন। বিভিন্ন সময় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হন সেলিনা। মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে বাদলের স্ত্রীর সম্ভাবনা আছে বলে নেতা–কর্মীরা মনে করছেন।

সেলিনা খানও মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘নেত্রীর (প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গে আমার আত্মার সম্পর্ক রয়েছে। চট্টগ্রাম–৮ আসনে উপনির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছে আমার আছে। এখন প্রধানমন্ত্রী চাইলে আমি প্রার্থী হব।’

দলীয় নেতা–কর্মীরা জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মইন উদ্দীন খান বাদল শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন বাদলের পরিবর্তে তাঁর স্ত্রী সেলিনা খানের নাম বারবার উচ্চারিত হয়েছিল। অর্থাৎ চট্টগ্রাম–৮ আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেলিনা খানও মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।

আওয়ামী লীগের যাঁরা আছেন

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদের গ্রামের বাড়ি বোয়ালখালী উপজেলায়। তিনি বারবার এই আসনে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে পাননি। সাংসদ বাদলের মৃত্যুর পর তিনি আবার মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলামের নামও উচ্চারিত হচ্ছে।

মোছলেম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এই আসনে তিনবার মনোনয়ন চেয়েছি। আমাকে দেওয়া হয়নি। অথচ আমার রাজনীতির গোড়াপত্তন ঘটে বোয়ালখালীতে। এবারও মনোনয়ন চাইব। এখন নেত্রীর (প্রধানমন্ত্রী) ওপর সবকিছু নির্ভর করছে।’

এ বিষয়ে নুরুল ইসলামের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। যদিও তিনি এই আসনে ১৯৯১ এবং ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু বিএনপির এম মোরশেদ খানের কাছে হেরে যান। ২০০৮ সালে নুরুল ইসলাম চট্টগ্রামের কোতোয়ালি–বাকলিয়া আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে জিতে আসেন।

একই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী আবদুচ ছালাম, যিনি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হিসেবে ১০ বছর দায়িত্ব পালন করেন। চট্টগ্রাম–৮ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে তিনি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া একজন ব্যবসায়ীর নামও আলোচনায় আছে। তিনি হলেন এস এম আবু তৈয়ব। তৈয়ব চট্টগ্রাম চেম্বারের বর্তমান পরিচালক এবং তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক সংগঠন বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ছিলেন। তাঁর ভাই এস এম আবুল কালাম কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত। আবুল কালামও চট্টগ্রাম–৮ আসনে একবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছিলেন। দলীয় কোন্দলে তিনি হেরে যান বলে আলোচনায় আছে।

জানতে চাইলে আবদুচ ছালাম বলেন, একজন এমপি মারা গেছেন। এখনো শোকের আবহ বিরাজ করছে। এই মুহূর্তে উপনির্বাচন নিয়ে মন্তব্য করা উচিত না।  এস এম আবু তৈয়ব অবশ্য মনোনয়নপ্রত্যাশী বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে জিএস নির্বাচিত হই। পরে ব্যবসা–বাণিজ্যের পাশপাশি রাজনীতিতেও সময় দিয়েছি। নেত্রী চাইলে আমি উপনির্বাচনে প্রার্থী হব।’

স্বাধীনতাত্তোর ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত দেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে নৌকা প্রতীকে সাংসদ হন আওয়ামী লীগের মরহুম এম কফিল উদ্দিন, ২০০৮ সালে আবার নৌকা প্রতীকে মহাজোটের শরীক জাসদের মইন উদ্দীন খান বাদল সাংসদ হন। মাঝের ছয়টি নির্বাচনে বিএনপি ও জাতীয় পার্টি প্রতিনিধিত্ব করে।