হবিগঞ্জে কান্নার রোল

চট্টগ্রামের গার্মেন্টস কর্মকর্তা সোহেল মিয়া। টানা তিন দিন ছুটি পাওয়ায় স্ত্রী–সন্তানকে নিয়ে হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে নিজের বাড়িতে এসেছিলেন। ছুটি কাটিয়ে পরিবার নিয়ে ট্রেনে করে ফিরছিলেন কর্মস্থল চট্টগ্রামে। পথিমধ্যে ট্রেন দুর্ঘটনায় পড়ে জ্ঞান হারান তিনি। জ্ঞান ফিরলে দেখেন আহত হয়ে পড়ে আছেন স্ত্রী নাজমা বেগম (২৫)। কিন্তু তাঁদের দুই বছর বয়সী মেয়ে আদিবা আক্তার প্রাণ হারান ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায়।

গত সোমবার দিবাগত রাত তিনটায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় দুটি ট্রেনের সংঘর্ষে নিহত ১৬ জনের মধ্যে ৭ জনের বাড়ি হবিগঞ্জে। জেলার বিভিন্ন উপজেলার এই বাসিন্দাদের কেউ বের হয়েছিলেন বন্ধুদের সঙ্গে বেড়াতে, কেউ চাকরির সাক্ষাৎকার দিতে, কেউ আবার ফিরছিলেন কর্মস্থলে। কিন্তু মাঝপথে থেমে গেছে তাঁদের জীবনপ্রদীপ। তাঁদের পরিবারে এখন বইছে কান্নার রোল।

নিহত সাতজন হলেন বানিয়াচং উপজেলার বড়বাজার এলাকার সোহেল মিয়ার দুই বছর বয়সী মেয়ে আদিবা আক্তার ও একই উপজেলা মদনপুর গ্রামের নির্মাণশ্রমিক আল-আমিন (৩০), চুনারুঘাট উপজেলার ইবাহাটা গ্রামের কলেজছাত্র রুবেল মিয়া তালুকদার (২৫) এবং একই উপজেলার পীরেরগাঁও গ্রামের সুজন মিয়া (২৭) ও ছয়শ্রী গ্রামের গৃহবধূ পিয়ারা বেগম (৫৫), হবিগঞ্জ সদর উপজেলার আনোয়ারপুর গ্রামের আলী মো. ইউসুফ (৩২) ও বহুলা গ্রামের মাদ্রাসাছাত্র ইয়াসিন আরাফাত (১২)।

সোহেল মিয়া জানান, তাঁদের ট্রেনটি ব্রাক্ষণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মন্দবাগ এলাকায় পৌঁছালে ঢাকা অভিমুখী তূর্ণা নিশীথার সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এ সময় বিকট শব্দ শুনতে পান। এরপর কিছুই বলতে পারেন না। জ্ঞান ফেরার পর দেখতে পান তাঁর মেয়ে আদিবা আক্তার ও তাঁদের প্রতিবেশী আল আমিন মিয়া মারা গেছেন। আহত হন তাঁর স্ত্রী নাজমা বেগম (২৫), ছেলে নাফিস আহমেদ (৬) ও শ্বাশুড়ি রেনু বেগম (৪৫)। পরে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের সদস্যরা সহায়তায় এগিয়ে আসেন।

আদিবা আক্তার, ইয়াসিন আরাফাত, পিয়ারা বেগম, আলী মো. ইউসুফ, সুজন মিয়া, রুবেল মিয়া তালুকদার
আদিবা আক্তার, ইয়াসিন আরাফাত, পিয়ারা বেগম, আলী মো. ইউসুফ, সুজন মিয়া, রুবেল মিয়া তালুকদার

নিহত চুনারুঘাটের রুবেল মিয়ার বন্ধু খায়রুল জানান, তাঁরা চার বন্ধু বেড়ানোর উদ্দেশ্যে কক্সবাজারে যাচ্ছিলেন। অন্য তিন বন্ধু আহত হলেও তাঁদের বন্ধু রুবেল এ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান।

নিহত সুজন মিয়ার চাচাতো ভাই বাচ্চু মিয়া জানান, সুজন হবিগঞ্জ বৃন্দাবন সরকারি কলেজে পড়াশোনা করতেন। তিনি একটি চাকরির সাক্ষাৎকার দিতে চট্টগ্রামে যাওয়ার পথে এ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান।

নিহত আল আমিনের চাচাতো ভাই ফুল মিয়া জানান, আল আমিন একজন নির্মাণশ্রমিক। তিনি চট্রগ্রামে কাজ করতেন। বাড়ি থেকে কর্মক্ষেত্রে ফিরছিলেন। হবিগঞ্জসদর উপজেলার নিহত আলী মো. ইউসুফের বাবা হাসান মিয়া জানান, তাঁর ছেলে একটি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। পারিবারিক কাজে সে চট্টগ্রামে যেতে গিয়ে এ দুর্ঘটনার শিকার হন। মাদ্রাসার ছাত্র ইয়াসিন আরাফাত বাবা ইসমাইল মিয়া জানান, তাঁর ছেলে মাদ্রাসার একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে এ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন।

হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা প্রথম আলোকে জানান, এ দুর্ঘটনায় হবিগঞ্জের সাতজন প্রাণ হারান। পুলিশ নিহত ব্যক্তির লাশ পরিবারের কাছে পৌঁছে দিতে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং কাজ করছে। পাশাপাশি প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে সরকারের পক্ষ থেকে নিহত ব্যক্তির পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।