দুদকের রিমান্ডে মুখ খুলছেন মোহামেডানের লোকমান

লোকমান হোসেন ভূঁইয়া।
লোকমান হোসেন ভূঁইয়া।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) রিমান্ডে মুখ খুলছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ডাইরেক্টর ইনচার্জ লোকমান হোসেন ভূঁইয়া। আজ মঙ্গলবার তাঁকে দ্বিতীয় দিনের মতো জিজ্ঞাসাবাদ করে সংস্থাটি।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদে লোকমান দুদকের দলকে পুরোপুরি সহযোগিতা করছেন। তথ্য দিচ্ছেন সহজেই। আজ দুদক কর্মকর্তারা তাঁদের হাতে থাকা নানা তথ্য যাচাই করে নিচ্ছেন লোকমানের কাছ থেকে। ক্লাবের ক্যাসিনো ভাড়া দিয়ে তাঁর আয় ও সেই অর্থ কোথায় আছে, সেটা জানতে চাওয়া হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় ৪১ কোটি টাকা পাচারের যে তথ্য দুদকের হাতে আছে, সেই সম্পর্কেও লোকমানের কাছ থেকে জানতে চাওয়া হয় বলে সূত্র জানিয়েছে।

অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতকাল সোমবার বিকেল পাঁচটার দিকে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয় লোকমানকে। সেদিন এক ঘণ্টার মতো জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদকের দল। গতকাল জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাঁকে আবারও রাজধানীর রমনা থানার হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। কাল বুধবার সকালে আবার তাঁকে দুদকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

৪ কোটি ৩৪ লাখ ১৯ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গত ২৭ অক্টোবর লোকমানের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৩ নভেম্বর লোকমান ভূঁইয়ার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ ইমরুল কায়েস।

লোকমান হোসেন ভূঁইয়া ক্যাসিনো থেকে দিনে ৭০ হাজার করে মাসে ২১ লাখ টাকা নিতেন। মোহামেডান ক্লাবের ওই ক্যাসিনো চালাতেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর এ কে এম মমিনুল হক ওরফে সাইদ। ক্লাবটিতে ক্যাসিনো ব্যবসার ভাড়া বাবদ তিনি ওই টাকা নিতেন।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে এই তথ্যের সত্যতা মিলেছে। অনুসন্ধানের তথ্য বলছে, ক্যাসিনো ব্যবসা থেকে পাওয়া ৪১ কোটি টাকা অস্ট্রেলিয়ার এএনজেড এবং কমনওয়েলথ ব্যাংকে রাখতেন বলে দুদক জেনেছে।

দুদকের মামলার এজাহারে বলা হয়, লোকমান হোসেন ভূঁইয়া তাঁর আয়কর নথিতে নিজ নামে অর্জিত ৭৩ লাখ ৭০ হাজার ৬৬৪ টাকার অস্থাবর সম্পদ অর্জনের ঘোষণা দেন। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, তিনি তাঁর নিজ নামে এবং তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে যৌথভাবে বিভিন্ন ব্যাংকে ২ কোটি ৯৬ লাখ ২৮ হাজার ৯৮৪ টাকা জমা রেখেছেন। এ অর্থ আয়ের কোনো বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি। সব মিলিয়ে তাঁর অবৈধ সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪ কোটি ৩৪ লাখ ১৯ হাজার ৬৪৮ টাকা।

ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের শুরুর দিকে গত ২৫ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে লোকমানকে রাজধানীর মণিপুরিপাড়ার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাঁর বাসা থেকে চার বোতল বিদেশি মদ উদ্ধার করে র‌্যাব। এ ঘটনায় পুলিশের পরিদর্শক জাহিদুর রহমান বাদী হয়ে তেজগাঁও থানায় মামলা করেন। এরপর কয়েক দফা লোকমানকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।

লোকমান বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সদস্য হওয়ায় তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।